জাতীয়

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

তৃতীয় টার্মিনালের ৩৫% কাজ শেষ

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের প্রায় ৩৫ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে, যা প্রত্যাশিত লক্ষ্যের কিছুটা বেশি। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই টার্মিনালটি চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিমানবন্দরের সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এখানে মিলবে।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরে বর্তমানে বছরে ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া হয়।

তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শেষ হলে এই বিমানবন্দরে দুই কোটির বেশি যাত্রীকে সেবা দেওয়া যাবে।

 

kalerkanthoবেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেছেন, ‘সুইজারল্যান্ড, লন্ডনের হিথরো কিংবা থাইল্যান্ডের বিমানবন্দরে যাত্রীরা যে মানের সেবা পান, আমাদের থার্ড টার্মিনালেও একই মানের সেবা পাবেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন করা সম্ভব হবে। ’

বেবিচক সূত্র জানায়, বর্তমান দুই টার্মিনালের দ্বিগুণের বেশি জায়গা দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। এই টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) করা হচ্ছে। টার্মিনালে যাত্রীসেবায় থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এর নকশা করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। সিঙ্গাপুরের চ্যাংগি এয়ারপোর্টের টার্মিনাল-৩, চীনের গুয়াংজুর এটিসি টাওয়ার ভবন, ভারতের আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের নকশা করেছেন এই স্থপতি।

২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। এই কাজ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা।

জানা গেছে, অত্যাধুনিক এই টার্মিনাল ভবনে থাকবে ১০টি সেলফ চেক-ইন কিওস্ক (মেশিন), ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল বা ই-গেট। এতে যাত্রীরা ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে না গিয়ে সরাসরি নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সারতে পারবেন। তবে কেউ না চাইলে, তাদের জন্য ৫৬টি বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে। অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রীদের জন্য পাঁচটি ই-গেট থাকবে। পাশাপাশি থাকবে ৫৪টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন কাউন্টার।

বেবিচকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, টার্মিনালে ৩৭টি বিমান অ্যাপ্রোনের পাশাপাশি থাকবে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১টি বডি স্ক্যানার ও ১৬টি লাগেজ বেল্ট। থাকবে স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন সিস্টেম। লাগানো হবে বেশ কয়েকটি স্ট্রেইট এসকেলেটর। যারা হাঁটতে পারবেন না, তাঁদের জন্য থাকবে এই ব্যবস্থা। এ ছাড়া থাকবে বেবি কেয়ার-চিলড্রেন প্লে এরিয়া, ফার্স্ট-এইড, থাকবে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকসহ হেলথ ইন্সপেকশন সুবিধা, মুভি লাউঞ্জ, ফুড কোর্ট, ওয়াই-ফাই সুবিধা, এমনকি যাত্রীদের কেনাকাটার জন্য তৈরি হচ্ছে ১৪টি স্পটে ডিউটি ফ্রি শপ।

তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে মেট্রো রেল। তৈরি হচ্ছে পৃথক একটি স্টেশন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে বের না হয়েই মেট্রো রেলে করে নিজেদের গন্তব্যে যেতে পারবেন। এতে যানজট ভোগান্তি কমবে যাত্রীদের।

গতকাল টার্মিনালের নির্মাণকাজ পরিদর্শনে যান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। এ সময় তিনি বলেন, ‘করোনার মধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। কাজ শেষ হলে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। ’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘৮ এপ্রিল পর্যন্ত তৃতীয় টার্মিনালের ৩২.৭০ শতাংশ কাজ হওয়ার কথা ছিল। বাস্তবে শেষ হয়েছে ৩৪.৬ শতাংশ। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে। ’

তৃতীয় টার্মিনালের কাজের সঙ্গে টার্মিনাল প্রবেশের টানেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে। তখন এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে টার্মিনালকে যুক্ত করা হবে। ’

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিজুর রহমান বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ সময়সূচি অনুযায়ী হচ্ছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ একটু বিলম্বে শুরু হওয়ায় শুধু কাজে দেরি হচ্ছে। ’

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘চলতি মাসের মধ্যেই এই টার্মিনালের ট্যাক্সি ওয়ের নির্মাণকাজ শেষ হবে। বিদ্যমান রানওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। ফলে কোনো বিমানকে অবতরণের পর অপেক্ষায় থাকতে হবে না। ’

২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক।

তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিটসুবিশি, ফুজিতা ও কোরিয়ার স্যামসাংয়ের সমন্বয়ে গঠিত এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম। প্রকল্পে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে বাংলাদেশ সরকার এবং বাকি টাকা অর্থায়ন করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। এতে খরচ হবে প্রায় ২১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button