বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ই-কোর্টের সুফল

উচ্চ ও নিম্ন আদালত মিলিয়ে বাংলাদেশ জুড়ে এখনও ৩৫ লাখ ৮২ হাজারেরও বেশি মামলা বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে বলে সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। বিচারের অপেক্ষায় থাকা এই বিশাল সংখ্যক মামলা দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তির জন্য বিচারক সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার।

সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিচারিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ডিজিটাল পদ্ধতি অবলম্বনের পরামর্শ দেন। এরমধ্যে আছে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও বিচার প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় করা এবং ই-কোর্ট তথা ভার্চুয়াল আদালত স্থাপন করা যাতে সহজেই বিচারিক কাজ সম্পন্ন করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তির সাহায্যে আরও নিরাপদ একটি ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছেন যেন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অভিযুক্তদের ঘন ঘন কারাগার থেকে আদালতে আনা-নেওয়া করতে না হয়।

আইনি সেবার উন্নয়ন ঘটাতে বিচারিক প্রক্রিয়ায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার নতুন কিছু নয়। আমাদের পাশের দেশ ভারতেই এটি হচ্ছে। দেশটি ডিজিটাল বিচারিক পদ্ধতি গ্রহণ করেছে এবং এতে যে কয়েকটি ধাপের কারণে বিচারকাজে বিলম্ব হতো তা কমে এসেছে।

এই কয়েকটি ধাপের মধ্যে আছে মামলার শুনানি। এক্ষেত্রে প্রতিবার শুনানির সময় আসামীকে এক শহর কিংবা রাজ্য থেকে অন্য শহর বা রাজ্যে নিয়ে যেতে হয়। এটা অনেক সময় নষ্ট করে এবং ব্যয়বহুলও। এছাড়া দাগী আসামীদের জেল থেকে আদালতে আনা-নেওয়ার ঝুঁকি তো আছেই। এসব কারণে দেরি হয় এবং শেষ পর্যন্ত বিচারের অপেক্ষায় থাকা মামলার সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।

মহারাষ্ট্রের জুডিসিয়াল একাডেমির এক গবেষণা বলছে, সংশ্লিষ্ট আদালতে অভিযুক্তকে হাজির করতে না পারার কারণেই মূলত মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হয়। অভিযুক্তকে পাহারা দিয়ে নিয়ে আসার মতো পুলিশি জনবল ও পরিবহনের ঘাটতি রয়েছে।

প্রক্রিয়াটি গতিময় করতে দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশনায় ছয়টি জেলা আদালত এবং জেলে ভিডিও কনফারেন্স সুবিধা যুক্ত করা হয়। দ্রুত বিচারের জন্য বর্তমানে মহারাষ্ট্রের ২১৭টি আদালত এবং ৩৮টি কারাগারে এই সুবিধা স্থাপন করা হয়েছে।

দিল্লি-মহারাষ্ট্র ছাড়াও মেঘালয়, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, তেলেঙ্গানা এবং পশ্চিমবঙ্গে বিচার ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করা হয়েছে। উচ্চ আদালত, জেলা আদালত ও কারাগারগুলোতে সম্পূর্ণ নতুন এই ডিজিটাল সিস্টেম যথাযথভাবে চালু রাখতে লজিটেক ব্র্যান্ডের বিসিসি-৯৫০ এবং লজিটেক পি-৭১০-ই ব্যবহার করা হচ্ছে। মূলত বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সর্বোচ্চ মান পাওয়ার জন্যই ব্যবহার হচ্ছে এগুলো।

বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সরাসরি স্টেটমেন্ট রেকর্ড করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ দরকারি প্রমাণ দ্রুত আপলোড করতে প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে কার্যকর উপায়ে ভিডিও সংরক্ষণ করা যায়।

বিচারিক কার্যক্রমের সঙ্গে প্রযুক্তি সংযুক্ত করার অনেক ইতিবাচক দিক আছে। এটা তদন্তকারী, পুলিশ, জেল বিভাগ এবং বিচারকদের কাজের চাপ কমিয়ে দেয়। প্রযুক্তির কারণে সাক্ষীরা তাদের নিজেদের জায়গা থেকেই কোনও ধরনের নিরাপত্তা শঙ্কা এবং উদ্বেগ ছাড়াই স্বল্প খরচের মধ্যে নিজেদের কাজটুকু করে ফেলতে পারে।

স্থানীয় আদালত এবং কারাগারের মধ্যে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ শুধু সময় এবং খরচই বাচায় না বরং উঁচু পর্যায়ের কাউকে ভ্রমণ করানোর ক্ষেত্রে যেসব ঝুঁকি থাকে সেগুলোও কমিয়ে আনে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button