সারাদেশ

বিষাক্ত মদ্য পানে যশোরে একের পর এক মৃত্যুর অভিযোগ

যশোর ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি: করোনা ভাইরাস  সংকটের মধ্যেই যশোরে বৈধ লাইসেন্সে নিয়ে চলছে অবৈধ বাংলা মদের রমরমা ব্যবসা।

যশোর কালোবাজারে বিক্রিত এসব বাংলা মদ ও স্প্রিরিট খেয়ে যেন মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে।
গত ৫ দিনে যশোর জেলায় বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

অতিরিক্ত মদ্যপান বা বিষাক্ত মদপানে মৃত্যুর মিছিলের এ বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে আইনশৃংখলা বাহিনীকে।

৫ দিনে যশোরে অতিরিক্ত ও মেয়াদ উত্তীর্ণ বিষাক্ত মদ্যপানে অন্তত পনেরো জনের মৃত্যুর ঘটনায় মৃত দুই ব্যক্তির স্ত্রী ও পুলিশ বাদী হয়ে পাঁচটি মামলা করেছে।

মামলায় আসামি করা হয়েছে যশোর মাড়ুয়াড়ি মন্দির সংলগ্ন পতিতাপল্লীর সামনে আলোচিত মদ বিক্রেতা মাহমুদুল হাসানকে (৫২)। রোববার আদালতে তাকে সোপর্দ করা হয়। আদালতে স্বীকারোক্তিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন মাহমুদুল হাসান। তিনি অবৈধ মদের ব্যবসায় জড়িত রাঘববোয়ালদের নাম বলেছেন।
যশোর শহরের মাইকপট্টি এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন, তিনি কালোবাজারে ২০ বছর ধরে মদের ব্যবসা করেন। ইয়াকুব কবির নামে লাইসেন্সধারী এক বিক্রেতার কাছ থেকে তিনি মদ ক্রয় করেন। যদিও ইয়াকুব কবিরের ম্যানেজার রাজু, কর্মচারী লাভলু, গহুর, বাবলু, শঙ্কর দোকান চালায়। এরা চুরি করে মাহমুদুল হাসানদের কাছে মদ বিক্রি করেন। তারা অবৈধভাবে প্রায় ৪০জনকে লাইসেন্স ছাড়াই মদ বিক্রি করেন। সেখান থেকে কিনে তারা বিক্রি করেন শহরের বাবুবাজার ও পতিতাপল্লীর সামনে। এরপর সুইপার কলোনিতে বিক্রি করেন। গত ২৫ মার্চ থেকে মদ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এই সুযোগে নিশি ও আব্দুল নামে দুজন মাঝারি বোতলে স্পিরিট বিভিন্ন জায়গায় সাপ্লাই দেয়। নজির ও তার দুই ছেলে নিশি এবং আব্দুলকে সাপ্লাই দেয়। মিন্টু, রাজ্জাক, গহুর, লাভলু, বাবলু, শঙ্কর, নিশি ও আব্দুল মেয়াদ উত্তীর্ণ স্পিরিটের সাথে পানি মিশিয়ে বিক্রি করে। যারা মদ খায় তাদের কাছে এই স্পিরিট বিক্রি করা হয়েছে। তাদের কয়েকজন মারা গেছে। মদ বিক্রি বন্ধ থাকায় মদ্যপ ব্যক্তিরা যা পাচ্ছে তাই খাচ্ছে। এই সুযোগে তারাও ব্যবসা করছে। মূল ব্যবসা করছে নাজির ও তার ছেলেরা। নাজিরের ছেলে বাবলু হোমিওপ্যাথি দোকানে চাকরি করে। এই সুযোগে স্পিরিট সংগ্রহ করে।

এদিকে স্থানীয়, পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিষাক্ত মদপানে রোববার নতুন করে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা শহরের রেলগেট চোরমারা দীঘির পাড় ও বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার বাসিন্দা। মৃতদের মধ্যে একজন বিকাশ সাহানি (৩৮); অন্যজন ওজিয়ার ওরফে ওলিয়ার। বিকাশ শহরের বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার দামোদর সাহানির ছেলে। আর ওলিয়ার শহরের রেলগেট চোরমারা দীঘির পাড়ের মৃত কুরবান গাজীর ছেলে।

২৫ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টার দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজন মারা যান রাঙি (৪৫) নামে একজন আদিবাসীর। এছাড়া এদিন মৃত্যু হয়েছে আরও চারজনের। এরা হচ্ছেন- যশোর সদর উপজেলার শেখহাটির আরশাদ আলীর ছেলে শাহিন হোসেন (৩৫), চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের খিতিবদিয়ার শাহজাহান সরদারের ছেলে ইনামুল হোসেন (৩৯), ঝিকরগাছা উপজেলার কাটাখাল গ্রামের সাহেব আলী (৬৫) ও মণিরামপুর উপজেলার মদনপুর গ্রামের তপন হালদার (৪০)। এদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
২৩ এপ্রিল ও ২৪ এপ্রিল মৃত্যু হয় মণিরামপুর উপজেলার মদরপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মোমিন (৪৮), একই গ্রামের মুক্তার হোসেন (৪৭), যশোর শহরের গরীব শাহ মাজার এলাকার শরিফ উদ্দিন ওরফে মনি বাবু (৪৫), ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের সাবুর (৪৬), বেজপাড়ার নান্টু (৩৫), ঝুমঝুমপুর মান্দারতলার ফজলুর রহমান চুক্কি (৫০) ও চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলার বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান (৪৫)। এসব মৃত্যুর ঘটনায় শনিবার মদের কারবারি মাহমুদুল হাসান ওরফে হাসানের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। এরমধ্যে তিনটি মামলায় মদ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। অন্য দুটি মামলায় অবৈধভাবে মদ বিক্রির অভিযোগ আনা হয়েছে।

কোতয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানান, হাসানকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তার জবানবন্দি নিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। অপরদিকে মোতালেব নামে আরও একজন অবৈধ ও ভেজাল মদ ব্যবসায়ীকে খুঁজছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক। লাইসেন্স না থাকা সত্তেও তারা দীর্ঘদিন ধরে মদের কারবার করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন ।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button