জাতীয়

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে কেন পিছিয়ে বাংলাদেশ

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে তেল-গ্যাস-কয়লার বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে বিশ্ব। ইতোমধ্যে অনেক উন্নত দেশ ব্যবহৃত জ্বালানির ৩০ শতাংশ পর্যন্ত নবায়নযোগ্য উৎস থেকে জোগান দিচ্ছে। সে তুলনায় বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ¦ালানির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, অর্জন করা গেছে তার এক-তৃতীয়াংশেরও কম। ফলে আর্থিক ক্ষতি যেমন হচ্ছে, বাড়ছে পরনির্ভরশীলতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের নীতি-পরিকল্পনায় বদল আনতে হবে।
২০২১ সালে বাংলাদেশ নাবায়নযোগ্য জ¦ালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থাকলেও উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৩.২৫ শতাংশ। বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি-গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন সময়ের আলোকে বলেন, সারাবিশ^ এখন কার্বন নিঃসরণের ব্যাপারে সোচ্চার। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্লাইমেক্স ভালনারেবেল ফোরামের চেয়ারম্যান। আমাদের জাতি হিসেবে একটা দায়িত্ব রয়েছে কার্বন নিঃসরণ কমানোর। নবায়নযোগ্য জ¦ালানির ক্ষেত্রে খরচ আগে অনেক থাকলেও এখন অনেক কমে আসছে। সেজন্যই আমরা কয়লা থেকে সরে আসছি। তবে ২০২১ নবায়নযোগ্য জ¦ালানির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও তা অর্জন সম্ভব নয়।
নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক বলেন, প্রতিবন্ধকতা হলো আমাদের পর্যাপ্ত জমি নেই, সোলার ছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের তেমন কোনো উপায় নেই। তবে তিনি জানিয়েছেন, এখন ৩ পার্সেন্ট নবায়নযোগ্য জ¦ালানি উৎপাদন করলেও ২০৫০ সাল নাগাদ ৫০ পারসেন্ট উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির তথ্য মতে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগের অনেক প্রস্তাব থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তাদের হিসাবে ৩৬টি প্রকল্পের মধ্যে আটটি বাস্তবায়ন হয়েছে। এ বিষয়ে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) চেয়ারম্যান, অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন সময়ের আলোকে বলেন, করোনার কারণে বিশ^ব্যাপী সব কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে পড়েছে। আমরা বেশ কিছু পাইলট প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। আমাদেরকে বড় বড় প্রজেক্ট নিতে হবে।
বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) সভাপতি ইমরান করিম সময়ে আলোকে বলেন, নবায়নযোগ্য জ¦ালানির বিষয়ে প্রথমত আমাদেরকে খরচের দিকে নজর দিতে হবে। সৌরবিদ্যুৎ করার জন্য অনেক জায়গা লাগে। আমাদেরকে নেপাল থেকে পানিবিদ্যুৎ আমদানির জন্য এখনই পরিকল্পনা নিতে হবে। এ ছাড়া এমন অনেক প্রযুক্তি আসছে যেগুলো এখন একটু কস্টলি হলেও ভবিষ্যতে তা থাকবে না। সেদিকে সরকারের নজর দিতে হবে।
এক হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যবহৃত মোট জ্বালানির ৯০ শতাংশ আমদানি করে ব্যবহার করতে হবে। তবে নবায়নযোগ্য জ¦ালানিতে সক্ষমতা বাড়ালে সবদিক থেকে লাভবান হবে বাংলাদেশ।
জ্বালানি  বিশেষজ্ঞ ও কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক সামসুল আলম সময়ের আলোকে বলেন, ‘আমাদের নবায়নযোগ্য জ¦ালানির বাজার তৈরি হয়নি। এই সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি নিম্নমানের। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে কোনো বিনিয়োগও নেই, কোনো পরিকল্পনাও নেই। বিশে^ও অন্যান্য দেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে এগিয়ে গেছে কারণ তাদের নীতি-পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের দেশের মতো দুর্নীতি নেই।’
‘আমরা গ্রিড বিদ্যুৎ উৎপাদনে আছি। ফলে ফসিল ফুয়েল আমদানির বাজার প্রমোট করছি, আনইকোনোমিক ওয়েতে গ্রিড সম্প্রসারণ করছি। এ ছাড়া আমরা এখন বিদ্যুতে শতভাগ সাবসিডি দিচ্ছি আবারজ্বা লানিতেও দিচ্ছি। এটাই হচ্ছে পলিসি।’ অধ্যাপক সামসুল আলম মনে করেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যাওয়ার জন্য সরকারের পলিসি বদলানোর কোনো বিকল্প নেই।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button