বিনোদন

দেনার দায়ে চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ‘আনন্দ-ছন্দ’ সিনেমা হল

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ফার্মগেটে বহুকাল ধরে ‘ট্রেডমার্ক’ হয়ে আছে আনন্দ সিনেমা হল, সঙ্গে আছে ‘ছন্দ’ নামে আরেকটি সিনেমা হল। অথচ দেনার দায়ে রাজধানীর প্রেক্ষাগৃহ দুটি প্রায় বন্ধ হওয়ার অবস্থা।

এমনটাই জানিয়েছেন আনন্দ, ছন্দ সিনেমা হল দুটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুদ্দিন মোহাম্মদ।

সিনেমা ব্যবসায় মন্দা বিরাজ করায় লোকসান গুণতে গুণতে দেনার দায়ে নাজেহাল অবস্থা হল দুটির। এমনটা জানিয়ে শামসুদ্দিন জানান, করোনা সংক্রমণের পর হল বন্ধ থাকলেও দেনা কমেনি, বরং বেড়ে যাচ্ছে। লোকসানের মুখে অর্ধ কোটি টাকা দেনায় জর্জরিত ‘আনন্দ-ছন্দ’ সিনেমা হল। তাই যে কোনোদিন চিরতরে বন্ধ হতে যেতে পারে ১৬১৪টি আসনের হল দুটি।

এতে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না বলে জানালেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামসুদ্দিন মোহাম্মদ। ২০২০ সালের ১৪ মার্চ তিনি আনন্দ ছন্দ সিনেমা হলের পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

তার কথায়, ‘দায়িত্ব নেয়ার পর হল দুটির সংস্কার করিয়ে আমূল পরিবর্তন আনেন। কিন্তু তখনই বাধা হয়ে দাঁড়ায় করোনা।

আনন্দ, ছন্দ সিনেমা হলের দায়িত্বে থাকা শামসুদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, “দায়িত্ব নেয়ার কদিন পরেই সিনেমা হল বন্ধ রাখতে হয়েছে। কিন্তু হলের প্রজেকশনসহ অন্যান্য জিনিস চালু রাখার জন্য সপ্তাহে দুদিন নিজেরা চালু করেছি। যাতে নষ্ট না হয়। হলের মধ্যে পরিষ্কার পরিছন্ন রেখেছি।”

তিনি বলেন, “করোনার মধ্যে ‘বিশ্বসুন্দরী’ ও ‘তুমি আছো তুমি নেই’ দুটি সিনেমা থেকে কিছুটা সেল বেশি পেলেও আবার সবকিছু কমেছে করোনার সেকেন্ড ওয়েভে। এর মধ্যেও স্থানীয় থানা-পুলিশি ঝামেলাতেও পড়তে হয়েছে একাধিকবার।

শামসুদ্দিন মোহাম্মদ জানান, দুটি হল মিলিয়ে দৈনিক খরচ হয় ২৪,৯৫১ টাকা। যা মাসে গিয়ে দাঁড়ায় সাত লাখ ৪৮ হাজার ৫৩০ টাকা। প্রতিমাসে এই টাকা তুলতে পারলে সিনেমা হল ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবো। শুরুতে স্টাফ ছিল ৪০ জন। কিন্তু বর্তমানে স্টাফ রয়েছে ৩২ জন। গতবছর থেকে তাদের ২৪ লাখ টাকা বেতন বাকি।

আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল, ট্যাক্স, হোল্ডিং ট্যাক্স, পৌরকর সবমিলিয়ে কাগজপত্র অনুযায়ী দেনা হয়েছে ৫৫ লাখ টাকা। গত বছর থেকে এই এপ্রিল মাস পর্যন্ত। দেনার দায়, তার ওপর বর্তমানে সিনেমার যে অবস্থা অচিরেই সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে আনন্দ ও ছন্দ সিনেমা হল চিরতরে বন্ধ করার।”

তিনি বলেন, “তবে আমাদের ফান্ডে কিছু অর্থ জমা রয়েছে কোর্ট অনুমতি দিলে সেখান থেকে হয়তো কিছু অর্থ পাব দেনা পরিশোধের জন্য। নইলে এই দেনার দায়ে চিরতরে হল দুটি বন্ধ করে দেয়া ছাড়া আর উপায় নেই।”

এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে। যার মেয়াদ শেষ হবে ২১ এপ্রিল রাতে। কিন্তু সেই মেয়াদকাল শেষ হওয়ার আগেই সোমবার মন্ত্রী পরিষদ চলমান লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বাড়ানোর কথা জানিয়েছে। এ অবস্থায় ঈদকে সামনে রেখে সিনেমা হলগুলো চাঙা হওয়ার যে সম্ভাবনা ছিলো, করোনার বর্তমান ভয়াবহ অবস্থার কারণে খুব একটা আশাবাদী নন সিনেমা সংশ্লিষ্ট কেউই।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button