জাতীয়লিড নিউজশিক্ষাঙ্গন

‘সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িক শক্তি’ রুখতে বুয়েটে গণশপথ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ‘সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে’ রুখে দেওয়ার প্রতিজ্ঞায় শপথ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরা। বুধবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে বুয়েট কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা। শপথের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঠ পর্যায়ের আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান সায়েম এই ঘোষণা দেন। বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের (ডিএসডব্লিউ) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. আবদুল বাসিত, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীরা শপথ পাঠ করেন। বুয়েটের ১৭ তম ব্যাচের ছাত্রী রাফিয়া রিজওয়ানা শপথ পাঠ করান।

এসময় বিভিন্ন বিভাগের ডিন এবং অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। তবে তারা শপথ পাঠে অংশ নেননি। শপথে বলা হয়, ‘আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের কল্যাণ ও নিরাপত্তার নিমিত্তে আমার ওপর অর্পিত ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক নৈতিক ও মানবিক সকল প্রকার দায়িত্ব সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবো। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় আমার জ্ঞাতসারে হওয়া প্রত্যেক অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমি সর্বদা সোচ্চার থাকবো।’

‘আমি আরও প্রতিজ্ঞা করছি- এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থানকে আমরা সম্মিলিতভাবে রুখে দেবো। নৈতিকতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সব ধরনের বৈষম্যমূলক অপসংস্কৃতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার আমরা সকলে উৎপাটিত করবো। এই আঙিনায় যেন আর কোনো নিষ্পাপ প্রাণ ঝরে না যায়, আর কোনো নিরপরাধ যেন অত্যাচারের শিকার না হয়, তা আমরা সবাই মিলে নিশ্চিত করবো’

শপথ পাঠের আগে আবরার ফাহাদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। প্রসঙ্গত, আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বিচারসহ ১০ দফা দাবিতে টানা সাত দিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল বুয়েটের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। মাঝে ভর্তি পরীক্ষার জন্য কর্মসূচি শিথিল করা হয়। বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। গত ৬ অক্টোবর (রবিবার) মধ্যরাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার মাঝামাঝি সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

একাধিক শিক্ষার্থী ও এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে হামলাকারীদের নির্মম নির্যাতনের মুখে আবরার দুবার বমি করেন। সঙ্গে প্রস্রাবও করেন। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বুয়েট ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ ২০ জনকে আটক করে পুলিশ। আবরার হত্যাকাণ্ডে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় মামলা করেছেন তার বাবা বরকত উল্লাহ। তবে এজাহারের বাইরে বেশ কয়েকজন এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বুয়েট শাখার ১২ নেতাকর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে ছাত্রলীগ। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফেনী নদীর পানি বণ্টন ও বন্দর ব্যবহারসহ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তির সমালোচনা করে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় শিবির সন্দেহে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button