রংপুর বিভাগসারাদেশ

উত্তরাঞ্চলে মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন ‘চিনি মসজিদ’

নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি: দেশের উত্তরাঞ্চলে মুসলিম স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন নীলফামারীর সৈয়দপুরের চিনি মসজিদ। প্রায় ২০০ বছর আগেকার এ স্থাপত্য স্বসৌন্দর্য্যে কালের স্বাক্ষী হয়ে আজও দাড়িয়ে আছে। প্রাচীন মসজিদটির নিপুন হাতের নির্মাণ শৈলি এক নজর দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটক।
নীলফামারী সদর থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে আর সৈয়দপুর বাস টার্মিনাল থেকে ৪ কি:মি উত্তর পশ্চিমে এবং রেলওয়ে স্টেশন থেকে মাত্র দেড় কি কি:মি উত্তরে সৈয়দপুর- নীলফামারী শেরে বাংলা সড়কের পাশে ইসলাম বাগ নামক স্থানে এ মসজিদটির অবস্থান। ১৮৬৮ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রথমে মসজিদটি দোতালা টিনের ঘর হিসেবে নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে ১৯২০ সালে ইমাম হাজী হাফিজ করিমের উদ্যোগে ১৫৬০ বর্গফুট আয়তনের মসজিদটি প্রথম অংশ পাকা করা হয়। এ অংশের নক্সা করেছিলেন হাজী হাফিজ করিম নিজেই। ১৯৬৫ সালে করা হয় দ্বিতীয় অংশের কাজ। মসজিদের গোটা অবয়ব রঙ্গিন উজ্জল পাথরে আবৃতি। কলকাতা থেকে সে সময় ২৪৩ খানা সংকর মর্মর পাথর এনে লাগান হয়। এছাড়া চিনা মাটির টুকরো দিয়ে মসজিদের গায়ে লাগানোর জন্য সে সময় বগুড়া গ্লাস ফ্যাক্টরী প্রায় ২৫ মে.টন চিনা মাটির পাথর দান করেছিলেন। অত্যন্ত নয়ানাভিরাম এ মসজিদটিতে রয়েছে ৩২টি মিনার এবং ৩টি বড় গম্বুজ। মসজিদের গায়ে লাগানো আছে ২৪৩টি সংকর মর্মর পাথর। চিনা মাটির টুকরো দিয়ে ফুল ও গাছ-পালার নক্সা এবং মসজিদটির দক্ষিণ বারান্দাটি সম্পূর্ণ সাদা সিমেন্টের মোজায়েক করা। এজন্য অনেকেই চিনা মসজিদ বলেও চেনেন। এছাড়া মসজিদে প্রবেশের জন্য উত্তর-দক্ষিণে দুটি ফটক রয়েছে। দো-তালায় রয়েছে একটি কক্ষ। মসজিদের পিছনেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শণ স্বরূপ রয়েছে একটি খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের কবরস্থান। অবশেষে কয়েকশ দক্ষ কারিগর দ্বারা ১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মসজিদটি। পুরাতন মসজিদ ভবনের পাশে নতুন করে আর একটি ভবন নির্মান করা হয়েছে একই শিল্প কৌশলে। মসজিদের সৌন্দর্য্য উপভোগে তাই প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে হাজারও দর্শনার্থী ছুটে আসেন। মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, এ মসজিদ জন্মের পিছনে অনেক ইতিহাস আছে। নতুন করে মসজিদের বেশ কিছু সংস্কার কাজ করা হয়েছে। ওযুখানার কাজ চলমান রয়েছে। মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিটলার চৌধুরী ভলু বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য মসজিদটি সংরক্ষিত রাখতে হবে। নতুন করে করা বাকি কাজগুলো অতিদ্রুত সম্পন্ন করতে পারলে দর্শনার্থীদের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button