রংপুর বিভাগসারাদেশ

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে বানভাসীদের

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি সামান্য কমলেও এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এ অবস্থায় দিন যতই যাচ্ছে এক মাসেরও বেশি সময়ের দীর্ঘ বন্যায় কষ্ট বেড়ে দ্বিগুন হচ্ছে বানভাসী মানুষজনের। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য ও শিশু খাদ্যের সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। কষ্ট বেড়েছে, বাঁধ, পাকা সড়ক ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেয়া বন্যা দুর্গতদের। সবচেয়ে বিপদে পড়েছে দিনমজুর শ্রেনীর মানুষেরা। হাতে কাজ ও ঘরে খাবার না থাকায় এবং ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় চরম খাদ্য কষ্টে ভুগছেন তারা। এতো দিন ধার দেনা করে একবেলা খেয়ে দিন পাড় করলেও মিলছে না সে ধারদেনাও। দুর্বিসহ দিন পাড় করছে জেলার ৯ উপজেলার প্রায় ৪ শতাধিক চরাঞ্চলের ৪ লক্ষাধিক মানুষ।
বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার উলিপুর, চিলমারী, কুড়িগ্রাম সদর, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলগুলোর মানুষ দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নৌকা ও ঘরের চৌকি, মাঁচান উঁচু করে পানির মধ্যে বসবাস করে আসছিল। এই দীর্ঘ সময় প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাবে খেয়ে না খেয়ে পানির মধ্যে দিন পাড় করায় এসব এলাকার বানভাসীরা আক্রান্ত হচ্ছেন পানি বাহিত নানা রোগব্যাধী। বিশেষ করে জেলার বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে ৪১ হাজার নলকুপ তলিয়ে থাকায় বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না বানভাসীরা। স্যানিটেশনের সমস্যা দুর্ভোগ আরো বাড়িয়েছে তাদের। এ অবস্থায় সহসাই পানি নেমে যাওয়ার কোন আশা না থাকায় এসব এলাকার বন্যা দুর্গতরা ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। ফলে সড়ক, বাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রে বাড়ছে বানভাসীদের সংখ্যা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার চর যাত্রাপুরের মোকছেদ আলী জানান, বউ, বাচ্চা, গবাদি পশু নিয়ে এতোদিন পানির মধ্যে খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করেছিলাম যে পানি নেমে যাবে। কিন্তু পানি নেমে যাওয়ার কোন নাম গন্ধ নেই। খাওয়ার কষ্ট, বিশুদ্ধ পানির কষ্ট, গরু, ছাগলের খাবার কষ্ট এভাবে আর কতদিন থাকা যায়। হাত-পায়ে ঘা হয়েছে। এজন্য গত ৩ দিন হলো পরিবার পরিজনসহ গরু, ছাগল, হাস, মুরগী নৌকায় তুলে উঁচু জায়গায় রেখে এসে নৌকায় বসে থেকে বাড়ি পাহাড়া দিচ্ছি।
উলিপুর উপজেলার মশালের চরের এনামুল হক জানান, করোনায় দীর্ঘদিন হাতে কাজ নেই। তার উপর বন্যা আরো দীর্ঘায়িত হচ্ছে। কাজ নেই ঘরের খাবার শেষ হয়ে গেছে। ধার দেনাও আর পাওয়া যায় না। দুইটি বাচ্চা আর স্ত্রীকে খুবই বিপদে আছি। কোন ত্রাণ এখনও পাননি বলে জানান তিনি।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আইয়ুব আলী সরকার ও উলিপুরের বেগমগন্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: বেলাল হোসেন জানান, ইউনিয়নের পানিবন্দি মানুষের চাহিদা উপজেলায় দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে সরকারীভাবে যে ত্রাণ সহায়তা পাওয়া গেছে তা দিয়ে বন্যা কবলিত অর্ধেক পরিবারকে দেয়া সম্ভব হয়েছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় বন্যার্তদের মাঝে এ পর্যন্ত ১৯০ মেট্রিক টন চাল, জিআর ক্যাশ ৯ লাখ টাকা, শিশু খাদ্য ২ লাখ টাকা, গো-খাদ্য ৪ লাখ টাকা ও ৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button