অর্থনীতি

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সংসদে তোপের মুখে বাণিজ্যমন্ত্রী

নিত্যপণ্যসহ সব জিনিসের দামের ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে জাতীয় সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে একহাত নিলেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা (এমপি)।

গতকাল মঙ্গলবার সংসদে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির এমপিরা ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট নয় দাবি করে বাণিজ্যমন্ত্রীর ব্যবসায়ী পরিচিতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বাজারে আগুনদামের লাগাম ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগও ওঠে সংসদের আলোচনায়।

বিরোধী দলের এমপিদের নানা বাক্যবাণে পড়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘ব্যবসায়ী বলেই আমার অপরাধ।’

এর আগে বিদেশি ব্যবসায়ীদের নিয়ে দেশে যৌথ বাণিজ্য সংগঠন তৈরি ও বাণিজ্যিক সংগঠনে প্রশাসক বসানোর সুযোগ রেখে সংসদে ‘বাণিজ্য সংগঠন বিল-২০২২’ পাস হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা পাস হয় কণ্ঠভোটে।

বিলের ওপর আলোচনার সময় বিরোধী দলের একাধিক এমপি নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সরকার ও বাণিজ্যমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন।

বিএনপির সংরক্ষিত আসনের এমপি রুমিন ফারহানা বলেন, ‘তেলের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে হইচই হলো। ১৫ দিনে সিন্ডিকেট এক হাজার কোটি টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। সিন্ডিকেট হলো সরকার। সরকার আর সিন্ডিকেটের মধ্যে পার্থক্য নেই।’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের স্বার্থ রক্ষায় কঠোরভাবে বাজার নজরদারি করতে হবে। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সিন্ডিকেট দর বাড়াতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘বলা হয়, যুদ্ধের কারণে দাম বেড়েছে। যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, সেগুলোর দাম বাড়তে পারে। যেগুলো যুদ্ধের আগে আমদানি করা হয়েছে এবং যেগুলো দেশি পণ্য, সেগুলোর দাম কেন বাড়বে।’ প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দাবি জানান তিনি।

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এখন পুষ্টিমানের সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যমন্ত্রীকে আবার যুদ্ধ করতে হবে।’

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ‘গ্যাস সংকটে ঢাকায় হাহাকার চলছে। গ্যাসের দাম, তেলের দাম- সব বাড়ানো হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগ সরকার নিয়েছে। কিন্তু সেখানে স্বচ্ছতার অভাব আছে।’ তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা জনপ্রতিনিধি হয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ক্ষমতার বলয়ে থেকে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। তারেক রহমান লন্ডন থেকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করছেন, বিএনপির কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে- এসব অপ্রাসঙ্গিক কথা না বলে সরকারকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।’

গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী সফল ব্যবসায়ী। মন্ত্রী হিসেবে তিনি কতটুকু সফল, সেটা বলতে না পারলেও বাজারে গেলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সেটি ভালোভাবে জানা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার দাবি করে, তারা ব্যবসাবান্ধব। যে সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী একজন ব্যবসায়ী, সেই সরকার জনবান্ধব নয়; ব্যবসাবান্ধব হওয়াই স্বাভাবিক।’
এসব বক্তব্যের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি ব্যবসায়ী এটি বেশি করে বলা হয়। তিনি ব্যবসা করছেন ৪০ বছর ধরে আর রাজনীতি করছেন গত ৫৬ বছর ধরে। তিনি প্রশ্ন রাখেন ব্যবসায়ী হওয়া কি তার অপরাধ?

টিপু মুনশি বলেন, যুদ্ধের কারণে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে, এটা তিনি কখনো বলেননি। প্রতি মাসে তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়। এখন বিশ্ব বাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে।

তিনি বলেন, সরকার কোথাও ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে না। ব্যবসায়ীদের সহায়তা করে। যে কেউ চাইলে তেল আমদানি করতে পারে। সিন্ডিকেট বলে যাদের কথা বলা হচ্ছে তারা কেউ রাজনীতি করেন না, তারা কেউ এমপি নন। সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিয়ত ফলোআপ করছেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button