অপরাধ প্রবণতার অন্যতম কারণ বেকারত্ব বা কর্মহীনতা
সারা বিশ্বজুড়ে চলছে কোভিড-১৯ এর অভিঘাত।গত দেড় বছরে কোভিডের অভিঘাতে তছনছ হয়ে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি। অনেক মানুষের কাজ গেছে। অনেক মানুষের আয় কমেছে। তবে সবচেয়ে বেশি কাজ গেছে তরুণ ও নারীদের। বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি ২৫ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার তথ্যানুসারে, ২০২০ সালে সারা বিশ্বে তরুণদের বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে ২৫-এর বেশি বয়সী মানুষের বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।কাজ হারানোর পাশাপাশি অনেক মানুষ নিষ্ক্রিয় বসে আছেন। সে জন্য অর্থনীতিবিদেরা এ নিষ্ক্রিয় ও বেকার মানুষের মধ্যে পার্থক্য করে থাকেন। যাঁরা এখন কাজে নেই, তবে কাজের খোঁজ করছেন, তাঁরা বেকার। অন্যদিকে যাঁরা সক্রিয়ভাবে কাজ খুঁজছেন না বা নিজের ব্যবসা চালু করার অপেক্ষায় আছেন, তাঁরা অর্থনৈতিক ভাবে নিষ্ক্রিয় হিসেবে বিবেচিত হন। কিন্ত বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ। এখানে জন্ম নিয়েছেন অনেক জ্ঞানী-গুণী। তারা দেশের সঙ্গে বিশ্বকেও করে গেছেন সমৃদ্ধ। এখনও এ মাটির সন্তানেরা পৃথিবীর দেশে দেশে অনেক দায়িত্বপূর্ণ কাজ, যুগান্তকারী গবেষণায় ব্যস্ত।কিন্তু সেই দেশের তরুণ প্রজন্মের খবর কী? কিছু অংশ বাদ দিলে দেশের তরুণ সমাজের একটা বড় অংশই আজ নানাভাবে সংকটে নিমজ্জিত। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জায়গায় তরুণরা পাচ্ছে না যথাযোগ্য মর্যাদা, কাজ ও মেধার যথার্থ সম্মান। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। এ দেশের কর্মসংস্থানেও তারুণ্যের ভূমিকা রয়েছে অসামান্য।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, তরুণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ভারতে ৩৫ কোটি ৬০ লাখ, চীনে ২৬ কোটি ৯০ লাখ, ইন্দোনেশিয়ায় ৬ কোটি ৭০ লাখ, যুক্তরাষ্ট্র ৬ কোটি ৫০ লাখ, পাকিস্তানে ৫ কোটি ৯০ লাখ এবং বাংলাদেশে রয়েছে ৪ কোটি ৭৬ লাখ। এই তরুণরাই বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে চলেছে।
ইতিহাস সৃষ্টি থেকে প্রতিটি স্তরে সেই তরুণ যুবকরাই জোগান দিয়েছিল।আজও বাংলাদেশের সব অভূতপূর্ব সৃষ্টিগুলোর জন্মই দেন তরুণরা। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশ গঠনেও তরুণদের ছিল ইতিবাচক ভূমিকা। কিন্তু বর্তমান তরুণ সমাজের বড় অংশই বেকার, অনিশ্চিত জীবনের পথে। যার কারণে অনেক তরুণ হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার পথেও হাঁটেন। আজ তরুণদের বড় একটি অংশ এ দেশের প্রতি মমত্ববোধ হারিয়ে ফেলেছে। যে কারণে আগের মতো স্বেচ্ছাশ্রম আর দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ তারুণ্য খুবই কম দেখা যায়। তারুণ্যের এই পশ্চাৎপদতার জন্য অনেকটা আমাদের দেশের অপরাজনীতিই দায়ী। তরুণদের রাজনীতি বিমুখতাও এ দেশের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে। বাংলাদেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা সবকিছুতেই বাংলাদেশের উন্নয়ন উল্লেখ করার মতো। কর্মক্ষম মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড আহরণে বাংলাদেশ বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই মাদকাসক্তি একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে, মাদকাসক্তের হার দিন দিন বাড়ছে। যুবসমাজের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন। মাদকাসক্তি এমন দুর্বার নেশা যাতে একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে তা পরিত্যাগ করা খুবই কঠিন। মাদকাসক্তি জাতীয় জীবনকে এক ভয়াবহ পরিণামের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা-মানসের জরিপ বলছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি মাদকাসক্ত রয়েছে। যার মধ্যে নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা ২০ লাখ। তাদের হিসেবে, ১০ বছর আগেও নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের মাদক গ্রহণের হার বৃদ্ধি সমাজের জন্য মহাবিপদ সংকেত। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, মাদক গ্রহণের ফলে নারীরা পুরুষের তুলনায় মানসিকভাবে বেশি বিষণ্ণ হয়ে পড়ে। নারীদের শারীরিক ঝুঁকিও বেশি।
