সারাদেশ

সাবেক ভুমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ আর নেই

পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক ভূমিমন্ত্রী, শামসুর রহমান শরীফ এমপি আর নেই।
বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টায় ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এই ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা (ইন্নালিল্লাহে……রাজেউন)।
মরহুমের ছেলে গালিবুর রহমান শরীফ এবং সাকিবুর রহমান শরীফ কণক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
১৯৪০ সালের ২৬ ফাল্গুন জন্মগ্রহণ করেন শামসুর রহমান শরীফ। এবছরই বিপ্লবী এই নেতা ৮০ বছর পূর্ণ করে ৮১তে পা রেখেছিলেন। বিগত প্রায় ৭ মাস ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত ও দুরারোগ্য রোগে ভুগছিলেন। প্রথমে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের পর তিনি লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। লন্ডন হতে ফিরে কিছুদিন ভালো থাকার পর অসুস্থ হলে আবারো ল্যাবএইডে ভর্তি হন। সেখান থেকে তাকে ভারতের মুম্বাই টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে প্রায় দুই মাস চিকিৎসা গ্রহণের পর ঢাকায় ফিরে আসেন। পরে আবারো তাকে ল্যাবএইডে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়। ইউনাইটেড হাসপাতালেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের চলতি সংসদের জাতীয় সংসদ সদস্য বর্ষিয়ান এই নেতা সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অত্যাচার, জেল-জুলুম ও নির্যাতন সহ্য করেছেন। এক সময়ের প্রতাপশালী জমিদার বংশের সন্তান শরীফ পাবনা জিলা স্কুলের ছাত্র থাকা অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে ঈশ্বরদী ও পাকশী এলাকায  মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার কাজে তার ভূমিকা ছিল অনন্য। জননেতা শরীফ একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ২৯ মার্চ ঈশ্বরদীর মাধপুরে পাকবাহিনীর প্রতিরোধ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিনি দীর্ঘদিন বিনা বিচারে জেলখানায় বন্দি জীবনযাপন করেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে পাবনা জেলায় তার ভূমিকা ছিল অনন্য। ওয়ান ইলেভেনের পরও তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়। অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন সহ্য করার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে স্বৈরাচার ও অগণতান্ত্রিক সরকারের লোভনীয প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে পাবনা জেলায় একনিষ্ঠভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে অগ্রগামী করেছেন।
১৯৯৬ হতে ২০১৮ পর্যন্ত পর পর ৫ বার বিপুল ভোটের ব্যবধানে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি ছিলেন ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়াবাসীর জননেতা। বিগত সংসদে অত্যন্ত সফলতার সাথে তিনি ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়ার রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করায় তিনি শুধূ ঈশ্বরদী বা আটঘরিয়া নয়, পাবনা জেলায় সকলের প্রিয়‘ডিলু ভাই’।
ব্যক্তিজীবনে তিনি ৫ ছেলে ও ৫ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। দ্বিতীয় পুত্র রানা শরীফের কয়েক বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে। পুত্র ও কন্যাদের মধ্যে এখনও ১ ছেলে ও ১ কন্যা অবিবাহিত। স্ত্রী কামরুন্নাহার শরীফ ঈশ্বরদী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি। জেষ্ঠ্য ছেলে শরীফ রাসেল বাদে গালিবুর রহমান শরীফ ও সাকিবুর রহমান শরীফ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। কনিষ্ঠ ছেলে শিরহান শরীফ তমাল ঈশ্বরদী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি। কন্যাদের মধ্যে দ্বিতীয় কন্যা মাহজেবিন শিরিন পিয়া পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। বিগত সময়ে তিনি ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। মেজ জামাতা আলহাজ আবুল কালাম আজাদ মিন্টু ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র।
ঈশ্বরদী-আটঘোড়িয়ার আওয়ামী লীগের কান্ডারি শামসুর রহমান শরীফ এমপি’র মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষ শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়ে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button