রংপুর বিভাগসারাদেশ

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে বানভাসী মানুষেরা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: গত কয়েকদিন ধরে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ঘর-বাড়ি ও নলকুপ তলিয়ে থাকায় নদ-নদীর অববাহিকার আড়াই শতাধিক চর ও নি¤œাঞ্চলের প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানি ও চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে। তীব্র হচ্ছে গবাদি পশু ও শিশু খাদ্যের সংকটও। এ অবস্থায় সামান্য ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও তা সবার ভাগ্যে জুটছে না। চোখে পড়ছে না কোন বেসরকারী ত্রাণ তৎপরতা।
এদিকে বন্যার পানির তোড়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা শহর রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার ভেঙ্গে নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উলিপুর উপজেলার বেগমগন্জ ইউনিয়নের মশালের চর, বালাডোবার চর, ফকিরের চর, বতুয়াতলির চর, সাহেবের আলগা ইউনিয়নের জাহাজের চর, কাশিয়ার চর, চেরাগির চরসহ অন্যান্য দুর্গম চরাঞ্চলগুলো ঘুরে দেখা গেছে সেখানকার মানুষজনের জীবন-যাপনের একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে নৌকা। ঘরের ভিতর এক গলা পানি থাকলেও পার্র্শ্ববর্তী কোন উঁচু বাঁধ বা শুকনো জায়গা না থাকায় তারা নৌকার মধ্যেই ছাগল, ভেড়া, হাড়ি, পাতিল নিয়ে দিন যাপন করছে। এসব এলাকার নলকুপ তলিয়ে থাকায় তারা বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়েছে। ঘরে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার না থাকায় তারা একবেলা খেয়েই দিন পাড় করছে।
উলিপুরের বেগমগন্জ ইউনিয়নের মশালের চরের কলিমুদ্দিন জানান, গত বন্যার চেয়ে এবারের বন্যায় বন্যা অনেক বেশি হয়েছে। ঘরে এক গলা পানি। চৌকি দঁড়ি দিয়ে ঘরের চালের সাথে ঠেকিয়ে রেখেছি। কাছাকাছি কোন শুকনো জায়গা নেই। ছেলে-মেয়ে, ছাগল ভেড়া নিয়ে নৌকায় অবস্থান করছি। প্রায় ২০ দিন ধরে ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে থাকলে এখন পর্যন্ত কোন খাদ্য সহায়তা পাইনি।
মশালের চরের ইউপি সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, তার ওয়ার্ডের তিন শতাধিক পরিবার দীর্ঘ ২০/২১ দিন ধরে পানিবন্দি থাকলেও তাদের কোন ত্রাণ সহায়তা দেয়া সম্ভব হয়নি। আজ সামান্য কিছু চাল বরাদ্দ পেয়েছি তা হয়তো ৩০ থেকে ৩৫টি পরিবারকে দেয়া সম্ভব হবে। এই মুহুর্তে এই মানুষগুলোর শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি জরুরী হয়ে পড়েছে।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো: হাবিবুর রহমান জানান, বন্যা কবলিতদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। গত ২০ জুন থেকে এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ১১ জনই শিশু।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, সরকারী ভাবে বন্যা দুর্গতদের জন্য ১৬০ মেট্রিক টন চাল ও ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং তা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১০১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button