সারাদেশ

উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ দুর্গাপূজা এবারও বাগেরহাটে

আর মাত্র কয় দিন পরই শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ শারদীয় দুর্গাপূজা। মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা ও মাটির কাজ শেষ হয়েছে। চলছে শেষমুহূর্তের রং-তুলির নিপুণ কারুকার্য।

বাগেরহাটের হাকিমপুর শিকদার বাড়িতে ৮০১টি প্রতিমা তৈরির মাধ্যমে এবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ শারদীয় দুর্গাপূজা। ইতিমধ্যে প্রতিমা তৈরি সম্পন্ন হয়েছে।

আগামী ৪ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার বোধন। দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে চড়ে মর্তে আগমন করবেন।

৬ দিনব্যাপী ধর্মীয় এই অনুষ্ঠানে থাকছে বৈচিত্র্যময় নানা আয়োজন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এই আনন্দ আয়োজনে শামিল হন বলে দুর্গাপূজাকে বলা হয় সার্বজনীন শারদীয়া দুর্গাপূজা। ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে মণ্ডপে মণ্ডপে শোনা যাচ্ছে মা আনন্দময়ীর আগমনী প্রস্তুতি।

শিকদার বাড়ির পূজায় সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর আর কলিযুগে মর্তে অবতীর্ণ হওয়া ৮০১টি অবতার স্থাপনের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।

২০১১ সালে বৃহৎ এই পূজা সর্বপ্রথম ২৫১টি প্রতিমা তৈরির মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু করেন দুলাল কৃষ্ণ শিকদার। পর্যায়ক্রমে তা বেড়ে আজ ৮০১টি প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে সর্বশ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছে।

দীর্ঘ ৬ মাস অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ১৫ জন শিল্পী দিন-রাত পরিশ্রম করে দক্ষতায় গড়ে তুলেছেন এমন সব তথ্যবহুল প্রতিমা।

সরেজমিন শিকদার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুবিশাল মণ্ডপে থাকছে নান্দনিক কারুশিল্পীদের তৈরি দুর্গা প্রতিমা। মূল বেদীর সামনে দীর্ঘ সারিতে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন অবতারদের প্রতিমা।

সেখানে বিশ্বমিত্রের সঙ্গে শ্রীরাম-লব, তাড়কা-সংহার, মায়ার চক্র দ্বারা হাতির মস্তক কর্তন, শ্রী-কৃষ্ণ কংশের দুষ্টু অনুচরকে বধ, শ্রী-কৃষ্ণ আট সখিদের নিয়ে হলিখেলা, শ্রী-কৃষ্ণ আট সখিদের নিয়ে নৌকা বিলাস, ক্ষিরোদ সাগরের ওপর নারায়ণের অনন্ত শয্যা, অহলা উদ্ধার, রঙ্গভূমিতে দুই রাজকুমার, ধনুক ভঙ্গ, চার কুমারের বিবাহ, পিতার বাক্য পালন, মাঝির ভাগ্য ও চিত্রকূটের সভায় শোভা, মনু-শতরুপাকে বরদান, দেবতাদের প্রার্থনা, দশরথের ভাগ্য, ধনু বিদ্যার অভ্যাস। এ ছাড়াও বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানকে আরও শ্রীবৃদ্ধির জন্য মূল মঞ্চের বাইরে পুকুরের মধ্যে বিশাল আকৃতির বাহুবলীর নৌকার মধ্যে অষ্টসখিদের প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। রাতে আলোকসজ্জায় এক নয়াভিরাম দৃশ্য দেখতে পারবেন আগত দর্শনার্থীরা।

খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার হাতিয়ারডাঙ্গা গ্রামের বিজয় কৃষ্ণ বাছাড় সুনিপুণ কারুকার্যে গড়ে তুলেছেন এমন সব নান্দনিক প্রতিমা।

৪ বছর ধরে তিনি শিকদার বাড়ি প্রতিমা তৈরি কাজ করে আসছেন বিজয় কৃষ্ণ বাছাড়। এ বছর ৮০১টি তথ্যবহুল বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরি করতে পেরে তিনি ধন্য।

দুলাল কৃষ্ণ শিকদার সর্বপ্রথম বাগেরহাটের শিকদার বাড়িতে ২৫১টি প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু করেন। প্রতিবছর প্রতিমা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ৯ বছরে এসে দাঁড়িয়েছে ৮০১টি প্রতিমা।

ব্যয়বহুল এই আয়োজনে স্থান করে নিয়েছে উপমহাদেশে সর্ববৃহৎ শারদীয় দুর্গাপূজা হিসেবে।

দুলাল কৃষ্ণ সম্প্রতি মারা যাওয়ায় মন্দিরের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতা করছেন তার ছেলে শিল্পপতি লিটন শিকদার। তিনি জানান, বাবার স্বপ্ন ও ধর্মীয় এই পূজা সবার সহযোগিতায় চলমান থাকবে। প্রতি বছর দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে ভিন্ন ভিন্ন চমক।

সর্ববৃহৎ এই পূজা উপলক্ষে নিরাপত্তার বিষয়ে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় মোবাইল ফোনে জানান, ধর্মীয় এই বৃহৎ পূজায় আমরা ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপনের জন্য এলাকায় আইনশৃংখলা বাহিনী তৎপর থাকবে।

নিরাপত্তার স্বার্থে সার্বক্ষণিক সমস্ত এলাকায় মনিটরিং করা হবে বলে তিনি জানান।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button