সারাদেশ

নওগাঁর মহাদেবপুরে স্কুল সংস্কার প্রকল্পের অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার নামে নানা অনিয়ম ও বরাদ্দের অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টদের যোগসাজোশে নামেমাত্র কাজ করে বরাদ্দের সিংহভাগ অর্থ হজম করা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের বরাদ্দের অর্থ লুটপাটের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদ্যালয় মেরামত-সংস্কারের জন্য চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৮ লাখ টাকা এবং রাজস্ব বাজেটের আওতায় ১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়াও রুটিন মেরামতের জন্য ৪৪টি বিদ্যালয়ে ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

জানা যায়, বিদ্যালয়ে যেন-তেনভাবে ক্ষুদ্র মেরামত ও রং করে বরাদ্দের টাকা হালাল করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। উপজেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নামেমাত্র কাজ করলেও কয়েকটি বিদ্যালয়ে তেমন কোনো কাজ হয়নি। বিভিন্ন দোকানের ফাঁকা ভাউচার নিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো বিল ভাউচার তৈরি করে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভ্যাট দিয়ে বরাদ্দের অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের প্রকল্প মনিটরিং বা পর্যবেক্ষণ করার কথা থাকলেও তা ঠিকমতো করা হয়নি। উপজেলা এলজিইডি অফিসের প্রকৌশলীরা বিদ্যালয়ে গিয়ে পরিদর্শন শেষে কাজের ওপর প্রতিবেদন দেয়ার পর সহকারি শিক্ষা অফিসাররা বিদ্যালয়ে গিয়ে কাজের অগ্রগতি ও গুণগত মান যাচাই করে বিল ছাড় করবেন বলে নিয়ম রয়েছে।
কিন্তু এসবের কোনো তোয়াক্কা না করে শুধু বিল ভাউচারই জমা দেয়া হয়েছে মাত্র। যা খতিয়ে দেখার কেউ নেই। উত্তরগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টেবিল ক্রয়, কোনরকম সংস্কার ও নি¤œমানের রং করে তিনটি দরজা ক্রয় এবং লাগানোর ভুয়া ভাউচার জমাদিয়ে মেরামতের নামে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। বাজিতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজে হয়েছে নানা অনিয়ম। পুরনো কাজের উপরে হালকা রং করা হয়েছে। এস্টিমেটে শ্রেণীকক্ষের ভিতরে প্লাস্টিক পেইন্ট এর রং থাকলেও বাস্তবে করা হয়েছে নি¤œমানের রং। চকরাজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নামেমাত্র সংস্কার, বিদ্যালয়ের সম্মুখভাগে গ্রিল লাগিয়ে রং করা এবং দেয়ালে নি¤œমানের রং করে বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
উত্তরগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল খালেক বলেন, বরাদ্দের অর্থ দিয়ে সব কাজই সঠিকভাবে করা হয়েছে। তবে তিনটি দরজা না লাগিয়ে কেন ভাউচার জমাদিয়ে বরাদ্দের অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে তার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
চকরাজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রওশন আরা বলেন, বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের জন্য শিক্ষা অফিসে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। সভাপতি যেভাবে বলেছে আমি সেভাবে কাজ করে ভাউচার দিয়ে বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করেছি।

মহাদেবপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাযহারুল ইসলাম বলেন, বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের জন্য শিক্ষা অফিসে কোনো টাকা দিতে হয় না। উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এবং সংশ্লিষ্ট সহকারি শিক্ষা অফিসার কাজের ব্যাপারে প্রত্যয়ন দিলে আমরা বিল দিয়ে দেই।
মহাদেবপুর উপজেলা প্রকৌশলী সুমন মাহমুদ বলেন, আমরা শুধু কারিগরি বিষয়গুলো দেখি। কাজটি শিক্ষা অফিস, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিরা (এসএমসি) বাস্তবায়ন করেন। তারাই বিল ভাউচার দেয়। এখানে যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে বিল ও ভাউচরা যারা দিয়েছেন তারা দেখবেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button