রাজশাহী বিভাগসারাদেশ

বগুড়ার শেরপুরে স্বাস্থ্যবিভাগে তেলেসমাতি কারবার

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার শেরপুরে প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়া এবং গ্রাম্য শালিসী বৈঠকের মাধ্যমে আপোষ-রফা করার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় কমিউনিটি ক্লিনিকের এক সিএইচসিপি কর্মকর্তা (কমিউনিটি হেলথকেয়ার সার্ভিস প্রোভাইডার) টানা সতের ১৭দিন জেলহাজতে ছিলেন। এভাবে মাসের অর্ধেকটা সময় জেল হাজতে থাকলেও তাকে সাময়িক বরখাস্ত না করে পুরো সময়ের বেতনভাতা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। স্বাস্থ্যবিভাগের এই তেলেসমাতি কারবার প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট দফতরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। পাশাপাশি জনমনেও নানা প্রশ্ন উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের খানপুর দহপাড়া এলকায় এক প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। কিন্তু ওই গ্রামের প্রভাবশালী মাতব্বরগণ ধর্ষককে বাঁচাতে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মাঠে নামেন এবং মরিয়া হয়ে উঠেন। এরই ধারাবাহিকতায় ভুক্তভোগীর পরিবারকে আপোষ-রফার কথা বলে আইনের আশ্রয় নিতে বাধা দেন। এমনকি ঘটনাটি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করতে তাদের নানা ভয়ভীতিও দেখানো হয়। পরবর্তীতে ঘটনাটি আপোষ-মিমাংসার নামে গ্রাম্য শালিসী বৈঠক ডেকে ধর্ষিতার নামে সামান্য কিছু জায়গা (১৫শতক) লিখে দেয়ে ধামাচাপা দেয়া হয়। আর এসব কর্মকা-ের নেতৃত্ব দেন একই গ্রামের বাসিন্দা এবং খানপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান প্লাবণ (৩৫)। একপর্যায়ে স্থানীয় এলাকায় ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায়। সেইসঙ্গে থানা পুলিশও বিষয়টি জানতে পারেন। এছাড়া ধর্ষণের শিকার ওই প্রতিবন্ধী শিশুটির পরিবার আইনের আশ্রয় নেন। পরে পুলিশ ধর্ষক ও ঘটনায় জড়িতদের ধরতে অভিযান চালায়। আর সেই মামলায় গত ০৬আগস্ট গ্রেফতার হন সিএইচসিপি মনিরুজ্জামান প্লাবণ। শিশু ধর্ষণ ঘটনা ধাপাচাপা দেয়া এবং আপোষ-রফা করার অভিযোগে পরদিন ০৭আগস্ট জেলহাজতে পাঠানো হয় তাকে। এরপর থেকে দীর্ঘ সতের (১৭দিন) জেলহাজতে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে আসেন তিনি। এক্ষেত্রে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নিকট থেকে চাকরির প্রত্যয়ণপত্র নিয়েও আদালতে জমা দেয়া হয়। এদিকে মাসের অর্ধেকটা সময় জেলহাজতে থাকলেও ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ০২তারিখেই তাকে জেলা থাকাসহ পুরো আগস্ট মাসের সরকারি বেতনভাতা দেয়া হয় বলে জানা গেছে। অথচ সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী, কোন কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে গেলে তিনি সাময়িকভাবে বরখাস্ত হবেন। আর মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকারি সুযোগ-সুবিধাসহ বেতন অর্ধেক পাবেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এসব নিয়মের কোন কিছুই মানা হয়নি। বরং তার নিকট থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে কাগজ-কলমের মারপ্যাচে ঘটনার আগে থেকে দশদিন ছুটি দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযুক্ত অভিযুক্ত কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মনিরুজ্জামান প্লাবণ জানান, আমি গত ৫আগষ্ট সিলেট যাওয়ার জন্য দশদিনের ছুটি চেয়েছিলাম। সেটাই কাজে লেগেছে। এখন জামিনে আছি। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাই নিয়মিতভাবেই দাফতরিক সব কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল কাদের জানান, ওই সিএইচসিপি কর্মকর্তা গ্রেফতারের বিষয়টি অফিসিয়ালিভাবে জানি না। লিখিতভাবে কেউ জানায়নি। তাই সে জেলে ছিল না কি কোথায় ছিল তা আমার জানা নেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, আমার অধিনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী যে কেউ প্রত্যয়ণপত্র নিতেই পারেন। আর সেটি দেয়া আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। স্বাস্থ্য বিভাগের বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজার রহমান তুহিন এ প্রসঙ্গে বলেন, নিয়মানুযায়ী ওই সিএইচসিপি কর্মকর্তার সাময়িক বহিস্কার হওয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে কেন তা করা হয়নি তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান স্বাস্থ্যবিভাগের এই কর্মকর্তা।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button