স্বাস্থ্য

কর্মস্থলে এক ভয়াবহ মানসিক চাপের নাম ‘বার্নআউট’

ক্যারিয়ারের দৌড়ে এগিয়ে থাকতে চায় সবাই। কে কার চাইতে এগিয়ে থাকবে, সেই প্রতিযোগিতাটা যেন এখন আরও একটু বেশিই। আর এই প্রতিযোগিতায় সামনে থাকতে গিয়ে অনেকেই ‘বার্নআউট’- এর মুখোমুখি হন। এমন বার্নআউট হলে সেটাকে কীভাবে মানিয়ে নেবেন এবং সুস্থ থাকবেন? চলুন, জেনে নেওয়া যাক-

বার্নআউট কী?

চিকিৎসকদের মতে, বার্নআউট হলো কর্মস্থল থেকে মানুষের মধ্যে আসা এমন এক প্রকারের মানসিক চাপ যেটি আকারে ভয়াবহ হলেও সেটার সঠিক প্রতিকারে কখনো চেষ্টা করা হয়নি। বার্নআউটের শিকার একজন ব্যক্তি কর্মস্থলের সাথে নিজেকে কোনোভাবেই সংযুক্ত বলে ভাবতে পারেন না। কোন কাজ করতে তার ভালো লাগে না এবং মানসিক ও শারীরিকভাবে তিনি হতাশ ও ক্লান্ত হয়ে পড়েন।

কর্মস্থলের কারণে হওয়া বার্নআউট শব্দটির সাথে চিকিৎসকদের পরিচয় অনেক দিনের। তবে, ব্যাপারটি যে পেশাগত কারণে হওয়া মানসিক চাপের চাইতেও বেশি প্রভাব ফেলে একজন মানুষের ওপরে, সেটা সম্প্রতি জানা গিয়েছে। কিছুদিন আগেই মোট ৭ হাজার ৫০০ জন মানুষের ওপরে পরীক্ষা করা হলে দেখা যায় যে, তাদের মধ্যে শতকরা ২৩ শতাংশ মানুষ বার্নআউটের শিকার হয়েছে পেশাগত জীবনের কারণে। আর বাকি ৪৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী আংশিকভাবে এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন।

বার্নআউট এবং মানসিক চাপ কী আলাদা?

মানসিক চাপ সবসময় যে শুধু নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসে তা নয়। এটি আমাদের কার্যক্রমকে দ্রুত করে তুলতে সাহায্য করতে পারে। অনেক সময় আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে মানসিক চাপ। অন্যদিকে, এই মানসিক চাপ যখন অনেক লম্বা একটা সময় ধরে চলতে থাকে এবং আমরা কোনোভাবেই এর হাত থেকে দূরে যেতে পারি না, সেটা উদ্বিগ্নতায় পরিণত হয়।

এটি আমাদেরকে শারীরিকভাবেও প্রভাবিত করে। এতে করে একটা সময় বার্নআউট তৈরি হয়। যেটা আমাদের জন্য, শারীরিক ও মানসিক- কোনোভাবেই ইতিবাচক নয়।

বার্নআউট কেন হয়?

কর্মস্থলে প্রচুর পরিমাণে মানসিক চাপ তৈরি হলে এবং সেটা সবসময় চলতে থাকলে একজন ব্যক্তি বার্নআউটের শিকার হতে পারেন। কর্মস্থলে নানা কারণে বার্নআউট হতে পারে। শুধু যে অনেক বেশি কাজ করার ফলে এমন হয়ে থাকে তা নয়।

এছাড়াও, সহকর্মীরা সহযোগিতাপূর্ণ না হলে কিংবা অর্থনৈতিকভাবে সবসময় একজন মানুষ চিন্তিত থাকলে সেটা বার্নআউট তৈরি করতে পারে। এছাড়াও, অনেক সময় আগে থেকেই কোনো একজন মানুষ বার্নআউটের মধ্য দিয়ে গিয়ে কোনো কাজ করে দেখালে সেটাকে আদর্শ মেনে সেই পরিমাণ কাজ করতে চাইলেও একজন ব্যক্তির বার্নআউট হতে পারে।

এ সময় একজন মানুষ একাকিত্ব, মানসিক চাপ, রাগ, কাজের সম্পর্কে সবসময় চলতে থাকা উদ্বিগ্নতা ইত্যাদি বোধ করেন। তবে কাজ সম্পর্কে সবসময় ভাবলেও আদতে কোনো কাজ করতে পারেন না তারা।

বার্নআউটকে হারাবেন কীভাবে?

নিচে থাকল বার্নআউটকে হারানোর ছোট্ট কিছু কৌশল-

নিজেকে সময় দিন-

কোন কাজটি আপনি অনেক আনন্দ নিয়ে করেন? নিজেকে সময় দিন এবং সেই আনন্দময় কাজটি করুন। কর্মস্থল থেকে নিজেকে কিছু সময়ের জন্য হলেও একেবারে সরিয়ে নিন। এতে করে আপনার বার্নআউটের চাপ এবং সময়টি কেটে যাবে।

‘না’ বলতে শিখুন-

অনেকেই ‘না’ বলতে না পারার কারণে অতিরিক্ত কাজের চাপ গ্রহণ করেন। কিন্তু কাজ আপনার একার নয়, কর্মস্থলে আপনার দলের সবার। তাই কাজ ভাগ করে দিন, যাতে করে আপনার ওপরে অনেক কাজের চাপ না পড়ে।

বার্নআউট খুব ছোট্ট কোনো সমস্যা, এমনটা ভেবে অনেকেই এটি দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন না। তবে আপনি যদি বার্নআউটের শিকার হন তাহলে নিজেকে বিশ্রাম দিন। এ ব্যাপারে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন এবং সহকর্মীদের সাহায্য নিন। অন্যথায়, মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন আপনি। সুস্থ থাকতে সচেতন হোন, কর্মস্থলেও ভালো থাকুন সবসময়।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button