মিয়ানমারের পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় দেশের আমদানিকারকরা মিয়ানমারের পেঁয়াজের দিকে ঝুঁকেন। তবে মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে ভালোই বিপাকে পড়েছেন তারা। সেখানকার রপ্তানিকারকরা যাচ্ছেতাইভাবে পেঁয়াজ পাঠানোর কারণে আসার পথেই অধিকাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। পেঁয়াজের গুণগত মান নষ্ট হওয়ার ফলে আমদানিকারকদেরও লোকসান গুনতে হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি খরচ পড়েছে ৪২ টাকা। অথচ গতকাল চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বাজারে সেই পেঁয়াজের অধিকাংশই বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ঘুরে দেখা গেছে, দোকান-গুদামের প্রবেশমুখে নষ্ট পেঁয়াজের বস্তা ফেলে রেখেছে ব্যবসায়ীরা। আবার কয়েকটি দোকানে বস্তা থেকে শ্রমিকদের ভালো পেঁয়াজগুলো বাছাই করে আলাদা করতেও দেখা যায়। শ্রমিকরা জানান, কিছু ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী ভ্যান গাড়ি নিয়ে এসব পেঁয়াজ কিনতে আসেন।
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজের আমদানি চাপ বাড়ার কারণে বড় কাঠের এবং লোহার বোটে করে প্রচুর পেঁয়াজের বস্তা পাঠায় মিয়ানমারের রপ্তানিকারকরা। কিন্তু গাদাগাদি করে বোটে লোড করার কারণে বস্তায় পর্যাপ্ত বাতাস প্রবেশ করেনি। এছাড়া বোটের নিচের অংশে পানিতেও অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়।
কক্সবাজারের টেকনাফ স্থল বন্দরের আমদানিদারক এবং জারিফ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মনজুর মোরশেদ বলেন, মিয়ানমারের পেঁয়াজ প্রথমদিকে আকিয়াব বন্দর থেকে সরাসরি টেকনাফ বন্দরে আসতো। তবে সেই সময় চাহিদা কম থাকায় ছোট ছোট বোট কিংবা ট্রলারে করে এসব পেঁয়াজ আমদানি হতো। কিন্তু ভারত রপ্তানি বন্ধ দিলে হঠাৎ করে মিয়ানমারের পেঁয়াজের উপর চাপ বেড়ে যায়। তার কারণে মিয়ানমারের রপ্তানিকারকরা বড় বোটে একসাথে ৩-৪ হাজার বস্তা পেঁয়াজ লোড করে পাঠিয়ে দেয়। এমনিতেই মিয়ানমারের আকিয়াব থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পেঁয়াজ আসতে সময় লাগে ১০-১২ দিন। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ১৫দিনও লেগেছে। তাই অধিকাংশ পেঁয়াজ আসার পথেই নষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি মিয়ানমারের রপ্তানিকারকদের জানানোর পরে তারা প্রথমে পেঁয়াজ সড়ক পথে আকিয়াব থেকে মংডু পর্যন্ত আনেন। পরে সেখান থেকে ছোট ট্রলারে করে টেকনাফ বন্দরে পাঠানো শুরু করে। ছোট ট্রলারে ৫০০ থেকে ১ হাজার বস্তা পর্যন্ত পেঁয়াজ পাঠানো হচ্ছিলো। তবে এক্ষেত্রে মিয়ানমারের ব্যবসায়ীরা বুকিং রেট কেজিতে ৬ টাকা বাড়িয়ে দেয়।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে শুধুমাত্র টেকনাফ পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি খরচ পড়ছে ৪৮ টাকা। সেখান থেকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পৌঁছাতে আরো ৫ টাকা যোগ হয়। কিন্তু আগের আমদানি করা পেঁয়াজ কেজি ৪২ টাকা খরচ পড়া স্বত্বেও মান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমদের বিক্রি করতে হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। তবে ভালো মানের পেঁয়াজ অবশ্য ৫০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন আড়তদার জানান, অনেকে বলেন, মিয়ানমারের পেঁয়াজ অবৈধভাবে মজুদের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। আসলে পেঁয়াজ কখনোই গুদামজাত করে বেশিদিন রাখা যায় না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার থেকে যেসব পেঁয়াজ আসছে, সেগুলো উল্টো আমদানি খরচের চেয়ে ৫ টাকা কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বর্তমানে পাইাকারিতে ভালো মানের মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অথচ খাতুনগঞ্জ পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের খরচ পড়ছে ৫৩ টাকা। এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। অন্যদিকে মিশরের পেঁয়াজের বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। কারণ পেঁয়াজটির চাহিদা চট্টগ্রামে খুব বেশি নেই। মিশরের পেঁয়াজ আমদানিকারকরা ৫০ টাকা বিক্রির জন্য আড়তদারদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ওই দরে কোনো ক্রেতাই পণ্যটি কিনছেন না।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মিয়ানমার পচা পেঁয়াজ রপ্তানি করেনি। সমস্যা হয়েছে, যথাযথভাবে তারা না পাঠানোর কারণে আসার পথে বস্তাতে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। তাই এসব পেঁয়াজ এখন নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এমনও দেখা যায়, ৪০ কেজির বস্তার মধ্যে অর্ধেকই নষ্ট। তবে এখন যেসব পেঁয়াজ আসছে সেগুলোর মান ভালো।
উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় পাইকারিতে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৯৫ টাকা এবং মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে পরবর্তীতে প্রশাসন অভিযানে নামলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমে আসে। এছাড়া ব্যবসায়ীরা ধাপে ধাপে মিয়ানমার ছাড়াও মিশর থেকে হাজার হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করেন। ফলে পেঁয়াজের বাজারে মোটামুটি স্থিতিশীলতা তৈরি হয়।