জাতীয়

আম্পান: শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথেও ফেরি চলাচল বন্ধ

করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ সংকটের সময়ে ঈদ উপলক্ষে ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলো থেকে দক্ষিণবঙ্গমুখী জনস্রোত থামাতে অবশেষে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

সোমবার বিকালে ৩টা থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। এখন এমনকি পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার করাও হচ্ছে না।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনের সাথে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কথা বলে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী বিকাল ৩টা থেকে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যানের নির্দেশে এ নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আপাতত কোনো প্রকার ফেরিই চলাচল করবে না। শুধু মাত্র মৃতদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে পারাপার করা যেতে পারে।’

তিনি জানান, ঘরমুখো মানুষজনের ঢল গত কয়েক দিন ধরে এ নৌপথে জনসমুদ্রে পরিণত হচ্ছিল। যা করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে।

এ নৌপথে গত ২৬ মার্চ থেকে লঞ্চ ও সিবোটসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে রবিবার ফেরি সংখ্যা সীমিত করা হয়। চারটি বড় ফেরি দিয়ে সচর রাখা হয় পারাপার সেবা। কিন্তু যাত্রীদের ঢল আর ছোট ছোট গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘাট এলাকায় প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট ও যাত্রীদের চাপে রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরকে আনলোড করাতে না পারায় ৩ নম্বর ঘাট দিয়ে কোনো যানবাহনও লোড করা যাচ্ছিল না। ফলে ঘাটের অবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করে। জনসমুদ্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। যাত্রীরা মহাসড়ক ছেড়ে গ্রামের রাস্তা দিয়ে এক-দুই কিলোমিটার হেঁটে বিকল্পভাবে ঘাটে আসেন। এতে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে শিমুলিয়া ঘাটে গিয়েও এমন দৃশ্য দেখা যায়।

রবিবার সরজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বেশ কয়েকটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট থাকায় যাত্রীদের সেখানে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। অনেক গাড়িকে আবার সেখান থেকে উল্টোপথে ফিরিয়েও দেয়া হয়। তারপরও করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে যাত্রীরা ছোট যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে গ্রামের ভেতর দিয়ে শিমুলিয়া ঘাটের এক-দুই কিলোমিটারের ভেতরে চলে আসেন। এরপর সেখান থেকে হেঁটে ঘাটে পৌঁছান। এ সময় শিশু, বৃদ্ধ ও কোলে সন্তান থাকা নারী এবং মাথায় ব্যাগ নিয়ে ঘাটে যেতে অনেককে চরম দুর্ভোগ পোহাতে দেখা যায়। ঘাটে এসেও সেই একই অবস্থা। ফেরি সংকটে শত শত যাত্রী পল্টুনের কাছে অপেক্ষা করেন। এ সময় মানা হয়নি কোনো সামাজিক দূরত্ব। বরং গাদাগাদি করে লাইন ভেঙে জটলা পাকিয়ে ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় যাত্রীদের। জনসমুদ্র সৃষ্টি হয় শিমুলিয়া ঘাটে। দেশে যে করোনা মহামারি চলছে তা যাত্রীদের দেখলে মনেই হচ্ছিল না। তাদের শুধু অপেক্ষা ছিল কতক্ষণে ফেরিতে উঠবেন।

মাওয়া নৌ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের (আইসি) পরিদর্শক সিরাজুল কবির বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে এ নৌপথে ফেরি সংখ্যা কমিয়ে দেয়া হয়। মাত্র চারটি ফেরি দিয়ে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে সীমিত আকারে ফেরি চলাচল সচল রাখা হয়েছিল। কিন্তু ঈদে ঘরমুখো যাত্রীর চাপ থাকায় ফেরির অভাবে ঘাটে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লেগে যায়। যাত্রীরা করোনার কথা ভুলে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব না মেনে গাদাগাদি করে অপেক্ষা করতে থাকেন ফেরি জন্য। তাই আজ বিকাল ৩টা হতে কর্তৃপক্ষ ফেরি সেবা বন্ধ করে দেয়।’

এর আগে, একই কারণে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার মধ্যকার নৌপথে সব ধরনের ফেরি চলাচল আজ দুপুর ১২টা থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button