আন্তর্জাতিক

সরকারের মুখোশ খুলে দিয়েছে এনআরসি, দাবি মমতার

নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে প্রকাশ করা হলো ভারতের আসাম রাজ্যে সংশোধিত নাগরিক তালিকা (এনআরসি)। শনিবার (৩১ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকালে প্রকাশিত তালিকায় রাষ্ট্রহীন করা হয়েছে ১৯ লাখের বেশি বাঙ্গালিকে। যদিও সেই তালিকা নিয়ে এবার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এনআরসি প্রকাশের পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা কেবলই রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছিল। তবে এই এনআরসি বিপর্যয় এবার তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছে। দেশবাসীর কাছে এখন জবাব দিতে হবে। দেশ ও সমাজের স্বার্থ বাদ দিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে কাজ করলে এমনটাই ঘটে।’

টুইটার পোস্টে মমতা আরও লিখেছেন, ‘আমার বাংলাভাষী ভাইবোনদের জন্য খারাপ লাগছে। কেননা জাঁতাকলে পড়ে এখন ভুগতে হচ্ছে তাদের।’

এ দিকে ভারতীয় গণমাধ্যমের দাবি, শনিবার প্রকাশিত আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকার (এনআরসি) মাধ্যমে রাষ্ট্রহীন করা হয়েছে অন্তত ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ বাঙালিকে। যেখানে আগের তালিকায় বাদ দেওয়া হয়েছিল প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দাকে। তাছাড়া স্বীকৃতি মিলেছে প্রায় ৯ কোটি ১১ লাখ লোকের। যদিও এই তালিকা থেকে বাদ পড়াদের নিয়ে এবার আসাম তো বটেই, গোটা ভারত এমনকি প্রতিবেশী বাংলাদেশ পর্যন্ত মোদী সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে।

অপর দিকে এনআরসিকে কার্যত সমর্থন দিয়ে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘বাংলাদেশি হিন্দুদের স্বাগত, অনুপ্রবেশকারী মুসলিমদের এই ভারতবর্ষে কোনো ঠাঁই নেই।’

রাজ্য বিজেপির সভাপতি আরও বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে জারি করা হবে জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি)। বর্তমানে যদিও তৃণমূল সরকার বিষয়টির প্রবল বিরোধী। তাছাড়া বিরোধী বাম এবং কংগ্রেস পর্যন্ত এর বিরোধিতা করেছে। যদিও রাজ্যে এনআরসি জারি করতে বিজেপি অটল ভূমিকা পালন করবে।’

একই সঙ্গে রাজ্যের কংগ্রেস নেতা ও পার্লামেন্ট সদস্য অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘আমরা চাই কোনো ভারতীয় নাগরিক যেন এনআরসির কোপে না পড়েন।’ আসামের সদ্য প্রকাশিত এনআরসি তালিকা প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের এই নেতা আরও বলেন, ‘ওদের সরকার, ওরা যেখানে ইচ্ছে সেখানে এনআরসি চালু করতে পারে। এমনকি তারা এখন সংসদেও এনআরসি চালু করতে পারে। আমার বাবাও বাংলাদেশে থাকতেন। সেই হিসাবে আমিও বহিরাগত।’

যদিও বিশ্লেষকদের মতে, আসামের এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়াদের কাছে বাংলাদেশের কোনো নাগরিকত্ব নেই; এমনকি ভারত ছাড়া আর কোনো দেশেরই নাগরিকত্ব নেই তাদের। এমন অবস্থায় ভারত তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিলে মানুষগুলো একদমই রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে; যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ।

যে কারণে ভারত অনেকটা বাধ্য হয়েই তালিকা থেকে ছিটকে যাওয়াদের নিজ দেশের ভেতরেই বন্দি বানিয়ে রাখবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। যার অংশ হিসেবে আসামে এরই মধ্যে নতুন করে ১০টি বন্দি শিবির নির্মাণের কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। তাছাড়া অঞ্চলটিতে অতিরিক্ত ১৭ হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button