সারাদেশ

আরডিসি নাজিম উদ্দিনের হাতে ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণণা দিলেন বিশ্বনাথ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে ২১ দিন পর জেল থেকে বেরিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রত্যাহার হওয়া আরডিসি নাজিম উদ্দিনের হাতে ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণণা দিলেন নির্যাতিত দরিদ্র মৎস্যজীবি বিশ্বনাথ। মঙ্গলবার জেল থেকে বের হয়ে অসুস্থ অবস্থায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ভর্তি হয়ে সাংবাদিকদের পুরো ঘটনার বিররণ তুলে ধরেন।

এসময় বিশ্বনাথ সাংবাদিকদের বলেন, আজ (মঙ্গলবার সকাল ৬টা সাড়ে ৬টার সময় আমাকে জেল থেকে বের করে ওনার গেস্ট হাউসের দোতালার বাসায় নিয়ে যায়। তার বাসায় আমাকে নিয়ে যায়া বলল যে তোমার নামে তো ক্রসফায়ারে অর্ডার হয়া গেছে। তুমি তো ক্রসফায়ারে যাবা, র‌্যাবে তোমাকে খুঁজতেছে। তোমার বাঁচার একটা পথ আছে সেটা হলো আমি যেভাবে বলতেছি এই ভাবেই আমি যখন রেকর্ড চালু করবো তখন তুমি এই ভাবেই বলবা। তখন তো আমি ভয় খায়া গেলাম। ওনার কথাগুলো যেভাবে শিখে দিল যে, তুমি এই জেল থেকে বের হয়া যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে বলবা স্যার আমাকে মারে নাই। নাজিম উদ্দিন স্যার আমাকে মারে নাই। আমাকে সাংবাদিক শিখায় দিছে। আর তুমি এখান থেকে রংপুর চলে যাও, ঐ পার্শ্বে চলে যাও। সেখানে মোবাইল টোবাইল বন্ধ করে ৬ মাস থাকবা। বাড়িতে কাউকে ফোন দিবা না, ঐ পার্শ্বে চলে যাও। তোমার কি লাগে আমার এই নাম্বারে ফোন দিবা আমি তোমার চলার ব্যবস্থা করে দিবো। এই কথা কয়া আমাকে খলিলগঞ্জের দিকে নামায় দিয়া চলে আসলো।

কি কারনে তার উপর এ নির্যাতন জানতে চাইলে বিশ্বনাথ বলেন, আমরা মৎস্যজীবি হিসেবে নাগেশ্বরী উপজেলার দেবীকুড়া বিলটি মানুষের সমিতির নামে লিজ নিয়ে মাস চাষ করে খাচ্ছিলাম। পরে আমার সমিতি পাশ করার পরে ৬ মাস লিজের সময় থাকাকালীন সময়ে আমি উন্নয়ন প্রকল্পে ৬ বছর লিজের জন্য আদালতে আবেদন করলাম। তখন বিলটিতে আমার প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ থাকা অবস্থায় ওরা বিলটিকে উন্মুক্ত দেখাল। এরপর আমরা প্রায় প্রতিদিনে স্যারের কাছে আসি। স্যার একথা বলে ওকথা বলে কিন্তু কোনভাবে রাজি হয় না।

এসময় বিশ্বনাথ আবেগ জড়িত কন্ঠে বলেন, সর্বশেষ দেখা করে যাওয়ার দুই দিন পর রাত দুইটার সময় নাজিম উদ্দিন স্যার আমার বাসায় যায়া আমাকে বিছানা থেকে তুলে বাইরে নিয়া আসে। এরপর আমাকে ইচ্ছামত আমাকে মারপিট করে। মারপিট করার পরে ওনি কুড়িগ্রামে নিয়া আসে। ওনার চেম্বারে নিয়া আসার পর আমার হাতপা বাঁধে। বাঁধার পর উনি আবারও আমার মাথায় টাথায় বাড়ি দেয়। বারি দেয় আর বলে যে তুমি মামলা উঠাও না কেন। তোর কোন বাপ আছে বাঁচাবে। আমি ৫ দিন পর পর তোমাকে রিমান্ডে নিবো। আমি হাজতে আসবো আর তোমাকে মারবো, সবাই হাসবে। মারের পর আমি অজ্ঞান হলাম। তারপর কখন নিয়ে যায়া হাজতে থুইছে আমি কবার পাই না।

আরডিসি নাজিম উদ্দিনের হাতে নির্যাতিত বিশ্বনাথের ভাই স্বপন চন্দ্র দাস বলেন, সোমবার রাতে আমরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নিকট আমার ভাইয়ের জামিনের আবেদন করেছিলাম। তিনি আমাদেরকে দুপুরের দিকে এসে ভাই বিশ্বনাথকে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু সকালে জানতে পারি তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সে অসুস্থ এজন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারের কারারক্ষী খালিদ হাসান জানান, বিশ্বনাথকে মামলার দুটি ধারার মধ্যে একটি ধারায় ১ মাস আর অপর একটি ধারায় ১ বছর ১১ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে তার জামিনের কাগজ আসায় তাকে আমরা মুক্তি দেই। কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুজাউদ্দৌলা গতরাতে তার জামিন মঞ্জুর করান।

তবে এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সুজাউদ্দৌলা ও প্রত্যাহার হওয়া আরডিসি নাজিম উদ্দিনের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের আরডিসি কর্তৃক নির্যাতিত বিশ্বনাথের বাড়ি নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের পরম আলী গ্রামের কলেজ মোড় এলাকায়। ঐ ইউনিয়নের একটি জলাশয়ে মৎস্যজীবি হিসেবে সমিতির নামে লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন তিনি। লিজের ৬ মাস সময় থাকার পরও চাষ করা মাছসহ বিলটিকে অবৈধভাবে উন্মুক্ত ঘোষনা করেন আরডিসি নাজিম উদ্দিন। পরে বিশ্বনাথরা বিলটি পেতে আদালতের আশ্রয় নিলে নাজিম উদ্দিন ক্ষিপ্ত হয়ে ভ্রাম্যামান আদালতের মাধ্যমে তাকে অমানুষিক নির্যাতন করে মামলার দুইটি ধারায় দুই বছরের জেল প্রদান করে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button