অর্থনীতিলিড নিউজ

নাইকো মামলায় বাংলাদেশের জয়

কানাডিয়ান বহুজাতিক তেল-গ্যাস কম্পানি নাইকোর বিরুদ্ধে টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের ঘটনায় কানাডিয়ান বহুজাতিক তেল-গ্যাস কম্পানি নাইকোর বিরুদ্ধে মামলায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তির প্লাটফর্ম ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপুটেড (ইকসিড) এই রায় ঘোষণা করেছে।

এতে নাইকোর কাছে বাংলাদেশ এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ পাবে। যদিও ইকসিড স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি নির্ণয় করে বাংলাদেশকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বেলেছে। সব মিলিয়ে আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

আজ রবিবার দুপুরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিজ বাসভবন থেকে ডিজিটাল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের ঘটনায় কানাডিয়ান বহুজাতিক তেল-গ্যাস কম্পানি নাইকোর বিরুদ্ধে মামলায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আর এ বিষয়ে দেওয়া রায়ে নাইকোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালত ইকসিড। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইকসিড এই রায় প্রদান করে। তবে মার্চের শুরুতে সংবাদ সম্মেলন করে এই রায় জানানোর কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির জন্য তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। নাইকো দক্ষতার সঙ্গে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে এবং পেট্রোলিয়াম শিল্পে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই এ বিস্ফোরণ ঘটে বলে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে আরো জানান, ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে যে ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হয় তা ২০১৮ সালে ইকসিডে জমা দেওয়া হয়েছে। ইকসিড রায়ে বলেছে নাইকোর গাফিলতি এবং অদক্ষতার জন্যই বিস্ফোরণ ঘটেছে। ফলে এর দায় নাইকোকেই নিতে হবে। বাংলাদেশকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে আগামী সেপ্টেম্বরে আবার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটি পেছাবে।

মামলাটির আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈন গণি জানান, বাপেক্স এর ১১৮ মিলিয়ন ডলার এবং পেট্রোবাংলার ৮৯৬ মিলিয়ন ডলার মিলিয়ে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এর বাইরে আদালত বলেছে স্বাস্থ্যগত ক্ষতি এবং পরিবেশ এবং প্রতিবেশের ক্ষতি নিরুপণ করে আদালতে জমা দিতে। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে।

তিনি আরো জানান, ‘আগামী সেপ্টেম্বরে আরো একটি শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন করোনার কারণে সেটি সম্ভব হবে না। ফলে আমাদের পরিস্থিতি ভালো হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ ঠিক হওয়ার জন্য সময় প্রয়োজন হতে পারে। এই জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। আমরা তাদের দিয়ে পুনঃরায় মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন দেবো। এদিকে নাইকো দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখন আমাদের ব্লক-৯ এ বাঙ্গুরা গ্যাস ক্ষেত্রে নাইকোর সম্পত্তি দিয়ে তা উশুল করতে হবে।

এই সময় জ্বালানি সচিব বলেন, আমাদেরকে এই অর্থ তাদের দিয়ে দিতে হতো। এখন আর দিতে হচ্ছে না। আবার এর ফলে সারা বিশ্বের কাছেই একটি সুন্দর বার্তা পৌঁছেছে। এটিও বিবেবচনা করতে হবে।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিসুর রহমান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এ বি এম আব্দুল ফাত্তাহ্।

উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জের ছাতকের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নে ২০০৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নাইকোর সঙ্গে চুক্তি করে বাপেক্স। গ্যাসকূপ খনন করার সময় ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ছাতকে প্রথম দফা বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আবার চেষ্টা করতে গেলে আরো এক দফা বিস্ফোরণ ঘটে। এতে খনিটিতে থাকা গ্যাসের অনেকটা পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। স্থানীয় প্রাণবৈচিত্র বিলুপ্ত হয়। এজন্য নাইকোর কাছে ৭৪৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে পেট্রোবাংলা, যা দিতে নাইকো অস্বীকৃতি জানায়। ক্ষতিপূরণ আদায়ে পেট্রোবাংলা নাইকোর বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে স্থানীয় নিচু আদালতে মামলা করে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button