সারাদেশ

ধরলার ভাঙ্গনে নিঃস্ব কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর এরশাদুলের রাস্তায় বসবাস

সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : ধরলা নদী বেষ্টিত ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁসা উত্তরের জনপদ ফুলবাড়ী। এই ধরলা নদী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও লালমনিরহাট সদরের পাশ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কুড়িগ্রাম সদরে গিয়ে মিশেছে ব্রহ্মপুত্র নদে। ধরলার প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে এখানকার জনজীবনে। ধরলা যেমন আশির্বাদ তেমনি কখনো অভিশাপ বয়ে নিয়ে আসে এখানকার মানুষের জীবনে। এখানকার কৃষি অনেকাংশেই ধরলার ওপর নির্ভরশীল। এছাড়াও বহু মানুষের জীবন জীবিকার অবলম্বন এই ধরলা। তারপরও প্রতিবছর বর্ষায় এটি ভয়ংকর হয়ে ওঠে হাজারো মানুষের জীবনে। বিশেষ করে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর শুরু হয় তীব্র ভাঙ্গন। ধরলার অব্যাহত ভাঙ্গনে বদলে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী জনজীবনের দৃশ্যপট। নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে বসত বাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট। বাপ দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে অনেক পরিবার হচ্ছে নিঃস্ব। সর্বস্ব হারিয়ে অনেকে আশ্রয় নিয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কিংবা রাস্তায়। এমনি একজন উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের চড় বড়লই গ্রামের ৭ নং ওয়ার্ডের মৃত ছকিয়তুল্ল্যাহর ছেলে এরশাদুল হক (২৯)। নিজের শেষ সম্বল পৈত্রিক ভিটা ধরলা নদীতে বিলীন হওয়ায় বৃদ্ধ বিধবা মা, ২ শিশু সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে সে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চড় বড়লই বাংলাবাজার সংলগ্ন রাস্তায় একটি ছোট্ট ঘরে এরশাদুলের মানবেতর বসবাস। ছোট ঘরটির একপাশে গরু বেঁধে রাখেন। পাশেই রান্নার চুলা আর হাড়িপাতিল রাখার জায়গা। অন্যদিকে শোবার জন্য একটি চৌকি পাতানো। রাস্তাটি সরু হওয়ায় এবং অর্থাভাবে আর ঘর নির্মাণ করতে না পারায় একই ঘরে গবাদিপশু আর ছোট্ট শিশুদের নিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবন যাপন করছে তারা।

এরশাদুল বলেন, সর্বনাশা ধরলা আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমি পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী। সামান্য রোজগারে পরিবারের চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খেতে হয়। প্রতিদিনের খরচের পরে সঞ্চয় বলতে কিছুই থাকে না। জমি কিনবো কিভাবে। সহায় সম্বল না থাকায় পাচ্ছি না কোন ঋণ সহায়তা।

এরশাদুলের মা ফাতেমা বেগম (৬৫) বলেন, আমি যদি বিধবা বা বয়সস্ক ভাতা পেতাম তাহলে ছেলেটার কিছুটা উপকারে আসতো। এলাকাবাসীর সাথে কথা হলে তারা জানান, কয়েকমাস আগে বন্যার পরপরই তীব্র ভাঙ্গনে ধরলা কেড়ে নেয় এরশাদুলের বাপদাদার বসতভিটা। তার আর কোন জমিজমা নাই। সে নিরুপায় হয়ে বিধবা মা, ২ শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছে। সরু রাস্তায় ঘর কোলায় জনগণের চলাচরেও অসুবিধা হয়।

তারা আরও বলেন, নিরীহ মানুষ হঠাৎ করে জমি কেনার টাকা সে কোথায় পাবে। এ সময় তারা সরকারি ভাবে এরশাদুলের পুনর্বাসনের দাবি জানান। ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খৈমুদ্দিন চৌধুরী জানান, এরশাদুলের দুর্দশার কথা আমি জানি।বরাদ্দ আসলেই তার পুনর্বাসন ও তার মায়ের ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। বড়ভিটা ইউপি চেয়ারম্যান খয়বর আলী মিয়া জানান, ধরলার ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে আমরা ৫৫ টি পরিবারের একটি তালিকা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে দিয়েছি। আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের পুনর্বাসনের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button