জাতীয়শিক্ষাঙ্গন

২০২০ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে অবৈতনিক পড়ালেখা, পর্যায়ক্রমে অন্যান্য শ্রেণী

স্কুল-মাদ্রাসায় পড়তে আর কাউকে টিউশন ফি দিতে হবে না। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা বিনামূল্যে লেখাপড়া করবে। সরকার এ খরচ বহন করবে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। পরের বছর সিদ্ধান্তটি সপ্তম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করা হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে প্রতি বছর একটি শ্রেণি অবৈতনিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত হবে। পাশাপাশি শিক্ষার অন্যান্য ব্যয় বহনের জন্য শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি কার্যকর অব্যাহত রাখা হবে। তবে উপবৃত্তির আওতা বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করা হবে।

বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক লেখাপড়া করছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তিও পাচ্ছে। বিপরীত দিকে মাধ্যমিক স্তরে টিউশন ফি দিয়ে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। যে পরিমাণ শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাচ্ছে তাদের মধ্যে ১০ শতাংশ ছাত্র, বাকিরা ছাত্রী। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ শতাংশ ছাত্র এবং ৪৫ শতাংশ ছাত্রী উপবৃত্তি পাবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক স্তরের মতো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া অবৈতনিক করতে চান। শিক্ষায় টেকসই উন্নয়ন, ভিশন-২০৩০ এবং ২০৪১ অর্জনের লক্ষ্যে ঝরেপড়া রোধ এবং মান অর্জনই অবৈতনিক শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য। এজন্যই পর্যায়ক্রমে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক করতে চান প্রধানমন্ত্রী।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (এসইডিপি) আওতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবৈতনিক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। প্রাথমিকভাবে ২০২৫ সালের মধ্যে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা চালু করার চিন্তা ছিলো। সেটা অনুযায়ী চলতি বছরই ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের টিউশন ফি পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করতে বিলম্বের কারণে এখন আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সেই হিসাবে ২০২৬ সালের মধ্যে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা চালু হবে।

এ সংক্রান্ত বাস্তবায়ন কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, অবৈতনিক শিক্ষার জন্য সরকারের দেয়া ফি প্রত্যেক স্কুল-মাদ্রাসা একই হারে টিউশন ফি নেবে। সেই ফি’র অর্থ সরকার শিক্ষার্থীর কাছে পাঠাবে। শিক্ষার্থী তা স্কুলে জমা দেবে। অথবা, ধার্য টিউশন ফি সরকার সরাসরি প্রতিষ্ঠানে পাঠাবে। সরকার ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১শ’, সপ্তমে ১৫০ টাকা; অষ্টম শ্রেণি ২শ’ টাকা; নবম ও দশম শ্রেণিতে যথাক্রমে ৩শ’ ও ৫শ’ টাকা করে টিউশন ফি দেয়ার চিন্তা করছে। এছাড়া একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৫শ’ টাকা প্রস্তাবিত টিউশন ফি। সেই হিসাবে আগামী বছর ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অবৈতনিক শিক্ষা চালু করতে গেলে সারা দেশে লাগবে ৪ কোটি ৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। সরকার ইতিমধ্যে সম্ভাব্য শিক্ষার্থী সংখ্যাও নিরূপণ করেছে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ২০২১ সালে ৮০ লাখ ৪৪ হাজার ৬৭৩ জন এবং ২০২৫ সালে ৯০ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫০ জন লেখাপড়া করবে। অপরদিকে, নবম-দশম শ্রেণিতে ২০২১ সালে শিক্ষার্থী হবে ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার ১০৯ জন।

২০২১ সালে সারা দেশে নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে সরকারের ব্যয় হতে পারে ৪৪ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (নবম-দশম শ্রেণি) পেছনে ব্যয় হতে পরে ৩৪ কোটি ৯৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে ১০ লাখ ১১ হাজার ৭৭৩ শিক্ষার্থী হবে। তাদের জন্য ব্যয় হবে ৮ কোটি ৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

লেখাপড়ার পেছনে একজন শিক্ষার্থীর দুই ধরনের ব্যয় হয়। এর একটি প্রাতিষ্ঠানিক অন্যটি পারিবারিক। পারিবারিক ব্যয়ের মধ্যে খাতা, কলম, জামা-কাপড় ইত্যাদি। অবৈতনিক শিক্ষার ধারণায় সরকার শুধু প্রাতিষ্ঠানিক খরচ বহন করবে

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button