রাজশাহী বিভাগসারাদেশ

শেরপুরে সিন্ডিেিকটের কব্জায় আলু বীজ: সংকটে কৃষকের মাঝে হাহাকার

শেরপুর (বগুড়া): বগুড়ার শেরপুরে আলু বীজের সংকটে পড়েছে কৃষক। গত কয়েকদিনে সিন্ডিকেটের কব্জায় চলে গেছে আলু বীজ। ফলে স্থানীয় বাজারে এর কৃত্রিম সংকট তৈরী হয়েছে। ডিলার ও ব্যবসায়ীদের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েও বীজ মিলছে না। তাই কৃষকরা তাদের জমি তৈরী করেও বীজের অভাবে রোপণ করতে পারছেন না। চাহিদা অনুযায়ী মান সম্মত বীজ না পাওয়ায় তাদের মাঝে হাহাকার শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় আলু চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
এদিকে কৃষকদের জিম্মি করে অসাধু ব্যবসায়ী ও ডিলারদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা ওই সিন্ডিকেট ইচ্ছেমতো দামে আলু বীজ বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বস্তা বীজ আলু ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি নিয়ে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের সেদিকে কোন নজর নেই। বরং রহস্যজনক কারণে তারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন।

স্থানীয় কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় ২হাজার ৬২৫হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে বীজ লাগে দেড় মেট্রিকটন। সে অনুযায়ী এই উপজেলায় বীজের প্রয়োজন ৩হাজার ৯৪ মেট্রিকটন। কিন্তু বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ১হাজার ৪০০ মেট্রিকটন। যা অর্ধেকের কম। আর এসব বীজ বিক্রির জন্য প্রায় ৪৫জন ডিলার রয়েছে। এরমধ্যে ডিএডিসির ১৮জন, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের ৮জন ও অন্যান্য কোম্পানির ১৯ জন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিলাররা উত্তোলন না করায় সরকারি বিএডিসির আলু বীজ এখনো বাজারে আসেনি। তাই ভাল ফলন পাওয়ার আশায় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক সিড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজের আলু বীজের দিকে কৃষক ঝুঁকে পড়েছেন। কিন্তু বাজারে এই কোম্পানিসহ অন্যান্য কোম্পানির বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। সিন্ডিকেটের কব্জায় চলে গেছে ওইসব কোম্পানির আলু বীজ। তাই ডিলার ও ব্যবসায়ীদের দোকানে দোকানে ঘুরেও বীজ পাচ্ছেন না চাষীরা। তবে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দিলেই মিলছে তাদের কাঙ্খিত আলু বীজ। ফলে আলু চাষের পরিবর্তে অন্য ফসল চাষের কথাও ভাবছেন তারা।
উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের আলু চাষি বদিউজ্জামান, আসাদুজ্জামান, শাহাদত হোসেন, আব্দুস সাত্তারসহ একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, ব্র্যাকের ৪০কেজি ওজনের বীজ আলুর বস্তা বি-গ্রেড ২হাজার ৮০টাকা ও এ-গ্রেড ২হাজার ২০০টাকা বিক্রি করার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২হাজার ৮০০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি বস্তায় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি। এরপরও চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না আলুর বীজ। তারা আরও জানান, গেল মৌসুমে বাজারে ভালো দাম পেয়ে কৃষক এবার আলু চাষে ঝুঁকে পড়লেও বেশি দামে বীজ কেনার কারণে একরপ্রতি ৮থকে ১০হাজার বেশি খরচ পড়বে। উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে। তাই আগামীতে আলুর ন্যায্যমূল্য না পেলে কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা। এসব কৃষকের দাবি, বীজ কোম্পানির একটি চক্রের সঙ্গে ডিলার-ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আগাম বুকিংয়ের নামে বীজ বাণিজ্য করছে। এমনকি বেশি দামে আলু বীজ বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। অথচ বিএডিসিসহ বেসরকারি কোম্পানির বিভিন্ন ডিলাররা বীজ বিক্রির ওপর কমিশন পান। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতরে তেমন কোন মনিটরিং না থাকার সুযোগ নিয়ে মুনাফাখোর ওই চক্রটি পরিকল্পিতভাবে বাজারে আলু বীজের কৃত্রিম সংকট তৈরী করেছে। এমনকি কোম্পানির নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি টাকা নিয়ে বীজ বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ করেন তারা। আর কৃষকদের এসব অভিযোগ খোদ ডিলাররাও স্বীকার করেছেন।
জানতে চাইলে ব্র্যাকের ডিলার মো. রফিকুল ইসলাম বীজ সংকটের কথা জানিয়ে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী এ উপজেলায় বীজের বরাদ্দ নেই। বরং বরাদ্দ আরও কমেছে। তাই এবার শেষ পর্যন্ত আলু বীজের সংকট থেকেই যাবে। এছাড়া বীজের দাম বাড়ার পেছনে সাব-ডিলারদের দায়ি করে বলেন, প্রত্যেক বীজ ডিলার আবার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সাব ডিলার (বীজ বিক্রেতা) নিয়োগ দিয়েছেন। তারা আগাম টাকা ও বুকিং দিয়ে আলু বীজ নিচ্ছেন। মূলত তারাই কোম্পানির নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি টাকা নিচ্ছেন বলে জানান। বিএডিসি ও ব্র্যাকের আরেক ডিলার ফিরোজ উদ্দীন মাষ্টার বলেন, সবেমাত্র আলু লাগানো শুরু হয়েছে। সবাই একসঙ্গে আলু লাগানোর কারণে আলু বীজের চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু সে তুলনায় সরবরাহ কম পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া যেসব কৃষক আগাম বুকিং দিয়েছেন তারাই আগে বীজ পাচ্ছেন। তাছাড়া বিগত বছরগুলোতে তাদের লোকসান গুণতে হয়েছে। তবে এবার একটু লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন বলেও স্বীকার করেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. শারমিন আকতার বলেন, এ উপজেলায় আলু বীজের কোন সংকট নেই। সময়মত সব কৃষকই বীজ পাবেন। তাই বীজের কারণে আলু চাষ ব্যাহৃত হবে না। কারণ দু-একদিনের মধ্যে বিএডিসির বীজ বাজারে আসলে শিগগিরই সেই শঙ্কা কেটে যাবে। এছাড়া ডিলাররা নির্ধারিত দামের বাইরে বীজ বিক্রি করতে পারবেন না। এরপরও যারা সেটি করবে-তাদের তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি দাবি করেন।

ইমরান হোসেন/সক

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button