খুলনা বিভাগসারাদেশ

নাব্যতা সংকটে দৌলতদিয়ায় পণ্যবোঝাই ৭ জাহাজ আটকা

রাজবাড়ী প্রতিনিধি: পণ্য পরিবহনে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাবনার নগরবাড়ী-সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। সেখানে নির্ধারিত ড্রাফটের বিভিন্ন পণ্যবাহী শত শত কোষ্টার জাহাজ নিয়মিত চলাচল করে থাকে। কিন্তু নদীর পানি কমে ওই নৌপথের বিভিন্ন পয়েন্টে অসংখ্য ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি চ্যানেলে পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় সেখানে মালবাহী জাহাজ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা থেকে ছেড়ে আসা নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী বন্দরগামী বিভিন্ন সার, গম, কয়লা ও ক্লিংটার বোঝাই ৭টি কোষ্টার
জাহাজ গত পাঁচ দিন যাবত গোয়ালন্দের দৌলতদিয়ায় পদ্মা নদীতে আটকা পড়ে আছে।
আজ বুধবার (১৮ নভেম্বর) বেলা ১টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ৬ নম্বর ফেরিঘাট
থেকে এক কিলোমিটার ভাটিতে পদ্মা নদীতে নোঙর করে আছে এমভি হিমু, এমভি রামেসা, এমভি মাস্টার মোহাই মিলন, এমভি বর্ষা, এমভি পূর্ণিমা ও এমভি মুক্তা-মিত, এমভি রোদেলা নামের ৭টি কোষ্টার জাহাজ। শতাধিক শ্রমিক ওই জাহাজগুলো থেকে মালামাল নামিয়ে বোলগেটে বোঝাই করছে।
এসময় আটকে পড়া জাহাজ চালকদের (মাস্টার) সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি কমে দৌলতদিয়া-নগরবাড়ী-বাঘাবাড়ী নৌপথে অসংখ্য ডুবোচর ও নব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে নৌচ্যানেলের মোল্লার চর, ব্যাটারির চর, কানাইদিয়া, লতিফপুর, নাকালিয়া ও পেঁচাখোলা এলাকায় নাব্যতা সংকট সবচেয়ে বেশি। প্রয়োজনীয় পানির গভীরতা না থাকায় সেখানে ১০ থেকে ১৩ ড্রাফটের মালবোঝাই কোন জাহাজ চলাচল করতে পারছে না। এ কারণে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর থেকে ছেড়ে আসা পাবনার নগরবাড়ী ও সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী বন্দরগামী বিভিন্ন মালামাল বোঝাই ওই কোস্টার জাহাজগুলো গত পাঁচ দিন যাবত গোয়ালন্দের দৌলতদিয়ায় আটকা পড়ে আছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে জাহাজ থেকে মালগুলো আনলোড করতে না পারলে বয়ে আনা মালামালের মালিকপক্ষকে প্রতিদিন জাহাজপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে ‘ডেমারেজ’ গুনতে হবে। এ ক্ষেত্রে ২২ দিন পার হলে জাহাজ ভাড়া দ্বিগুন পরিশোধ করতে হবে। তাই জাহাজ থেকে মালগুলো দ্রুত নামিয়ে সেগুলো বোলগেটে
করে নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জাহাজ থেকে মালামাল নামানোর কাজে কর্মরত সিরিয়াল মাস্টার মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘নৌপথে নব্যতা সংকট ও ডুবোচরের কারণে মালবাহী কোস্টার জাহাজগুলো সরাসরি নগরবাড়ী ও বাঘাবাড়ী বন্দরে যেতে পারছে না। পথে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া এলাকায় এসে জাহাজগুলো আটকা পড়ছে। এখান থেকে মালামাল আনলোড করে আমরা সেগুলো বোলগেটে করে নগরবাড়ি ঘাটে পৌছে দিচ্ছি। এতে সংশ্লিষ্ট মালের মালিকপক্ষকে বোলগেট ভাড়া ও লেবার খরচ বাবদ অতিরিক্ত টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। আটকে পড়া জাহাজ এমভি মুক্তা-মিতু’র সাইফুল ইসলাম তোলা জানান, চট্টগ্রম বন্দর থেকে ইউরিয়া সার বোঝাই ১০ ড্রাফটের জাহাজ নিয়ে তিনি সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী যাচ্ছিলেন। পথে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাটের কাছাকাছি পৌছে অন্যান্য জাহাজের সঙ্গে তার জাহাজটিও নব্যতা সংকটের মুখে সেখানে আটকা পড়ে আছে। তিনি আরো বলেন, জাহাজ চলাচলে দৌলতদিয়া-নগরবাড়ী-বাঘাবাড়ী নৌপথ চ্যানেল সচল রাখতে সেখানে দ্রুত খনন কাজ করা খুব জরুরী।
বিআইডাব্লিউটিএ’র পোর্ট অফিসার মোঃ সেলিম রেজা বলেন, পণ্য পরিবহনে দৌলতদিয়া-নগরবাড়ী-বাঘাবাড়ী একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। সারা বছর জুড়ে
সেখানে নির্ধারিত ড্রাফটের বিভিন্ন পণ্যবাহী শত শত কোষ্টার জাহাজ নিয়মিত চলাচল করেথাকে। তবে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে ওই নৌপথের চ্যানেলে পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় সেখানে ৮ ড্রাফটের উপরে পণ্যবোঝাই কোন জাহাজ চলাচল করতে পারে না। তবে, নাব্যতা সংকট মোকাবেলায় বিআইডাব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগ সেখানে খনন কাজের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বলে তিনি জানান।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button