জাতীয়

কুয়েতের দুই এমপিকে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছেন পাপুল

অর্থ ও মানব পাচারের অভিযোগে কুয়েতে আটক লক্ষ্মীপুর-২ আসনের  সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল তার কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন সময় কুয়েতের সংসদ সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছেন।
কুয়েতের সরকারি কৌঁসুলিদের জিজ্ঞাসাবাদে এ কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
আরব টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাপুলকে মানব পাচারে সহায়তা করেছেন কুয়েতের দুই এমপি। এজন্য তাদের প্রায় ১৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন পাপুল।
গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে এমপি পাপুলকে গ্রেফতার করেন কুয়েতের সিআইডি সদস্যরা। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক তিনি। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এখন তাকে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।
আরবি দৈনিক আল রাইয়ের বরাত দিয়ে আরব টাইমস বলেছে, কুয়েতের দুই এমপি সাদুন হামাদ ও সালাহ খুরশেদের দায়মুক্তি তুলে নিতে জাতীয় পরিষদে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ব্যাপারে তথ্য দিয়েছেন সরকারি কৌঁসুলিরা। তারা বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদে এমপি পাপুল জানিয়েছেন, এমপি সাদুন হামাদ ও সালাহ খুরশেদকে তিনি মোট পাঁচ লাখ ৭০ হাজার দিনার বা ১৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। সিরিয়ার এক মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে এমপি সাদুন হামাদকে নগদ ও চেকের মাধ্যমে দুই লাখ কুয়েতি দিনার বা পাঁচ কোটি ৫১ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন পাপুল।
এর মধ্যে হামাদের কুয়েত সিটির দক্ষিণ সুরা এলাকার বাসায় নগদ ৫০ হাজার দিনার বা প্রায় এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা দেন পাপুল।
এছাড়া সিরিয়ার ঐ মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে চেকের মাধ্যমে হামাদের কাছে কয়েক দফায় দেড় লাখ দিনার বা প্রায় চার কোটি ১৩ লাখ টাকা পৌঁছে দেন। পাপুল স্বীকার করেছেন, বিনা বাধায় তার প্রতিষ্ঠানের লেনদেন সম্পন্ন করার জন্য কুয়েতের এই এমপিকে ঘুষ দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে এমপি সালাহ খুরশেদকে তিন লাখ ৭০ হাজার দিনার বা ১০ কোটি ২১ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন পাপুল। বেশ কয়েক ধাপে এই অর্থ তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর বিনিময়ে কুয়েতে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়ার সুযোগ পান তিনি।
কুয়েতের সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে পাপুলের প্রতিষ্ঠান মারাফিয়া কুয়েতিয়া। ঐ প্রতিষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। খবরে বলা হয়েছে, গোপন তদন্তের মাধ্যমে জানা গেছে, এই কোম্পানির আড়ালে একটি সংঘবদ্ধ চক্র মানব পাচার করে আসছিল। বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনতে জনপ্রতি তারা সাড়ে ৬ লাখ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে।
অনেক বাংলাদেশি কুয়েতে আসার পর দেখেন তাদের চুক্তি ভুয়া ছিল এবং তাদের পাপুলের অন্য কোম্পানিতে জোরপূর্বক নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের দিয়ে দৈনিক বেশি সময় কাজ করালেও অতিরিক্ত মজুরি দেওয়া হয়নি। যারা এর বিরোধিতা করেছে তাদের মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দেওয়া হতো। এই মানব পাচার চালিয়ে যেতে কুয়েতের এমপিসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা মদত দিয়েছেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button