উল্লেখ্য যে, ল্যাটিন আমেরিকার পর ভয়াবহ মাদক উৎপাদনকারী দুটি জনপদের একটি আফগানিস্তান, অন্যটি মিয়ানমার। মিয়ানমার বাংলাদেশের প্রতিবেশী, আফগানিস্তানও দূরে নয়। এর বাইরে সীমান্ত এলাকা গুলোর কাছাকাছি ফেনসিডিলসহ নানা ধরনের মাদক উৎপাদনকারী কারখানা থাকায় মাদকের বড়ো ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। মাদক উৎপাদনকারী দু’টি অঞ্চল হলো গোল্ডেন ট্রায়াংগল ও গোল্ডেন ক্রিসেন্ট। গোল্ডেন ট্রায়াংগলের মাদকদ্রব্য উৎপাদনকারী তিনটি দেশ হলো মিয়ানমার, থাইল্যান্ড এবং লাওস। গোল্ডেন ক্রিসেন্টের দেশগুলো হচ্ছে পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ইরান। সুতরাং ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই বাংলাদেশ মাদক পাচারের ট্রানজিট হিসেবে বহুদিন ধরেই ব্যবহার হয়ে আসছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭৫ লক্ষাধিক। বাংলাদেশে যারা মাদকে আসক্ত তাদের অধিকাংশের গড় বয়স ১৮ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে। আসক্তদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ। অধিদপ্তরের জরিপে পাওয়া যায়, আসক্তদের শতকরা ৯০ ভাগ কিশোর ও তরুণ। তাদের শতকরা ৪৫ ভাগ বেকার ও ৬৫ ভাগ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট। বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- দেশে মাদকাসক্তের মধ্যে ৮৪ ভাগ পুরুষ, ১৬ ভাগ নারী। দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ নানাভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আর মাদক সেবনের ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষিতের সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ। প্রতিদিন কমপক্ষে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মাদক কেনা-বেচা হয়। ধারণা করা হয় মাদকাসক্তের মধ্যে ৫০ শতাংশই বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। আমাদের দেশে নারী মাদকাসক্তদের সংখ্যাও বাড়ছে। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, নারী আসক্তদের মধ্যে ৯০ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ৩৫, বাকিদের বয়স ৪৫ এর মধ্যে।মাদক গ্রহণের অন্যতম কারণ বেকারত্ব বা কর্মহীনতা। মাদকের নেশা এখন নগরীর প্রাণকেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামেও বিস্তার লাভ করেছে।
আমাদের দেশে কিশোর সন্ত্রাসীদের ক্রমবর্ধমান দাপটের যে তথ্য সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে তার অন্যতম কারণ মাদক। দেশের সর্বত্র স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের নানাভাবে উত্যক্ত করা, গুলি বা ছুরিকাঘাতে হত্যা করা কিংবা সড়ক দুর্ঘটনার আধিক্যের পেছনেও মাদকাসক্তির ভূমিকা অন্যতম। তাই বেকার সমস্যার আশু সমাধান করে তরুণ ও বেকারদের মধ্য থেকে মাদকাসক্তি দূর করতে হবে; মাদকের বিক্রয় ও বিপণন নিষিদ্ধ করতে হবে।মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা ও প্রকাশ্যে বেচাকেনা রোধে সমাজের সকলকে ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মাদকাসক্তি দূর করতে কিশোর ও যুব সমাজের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে মাদকদ্রব্যের কুফলের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও মিডিয়ার মাধ্যমে মাদকবিরোধী প্রচারণা চালাতে হবে। ছেলেমেয়েদের প্রতি পরিবারের যত্ন ও দায়িত্ব বাড়াতে হবে। তারা কী করছে, কতক্ষণ বাইরে থাকে, কাদের সঙ্গে মেশে এসব খবর রাখতে হবে অভিভাবকদের। মাদকদ্রব্যের চোরাচালান ও এর প্রসাররোধে কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে। মাদকাসক্তের চিকিৎসাগ্রহণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। সেই সাথে অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ এবং সুস্থ ও নির্মল চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে।আন্তর্জাতিক ভাবে মাদকের ভয়াবহতা রোধে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ প্রতিবছর ২৬ জুনকে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় দিনটিকে মাদকবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৮৮ সালের ২৬ জুন জাতিসংঘ ঘোষিত ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ প্রথম বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। এর লক্ষ্য হলো মাদকরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং মাদকাসক্তির চিকিৎসার বিষয়ে সর্বসাধারণকে অবহিত ও উদ্বুদ্ধ করা।
