সারাদেশ

খানসামায় করোনার প্রভাবে লিচুর বাজার নিয়ে শঙ্কিত বাগান মালিক-ব্যবসায়ী

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা উত্তরাঞ্চলের উঁচু এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম হওয়ায় এসব জমিতে চাষযোগ্য অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি কয়েক দশক ধরে লিচু চাষ হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে। চলতি বছর লিচুর বাগানগুলো গুটিতে ভরে গেছে। এ বছর লিচুর ভালো ফলন হওয়ার আশা করলেও বাজারজাত নিয়ে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলায় লিচু চাষে প্রসিদ্ধ ভাবকী ইউনিয়নের কাচিনিয়া, ভাবকী, আগ্রা, রামনগর, গুলিয়াড়া, চাকিনিয়া, দেউলগাঁও, মারগাঁও খামারপাড়ার গারপাড়া, বালাপাড়া, কায়েমপুর, ডাঙ্গারহাট, গোয়ালডিহির হাসিমপুর, আঙ্গারপাড়ার পাকেরহাট, ভেড়ভেড়ীর টংগুয়া,খামার বিষ্ণুগঞ্জ, সহজপুর এবং আলোকঝাড়ি ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, আলোকঝাড়ি, বাসুলী, সুশুলী গ্রামে কয়েক দশক ধরে বাণিজ্যিক ভাবে লিচু চাষ হয়ে আসছে।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার ছয় ইউনিয়নে ২১০ হেক্টর জমিতে ১৬০টি লিচু বাগান রয়েছে। যার মধ্যে বাগান আকারে ২০২ হেক্টর এবং বসতবাড়ীতে ৮ হেক্টর। এসব বাগানে অধিক ফলনশীল মূল্যবান মাদরাজি, চায়না থ্রি, বেদানা, বেনারসী এবং অন্যান্য জাতে লিচুর চাষ হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে। গত বছর এসব বাগান থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬শ মে. টন এবং উৎপাদন হয়েছে ৬৫০ মে.টন।
লিচুচাষী অক্ষ্যক্ষ শাহাদাৎ হোসেন, ডা. ময়েজ উদ্দিন, আল-আমিন, সফিকুল ইসলাম শিপন, ওসমান গণি ও দিনাজপুর সদরের লিচু ব্যবসায়ী তহিদুল ইসলামের বাগানে তত্ত্ববধানে থাকা সামসুল আলমসহ অনেকের সাথে কথা হয়। তারা বলেন, গত ৩ বছরের তুলনায় এবার বাগানে ভালো মুকুল এসেছিল। গুটিও ধরেছে আশানুরূপ। তবে এত ফল হবে না। দশভাগ গুটি ঝরে পড়বে। প্রাকৃতি দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে সন্তোষজনক ফলন হতে পারে।
তারা বলেন, গত বছর রমজান মাস থাকায় চায়না থ্রি, মাদরাজি ও বোম্বাই লিচু ১শ থেকে ১২০ টাকা শ ধরে এবং লেটে ফলনশীল বেদানা, বেনারসি ও কাঠালী লিচু ২শ থেকে ৩শ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তার আগের দু-বছর লিচুর ফলন কম ছিল। এ বছর রমজান মাসের পর লিচু পাকা শুরু হবে
শিপন বলেন, খানসামায় উৎপাদিত লিচুর বিক্রয় বাজার ঢাকা, সিলেট, বরিশাল অঞ্চলের শহর-বন্দর। কিন্তু এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে লিচুর বাজার নিয়ে ভীষণ শঙ্কায় আছি। আগাম লিচুর মধ্যে মাদরাজী আর বোম্বে জাতের লিচু প্রথমে পাকা শুরু হয়। পরে চায়না থ্রি, বেদানা ও বেনারসি সহ অন্যান্য জাতের লিচু পাকে।
সামসুল আলম বলেন, ৫ বছরের চুক্তিতে ১১শ গাছের বাগান নিয়েছি। গত ৩ বছরে ভালো ফলন পাইনি ব্যবসায়ও ভালো হয়নি। ৪৫ লাখ টাকার বাগানে লিচু বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩০ লাখ টাকা। আর মাত্র দুই মৌসুম আছে। জানি না কী হবে?
এ বছর বাগানে মুকুল আসা থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি গাছ পরিচর্যায় খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার টাকা। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে মালামাল সরবরাহ কম থাকায় খরচ বেশি হচ্ছে। আগামি দুই মাসে ফল তোলা পর্যন্ত পরিচর্যা ও পাহারা বাবদ খরচ হবে আরও প্রায় ৫ হাজার টাকা মত। প্রতিটি গাছে স্বাভাবিক ভাবে হলে ৪ থেকে ৬ হাজারের মত ফল হাতে পারে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আফজাল হোসেন জানান, এ বছর লিচুগাছে সন্তোষক হারে গুটি দেখা যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে ৭শ থেকে সাড়ে ৭শ মে. টন লিচু হতে পারে। লিচু পাকতে এখনও প্রায় দু-মাসের মত সময় আছে। যদি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে তাহলে। বাজার মূল্য ভালো হতে পারে। তবে আমরা পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে পরিবহন ও বাজারজাত করণে বিকল্প ব্যবস্থাপনার বিষয়টি ভাবছি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button