বিজেপিকে রুখতে মমতার অস্ত্র একুশে ফেব্রুয়ারি আর বাঙালিয়ানা
পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছে ১৮টি লোকসভা আসন হারানোর পরে গঙ্গা-পদ্মা দিয়ে অনেক ঝামেলাই হয়েছে। মমতা ব্যানার্জি ভোটের পরে যেভাবে রেগে যেতেন আর বেফাঁস মন্তব্য করতেন, তেমনটা আর হচ্ছে না। নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহর সাথে গত সপ্তাহে দিল্লিতে সাক্ষাতও করে এসেছেন।
তাহলে মমতা করছেন কী? যেহেতু পশ্চিমবঙ্গকে বিজেপি ২০২১ এর নির্বাচনের পাখির চোখ করেছে, তাই অনেকের প্রশ্ন মমতার পরিকল্পনা কী?
গত কয়েকদিন নিজের বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কাজে মমতা কিছুটা হলেও আভাস দিয়েছেন যে উনি কী ভাবছেন বা কী করতে চলেছেন। আর সেটা হলো মানুষের মধ্যে বাঙালি সত্ত্বা জাগিয়ে তুলে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
বিভিন্ন জায়গায় মমতা বলছেন, এনআরসি বা নাগরিকপঞ্জি কোনভাবেই পশ্চিমবঙ্গে হবে না। আর এই এনআরসি বিরোধিতাই ওনার বিজেপি বিরোধী রাজনীতির প্রধান অস্ত্র হতে চলেছে।
বিজেপি নেতারা বারবার বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবে আর দুই কোটি মানুষকে বহিরাগত হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। তাতে তৈরি হয়েছে ভয়ের এক আবহ। ইতোমধ্যে কমপক্ষে ৪ জন আত্মহত্যা করেছেন, আবার ৪ জন মারা গেছেন হার্টঅ্যাটাকে।
এই ঘটনায় মমতা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ আর এই মৃত্যুর জন্য উনি দায়ী করেছেন বিজেপিকে। ‘বিজেপি ভয় দেখাচ্ছে আর তাই মানুষ মারা যাচ্ছেন। আমি বলতে চাই পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হবে না, কোনো বাঙালিকে কেউ তাড়াতে পারবে না’, বলেছেন মমতা। এর অর্থ, বিজেপি যখন বাংলায় ভয়ের এক আবহ তৈরি করতে চলেছে, মমতা সব বাঙালিদের অভয় দিচ্ছেন যে উনি থাকতে কেউ বাঙালিদের ওপর কেউ আঘাত আনতে পারবে না।
এনআরসি নিয়ে এই বিতর্কের মাঝে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর ‘হিন্দি ভাষা ভারতের সবাইকে গ্রহণ করতে হবে’ মন্তব্যটি মমতার হাতে তুলে দিয়েছে আরেক অস্ত্র। মমতা ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান বীরসিংহ গ্রামে গিয়ে বলেছেন, ‘মাতৃভাষা আমাদের গর্বের ব্যাপার। আমরা সব ভাষাকে সম্মান করি, কিন্তু আমরা এটা ভুলব না যে আমরা বাঙালি।’
ভাষা নিয়ে আন্দোলন করার হুমকি দিয়েছেন মমতা। যার অর্থ হলো, বাঙালিদের উনি মনে করাতে চাইছেন ভাষা আন্দোলনের কথা। একুশে ফেব্রুয়ারির কথা বলেছেন উনি। আর তার সাথে মনে করাচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ এবং বিদ্যাসাগরকে।
যদিও আগামী নির্বাচন ২০২১ এর মাঝামাঝি, তবুও অনেকের ধারণা, ওই ভোটযুদ্ধে মমতার প্রধান অস্ত্র হতে চলেছে বাঙালিয়ানা। বারবার মানুষকে বোঝাতে চাইছেন, বিজেপি আসলে বাঙালি বিরোধী এবং বাংলার সংস্কৃতির সাথে এই গেরুয়া দলের কোনো সম্পর্ক নেই। ভোটযুদ্ধের কৌশল হিসেবে বাঙালিয়ানা নিয়ে এগোতে চাইছেন মমতা। তবে দেখার বিষয় এই পরিকল্পনা সফল হয় কিনা।