এছাড়া মাদকদ্রব্যের নির্দিষ্ট সংখ্যা বা নাম বলা কঠিন। সেটি হতে পারে ইনজেকশন, ধূমপান বা যে কোনো মাধ্যম। বাংলাদেশসহ বিশ্বে প্রচলিত নেশাদ্রব্য হলো গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, মদ, তাড়ি, মারিজুয়ানা, এলএসডি, অ্যালকোহল, প্যাথেড্রিন, কোকেন, মরফিন, চরস, পপি, হাশিশ, ক্যানাবিস, স্মাক, বোড়েন, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ঘুমের ঔষধ, জুতায় লাগানো আঠা ইত্যাদি। অনেকে বিভিন্ন ধরনের এনার্জি ড্রিংকসের সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়েও নেশা করে থাকে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে ইয়াবা ট্যাবলেট। বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে মাদক হিসেবে ইয়াবার ব্যবহার বেড়েছে শতকরা ছয়গুণ। সরকার মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতির ঘোষণা দিয়েছেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ভিশন হচ্ছে মাদকাসক্তি মুক্ত বাংলাদেশ গড়া। কিন্ত মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, পরিবার, সমাজ-সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। মাদকদ্রব্যের প্রচার ও প্রসার বন্ধ করা, নজরদারি বৃদ্ধি এবং মাদকদ্রব্য ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে দেশ ভবিষ্যতে একটি মাদকমুক্ত জাতি পেতে পারে। এছাড়া প্রগতিশীল রাজনীতিও আগের মতো শক্তিশালী নয়। যে কারণে সমাজের সব ক্ষেত্রেই জেঁকে বসেছে সুবিধাবাদ, ভোগবাদ আর আত্মকেন্দ্রিকতা। আর এর সব কিছুকেই বাংলাদেশের তারুণ্য ধারণ করছেন। অন্যদিকে রাষ্ট্র ও সরকার তরুণদের সঠিক মূল্যায়ন করছে না। যার কারণে তারা চলে যাচ্ছেন দেশের বাইরে। আজকের তরুণরা দেশকে নিয়ে অনেক চিন্তা করছেন। প্রতিনিয়ত দেশের খবরা-খরব জানতে চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু প্রশাসন, রাষ্ট্র তরুণদের নিয়ে কতটা ভাবে? বর্তমান তরুণ প্রজন্ম কাজে বিশ্বাস করে, কথায় নয়। আজ আমাদের দেশে গড় তরুণ বেকারের সংখ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অধিক।
তবে এই বেকার তরুণদের চিন্তাচেতনা আর বুদ্ধি যদি কাজে লাগাতে পারে রাষ্ট্র, তবে বাংলাদেশ পরিণত হবে সোনার বাংলায়। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে তরুণ সমাজের বিকল্প নেই। আজকের তরুণরাই আগামী দিনে দেশ পরিচালনা এবং বড় বড় কাজের নেতৃত্ব দেবে। এখন থেকে যদি তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তোলা যায়, তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আরো সুন্দর হবে। তাই দেশ গঠনে তরুণদের চাওয়াকে যেমন গুরুত্ব দিতে হবে, ঠিক তেমনি তাদের পর্যাপ্ত সুযোগও দিতে হবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার আইএলও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ৩ কোটি। প্রতিষ্ঠানটি আভাস দিয়েছে, আগামী কয়েক বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে ৬ কোটিতে দাঁড়াবে, যা মোট জনসংখ্যার ৩৯ দশমিক ৪০ শতাংশ হবে। আইএলওর হিসাবটিকেই পর্যবেক্ষকেরা বাংলাদেশের প্রকৃত বেকারের সংখ্যা বলে মনে করেন। অপরদিকে উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যতটা আগ্রহী, কারিগরি বা কর্মদক্ষতা বাড়ানোর শিক্ষা নিতে তরুণরা ততটা আগ্রহী নন। খুব কম ক্ষেত্রেই কাউকে উদ্যোক্তা হতে দেখা যায়। সবাই চাকরির প্রত্যাশা করেন, কেউ চাকরি সৃষ্টির কথা ভাবেন না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে চাকরির আশায় দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করা এখন সাধারণ বিষয়। সরকারের উচিত বছর বছর নতুন প্রতিষ্ঠান না করে সঠিক জায়গায় বিনিয়োগ করে দক্ষ জনসম্পদ ও উদ্যোক্তা তৈরিতে জোরালো ভূমিকা রাখা।২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এক পরিসংখ্যানে দেখিয়েছে, বাংলাদেশে শতকরা ৪৭ ভাগ গ্র্যাজুয়েট হয় বেকার। এই বিশালসংখ্যক কর্মক্ষম মানুষের মাত্র সাত শতাংশ কাজ পাবেন। এর অর্থ হচ্ছে, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বেকারের তালিকায় নাম লেখাচ্ছেন। দরিদ্র সমাজে চারিত্রিক ও মানসিক; জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি করতে হলে সত্যিকারের শিক্ষা নিতে হবে। দৃষ্টি করতে হবে প্রসারিত। ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ না থেকে বিশ্বের বিশালতায় উন্মুক্ত করতে হবে নিজেদের। আর আনন্দ মনে তরুণরা এগিয়ে গেলে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
[email protected]