চলতি মাসেই দেশে টিকা উৎপাদন
করোনা সংক্রমণ রোধে সবার জন্য ভ্যাকসিন সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার। একাধিক দেশ থেকে টিকা কেনার পাশাপাশি চীনের সিনোফার্ম, সিনোভ্যাক এবং রাশিয়ার স্পুটনিক ভ্যাকসিন দেশেই যৌথভাবে উৎপাদন করা হবে। চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে টিকা উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। চলতি আগস্টের যেকোনো সময়ে আসতে পারে ঘোষণা।
আগামী বছরের মধ্যে কম-বেশি ২৫ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন হাতে পেতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চতুর্মুখী কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সময়ের আলোকে বলেন, ‘সবার জন্য ভ্যাকসিন সুরক্ষা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং এ জন্য ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ বরাদ্দ রেখেছেন। বিশ্বের যেখানেই ভ্যাকসিন ইস্যুতে সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে বা কিনে নেওয়ার সুযোগ আছে, আমরা সেখানেই যোগাযোগ করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নানাভাবে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করছি। বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভেক্স, গ্যাভি থেকে টিকা পাব। এ ছাড়া ভারত-চীন-রাশিয়া থেকে ভ্যাকসিন কেনার জন্য চুক্তি করেছি এবং যারা টিকা উৎপাদন করছে তাদের সঙ্গে যৌথভাবে উৎপাদনেও যাচ্ছি।’
আগস্টের যেকোনো সময়ে যৌথ উৎপাদনের ঘোষণা আসতে পারে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যৌথভাবে ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিস্তারিত কাজ করছে। দেশেই চীনের দুটি ভ্যাকসিন- সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক যৌথভাবে উৎপাদন করা হবে। চীন থেকে বড় বড় বাল্কে দেশে ভ্যাকসিন এনে তা প্রক্রিয়া, লেভেলিংসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষে বাজারজাত করা হবে। এ ছাড়া রাশিয়ার স্পুটনিক ভ্যাকসিন যৌথভাবে দেশে উৎপাদনের জন্য আনুষ্ঠানিক সব প্রক্রিয়াও শেষ পর্যায়ে রয়েছে।’ মন্ত্রী জানান, রাশিয়ায় থার্ড ওয়েভে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় যৌথ উৎপাদনে যেতে সময় বেশি লাগছে। নয়তো এত দিনে উৎপাদন শুরু হয়ে যেত।
ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ২১ কোটি ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২১ কোটি ডোজের মধ্যে চীনের ৩ কোটি, কোভেক্সের ৭ কোটি, রাশিয়ার ১ কোটি, অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি এবং জনসনের ৭ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন রয়েছে।
এদিকে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতার কারণেই মূলত বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন সঙ্কটের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে ভ্যাকসিন হাতে আসার এবং ভবিষ্যতে ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা জানাচ্ছেন। তবে এ বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহলকে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেননি তিনি।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের কাছে জানতে চাইলে সময়ের আলোকে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। আমরা দুজন একসঙ্গে কাজ করছি। আমাদের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। আমরা সবাই মিলেই ভ্যাকসিন সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য পরিশ্রম করছি।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মূলত যেটা করি তা হচ্ছে, বিশ্বের যেখানে ভ্যাকসিন ইস্যুতে সুযোগ আছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেখানেই যোগাযোগের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এরপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভ্যাকসিনের জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে একটা যোগাযোগ তৈরি করে দেয়। তারপর বাকি কাজটা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই করে থাকে।’
ভ্যাকসিন সংগ্রহ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে মডার্নার ৫৫ লাখ ডোজ টিকা বিনামূল্যে পেয়েছি। তারা আরও দেবে বলে জানিয়েছে। এ ছাড়া কেনা ভ্যাকসিনের মধ্যে চীনের সিনোফার্মের ৭০ লাখ ডোজ দেশে এসেছে, আরও আসবে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন- তারা আমাদেরকে স্মুথলি ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে চায়। এর আগে একটি দেশ (ভারত) সময়মতো ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে পারেনি, তেমন পরিস্থিতি যেন না হয়। এ জন্য চীন আমাদের কাছে আগেভাগেই চাহিদা জানতে চেয়েছে। চীন বলেছে, তাদের কাছে ভ্যাকসিনের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক চাহিদা রয়েছে। তাই আমরা আগে জানিয়ে দিলে তাদের সরবরাহ করতে সুবিধা হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ভারতের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলে এবং তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া ঠিক হলে সবার আগে আমরা কেনা ভ্যাকসিনের বাকি চালানগুলো পাব। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হয়েছে। কানাডার কাছেও আমরা ভ্যাকসিন চেয়েছি এবং তারা এই বিষয়ে সহযোগিতা করবে। দেশটি বৈশ্বিক উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদেরকে ভ্যাকসিন দেবে।’
এ বিষয়ে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, ‘কানাডা সরকারের কাছে ৩৯ মিলিয়ন উদ্বৃত্ত ভ্যাকসিন রয়েছে। তাদের কাছে একাধিকবার বাংলাদেশের জন্য ভ্যাকসিন সহায়তা চেয়েছি। আশা করি কানাডা সহযোগিতা করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কানাডার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেছি- বাংলাদেশ লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। অন্তত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও আশ্রয় শিবির এলাকার স্থানীয়দের সুরক্ষা নিশ্চিতে কমপক্ষে ৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন সহায়তা দেওয়া হোক।’