রাজশাহী বিভাগসারাদেশ

বদলগাছীতে প্রশাসনের সহায়তায় বালুমহাল দাবি করে বাগানের মাটি ও গাছ কেটে নিচ্ছে ইজারাদার

বদলগাছী(নওগাঁ) প্রতিনিধি ঃ নওগাঁর বদলগাছী ছোট যমুনা নদীর বালুমহাল ইজারার নামে বাগানের মাটিসহ গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই কাজে ইজারাদারকে সহায়তা করছেন খোদ উপজেলা প্রশাসন। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বালুভরা ইউপির রামশাপুর মৌজার কটকবাড়ী গ্রামের ছোট যমুনা নদীর পাশে সৈলেন্দ্রনাথ ম-লের ৩৫ বছর পূর্বে গড়ে তোলা বাগান ও পটল ক্ষেতের ভিটা জমিতে।
তথ্য সংগ্রহকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালুমহাল ইজারা নিয়ে বালুভরা ইউপির রামশাপুর মৌজার কটকবাড়ী গ্রামের সৈলেন্দ্রনাথ ম-লের বাগান থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে বালু ব্যবসায়ীরা। বাগানের গাছ কেটে এবং উপরে ফেলে তারা মাটি কাটছে। মাটি কর্তনের ফলে ১৫-২০ টি গাছ উপড়ে পড়ে আছে এবং প্রায় অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে পড়ার উপক্রম। এলাকাবাসী জানায় আরো ৮-১০ টি গাছ নৌকা যোগে নিয়ে গেছে তারা।
বৃহস্পতিবার সকালে বাগানের মালিক সৈলেন্দ্রনাথ জানান, বুধবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে করাত দিয়ে কেটে পড়ে থাকা গাছগুলি নৌকা যোগে নিয়ে গেছে তারা। খবর পেয়ে রাতে বাধা দিতে গেলে তাদের চোখেমুখে টর্চলাইট মেরে হুমকি দিয়ে বলা হয়, আশেপাশে আসলে নদীর জলে ডুবিয়ে মারা হবে। তারা আর সেখানে যায়নি। এখনো কয়েকটি গাছ নদীর পানিতে পড়ে আছে।
বুধবার বিকালে তথ্য সংগ্রহকালে নদীর দক্ষিণ পাড়ের গ্রামের লোকজন চিৎকার করে বলেন, আমরা কোন দেশে বাস করছি? বালু মহাল লিজ নিয়ে বাগানের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে, গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে, এ যেন মগের মুল্লুক। সেখানে দেখা যায় যমুনা নদীর উপরে পটল ক্ষেতের ভিটা জমিতে লাল পতাকা দিয়ে খুঁটি মারা রয়েছে। সেখানে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দা বেলাল ও হারুন জানায়, ৭/৮ দিন পূর্বে ভূমি অফিস থেকে তহশিলদার ও সার্ভেয়ার এসে মাপজোক করে লাউ এবং পটল ক্ষেতের ভিটা জমিসহ বাগান নদীর সীমানার মধ্যে আছে বলে লাল পতাকা দিয়ে খুঁটি মেরে বালু ব্যবসায়ীদের মাটি কাটার অনুমতি দিয়ে যায়। তারপর থেকেই বালু ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন ভোররাতে এসে বাগানের গাছ উপড়ে ফেলে মাটি কেটে নিয়ে যায়। এসব তা-বলীলা দেখে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
বাগানের মালিক সৈলেন্দ্রনাথ আরো জানান, গত ৪ আগস্ট বাগান কাটা বন্ধ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। বরং ইউএনও এবং এসিল্যা- বালু ব্যবসায়ীদের বাগান ও পটল ক্ষেতের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
বালু ইজারাদার মো. মফিজ উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান, ১০-১২ দিন আগে তহশিলদার ও সার্ভেয়ার ঐ এলাকা মাপজোক করে দিয়েছেন। আমি ঐদিন উপস্থিত থাকতে পারিনি। বাগানের মাটি কাটা যদি অন্যায় হয় তাহলে ইউএনও এবং এসিল্যা-কে প্রশ্ন করতে হবে। তারা কীভাবে মাপজোক করে দিলেন? আর বাগান যদি মালিকানা হয় তাহলে সেখানে মাটি কাটা অন্যায় হয়েছে। কালোকে কালো সাদাকে সাদা বলতেই হবে। আমার ঐ এলাকা দেখাশুনা করে নওগাঁর সাব্বির ও সহিদুল।
তহশিলদার কল্লোল জানান, মাপজোকের মধ্যে বাগান নেই। বাগানের গাছ এবং মাটি কাটা হলে সেটা অন্যায় হয়েছে। আমি ইউএনও এবং এসিল্যা- স্যারকে প্রয়োজনে বুঝিয়ে বলবো।
এবিষয়ে সহকারী কমিশনার(ভূমি) মো. নাহারুল ইসলাম বলেন, বাগান বালু পয়েণ্টের মধ্যে খাস জায়গায়। যথারীতি তাদেরকে মাপজোক করে দেওয়া হয়েছে। আর বালুমহালের মধ্যে পড়লে আমাদের করার কিছু নাই। বাগান মালিকানা না হয়ে যদি সরকারি সীমানা হয় সেই বাগানের মাটি ও গাছ বালুমহাল হিসেবে কেটে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার আপনার আছে কি না জানতে চাইলে কিছু পর তিনি ফোন করে বলেন, সেখানে মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর গাছ যদি কাটে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা. আবু তাহির এর সঙ্গে ফোনে কথা বললে তিনি জানান, যথারীতি সেখানে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুনরায় বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার জন্য এসিল্যা-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button