ঢাকায় একাধিক টর্চার গেল গড়ে তোলেন আলোচিত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। র্যাবের অভিযানের সময়ই রাজধানীর কমলাপুরে খালেদের একটি টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া যায়। পর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার করতে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া শুধু কমলাপুরেই নয়, মতিঝিল, ফকিরাপুল, খিলগাঁও, রামপুরা ও শান্তিনগরে টর্চার সেল তৈরি করেছিলেন।
কেউ কথা না শুনলেই তার ওপর নেমে আসত খড়গ। তাকে তুলে নিয়ে ওই টর্চার সেলে নিয়ে গিয়ে দেয়া হতো ইলেকট্রনিক শক। খালেদের টর্চার সেলে অকথ্য নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকেই পঙ্গু হয়েছেন। বাদ যাননি ছাত্রদল-যুবলীগের নেতাকর্মীরাও।
শান্তিনগরের হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদ ওই কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য। কলেজের অনেক শিক্ষার্থী খালেদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কলেজের একটি কক্ষে ছিল খালেদের গোপন টর্চার সেল। সেখানে রাখা হতো ধারালো অস্ত্র ও ইলেকট্রিক শক মেশিন। খালেদ কলেজে দলবল নিয়ে এসে অস্ত্র হাতে মহড়া দিত। তার ভয়ে কলেজের শিক্ষক, গভর্নিং বডির সদ্যসরা তটস্থ থাকতেন।
কলেজের সাবেক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা বলেছেন, খালেদ কলেজে এসে সবাইকে গালাগাল করত। তার কথা না শুনলে অস্ত্রের ভয় দেখাত। তার নির্যাতনের শিকার একাধিক শিক্ষার্থী পঙ্গু হয়েছেন। অনেকেই বিদেশে চলে গেছেন। খালেদ বলতেন, এখানে আমি ছাড়া কেউ কোনো কাজ করতে পারবে না।
হাবিবুল্লাহ বাহার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল জব্বার মিয়া বলেন, ক’দিন আগে আমি অধ্যক্ষ হয়েছি। খালেদ গভর্নিং বডির সদস্য। এ কারণে কলেজে আসত। তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ১৮ সেপ্টেম্বর কমলাপুর রেলস্টেশনের উল্টো দিকে ইস্টার্ন কমলাপুর টাওয়ারে খালেদের টর্চার সেলের সন্ধান পায় র্যাব। টর্চার সেল থেকে ইলেকট্রিক শক দেয়ার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, গায়ের চামড়া জ্বালাপোড়া করে এমন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, বিপুল পরিমাণ লাঠি ও হকিস্টিক উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ১৯০ পিস ইয়াবা, ৫ বোতল মদ, ৭০০ গ্রাম সিসা, সিসা খাওয়ার দেড় কেজি কয়লা উদ্ধার করা হয়।
এদিকে র্যাব সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ টর্চার সেল সম্পর্কে জানিয়েছে, কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে বা কারও সঙ্গে তার শত্রুতা তৈরি হয়েছে এমন ব্যক্তিকে টর্চার সেলে ধরে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে আটকে রাখত তার সহযোগীরা। এরপর তার ওপর চলত অমানুষিক নির্যাতন।
১৮ সেপ্টেম্বর খালেদকে বাসা থেকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করে র্যাব। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এখন দুই মামলায় রিমান্ডে আছেন।