গনোরিয়া কি? এর লক্ষন, সুপ্তিকাল, প্রতিকার:
গনোরিয়াঃ গনোরিয়া হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রামিত একটি যৌন রোগ৷ সাধারণত মূত্রনালি, পায়ুপথ, মুখগহ্বর এবং চোখ গনোরিয়ার জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে৷ এই রোগ সাধারণত যৌনমিলন থেকে ছড়ায় এবং পুরুষ ও মহিলা উভয়েই আক্রান্ত হতে পারে৷
লক্ষনঃ
★ পুরুষের ক্ষেত্রেঃ
• মূত্রনালিতে সংক্রমণ।
• মূত্রনালি হতে পুঁজের মতো বের হয়।
• প্রস্রাব করতে কষ্ট হয়, জ্বালাপোড়া করে এবং প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷
• হাঁটু বা অন্যান্য গিঁটে ব্যথা করে, ফুলে ওঠে।
• প্রস্রাব করতে কষ্ট হয় এবং এমনকি জটিল অবস্থায় প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷
• পুরুষত্বহীন হয়ে যেতে পারে৷
★ মেয়েদের ক্ষেত্রেঃ
• অনেকসময় মহিলাদের কোনও লক্ষণ নাও দেখা যেতে পারে৷
• যোনিপথ আক্রান্ত হতে পারে৷
• যোনিপথে এবং মূত্রনালিতে জ্বালা-পোড়া করে৷
• পুঁজ সদৃশ হলুদ স্রাব বের হয়৷
• তলপেটে ব্যথা হতে পারে৷
• ঋতুস্রাব সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিতে পারে৷
• বন্ধ্যাত্ব বরন করতে পারে।
★ সুপ্তিকাল : রোগাক্রান্ত সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে দৈহিক মিলনের পর ৩ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এ রোগের প্রকাশ ঘটে। রোগের আক্রমণস্থল পুরুষের ক্ষেত্রে মূত্রপথের সম্মুখ অংশে জীবাণু সংক্রমণ শুরু করে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে তা প্রস্টেটগ্রন্থি এমনকি মূত্রথলি, উপান্ত বা শুক্রাশয় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
পুরুষের যৌনাঙ্গ বিভিন্ন গ্রন্থি প্রস্টেটগ্রন্থি, শুক্রনালি, এপিডাইডাইমিস আক্রমণ করে তীব্র প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর দু-এক দিন পর প্রচুর পরিমাণ ঘন সাদা বা সামান্য হলদে রঙের পুঁজ পড়তে শুরু করে। প্রস্রাব করতে তীব্র জ্বালা অনুভূত হয়। পুরুষাঙ্গেও পুঁজজাতীয় পদার্থ লেগে থাকতে দেখা যায়। এ রোগে পুরুষাঙ্গে ও গায়ে কোনো রকম ঘা বা ক্ষত লক্ষ্য করা যায় না। হাত দিয়ে ধরলে হালকা ব্যথা অনুভূত হয়। কিছুদিন পর রোগের উপসর্গ আরো কমে যায়। তার মানে কিন্তু রোগটি ভালো হওয়া নয় বরং রোগটি দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিকরূপ লাভ করে বলে ধরে নিতে হবে।
শুক্রনালি বন্ধ হয়ে যেতে পারে, উপশুক্রাশয় (এপিডাইডাইমিস) নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে যৌনরসে বীর্যকোষ থাকে না, যার ফলে ওই ব্যক্তি সন্তানের বাবা হতে পারেন না। রোগটি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার ফলে যার সঙ্গে দৈহিক মেলামেশা করবে সেই এ রোগে আক্রান্ত হবে। এ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় প্রস্টেটগ্রন্থির প্রদাহ হতে পারে। ফলে প্রস্রাব আটকে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়।
★ রোগ নির্নয়ঃ
এক্ষেত্রে রোগীর বিস্তারিত ইতিহাস (History) শুনতে হবে। সে এরই মধ্যে কোনো যৌন সম্পর্ক (Sex act) স্থাপন করেছিল কি-না প্রশ্ন করে ভালো করে উত্তর পেতে হবে। সম্পর্ক থাকলে তা কতদিন আগে এবং কত জনের সঙ্গে। এসব জেনে নিতে হবে। তারপর পরীক্ষা করতে হবে।
যদি স্বল্পস্থায়ী আক্রমণ (Acute) হয়ে থাকে তাহলে পুরুষের ক্ষেত্রে প্রস্রাবের রাস্তা (Urethra) থেকে নিঃসরিত পুঁজ বা পদার্থ (Discharge) এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে মূত্রনালি (Urethra) ও জরায়ু (Uterus) নিঃসরিত পদার্থ পরীক্ষা করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি (Chronic) হলে প্রস্টেটগ্রন্থি ম্যাসাজের পর নিঃসরিত পদার্থ (Prostate fluid) পরীক্ষা করতে হবে কিংবা সকালের প্রথম ফোঁটা প্রস্রাবও (First drop of urine) পরীক্ষা করা যেতে পারে। মহিলাদের ক্ষেত্রে জরায়ু নিঃসরিত বস্তু পরীক্ষা করতে হবে। এ ছাড়াও কালচার ও সেনসিটিভিটি পরীক্ষা করা যেতে পারে।
★ গনোরিয়া কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়:
• যে কোন সংক্রমণ প্রতিরোধের (Protect infection) সবচেয়ে সুনিশ্চিত উপায় হল যৌনসংসর্গ এড়িয়ে (Avoid illegal sex) যাওয়া অথবা পারস্পরিক বোঝাপড়ায় যৌনসংসর্গের জন্য একটিমাত্র সঙ্গী বেছে (Select valid sex partner) নেওয়া, যার কোন যৌনসংক্রমণ নেই৷ মোট কথা, ধর্মিও আইন মেনে চললেই গনোরিয়া প্রতিরোধ করা যাবে সম্বভ।
• যৌনমিলনে কনডম ব্যবহার করতে হবে৷
• মহিলাদের মাসিকের সময় পরিষ্কার কাপড় এবং প্যাড ব্যবহার করতে হবে৷
• স্বামী বা স্ত্রী একজন অসুস্থ হলে দুজনেরই চিকিৎসা করাতে হবে৷
• স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনও নারী বা পুরুষের সঙ্গে দৈহিক মিলন অনুচিত৷
• যৌনমিলনে স্বামী-স্ত্রীর বিশ্বস্ততা জরুরি৷