সংস্কৃতি

যে শহরে ছড়িয়ে আছে ৭২ হাজার টন হীরা

হীরার প্রতি আকর্ষণ নেই এমন নির্লোভ মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। আকর্ষণীয় অংলকার, রাজমুকুটের শোভা বর্ধনসহ হীরার কদরের শেষ নেই। একারণে হীরা খোঁজে পৃথিবীর নানা জায়গায় খনন চালায় হীরা আহরণকারীরা। মাসের পর মাস খনন কাজ চালিয়েও অনেক সময় নিরাশ হতে হয় তাদের। কিন্তু পৃথিবীতে এমন একটি শহর আছে, যার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে লাখ লাখ হীরা!

লিখিত ইতিহাস অনুযায়ী নর্দলিনগেনের গোড়াপত্তন নবম শতকে। শহরটি তৈরির সময় সেখানকার স্থানীয় লোকজন জানত না, যে পাথর দিয়ে শহর গড়ছে তারা, তার মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট অনেক হীরা।

তবে হীরাগুলো এতই ছোট যে সবই আকারে ০.২ মিলিমিটারের কম। খালি চোখে দেখা খুব কঠিন।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মানির নর্দলিনগেন শহরে ব্যাভারিয়া অঞ্চলের গথিক-স্থাপত্যরীতি মেনে বানানো সেন্ট জর্জেস গির্জা। সিঁড়ি ভেঙে টাওয়ারে ওঠার সময় সূর্যের আলোয় পাথুরে সিঁড়িগুলো ঝিকমিক করে উঠে।

নর্দলিনগেনের স্থানীয় ভূতাত্ত্বিকদের মতে, এই শহরে প্রায় ৭২ হাজার টন হীরার মজুত আছে। কিন্তু সবই সুভাইট পাথরের মধ্যে মিশ্রিত। সুভাইট পাথর পৃথিবীর আরও বেশ কিছু জায়গায় মিলেছে, একই ঘটনার (গ্রহাণুর আছড়ে পড়া) ফলাফল হিসেবে। কিন্তু সেসব জায়গায় পাথরের মধ্যে ‘জেমস্টোন’(রত্নপাথর)-এর মিশ্রণ নর্দলিনগেনের মতো এত বেশি নয়।

১৪২৭-১৫০৫ খ্রিষ্টাব্দ নির্মিত গির্জাটির সিঁড়ি কালচে-বাদামি রং ধারণ করার কথা হলেও দ্যুতি ছড়াচ্ছে! এর কারণ ব্যাখ্যা করলেন গির্জার টাওয়ারের রক্ষী হোর্স্ট লেনার। তিনি বললেন, “গোটা টাওয়ারটি বানানো হয়েছে সুভাইট পাথর দিয়ে। এর ভেতরে রয়েছে অনেক হীরা। ভাগ্যিস হীরাগুলো অনেক ছোট। তা না হলে এই গির্জা কবেই ভেঙে ফেলা হতো!”

ইতিহাস বলছে, প্রায় দেড় কোটি বছর আগে নর্দলিনগেন অঞ্চলে আছড়ে পড়েছিল এক কিলোমিটার প্রশস্তের একটি গ্রহাণু। সেকেন্ডে ২৫ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানা সেই গ্রহাণু সেখানে ২৬ কিলোমিটার অঞ্চল নিয়ে একটি গর্তের সৃষ্টি করে। আঘাতের চাপে ও তাপে কার্বন রূপান্তরিত হয় ভীষণ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হীরকে, যা মরিচের গুঁড়োর মতো মিশে গেছে সুভাইট পাথরের সঙ্গে।

গ্রহাণুর সেই সুভাইট পাথর দিয়ে বানানো হয়েছে শহরটির বেশির ভাগ বসতবাড়ি। নর্দলিনগেনের বাসিন্দা রোজউইথা ফেইল জানান, এ শহরের মধ্যে যা কিছু দেখছেন, সবই সেই গ্রহাণুর আঘাতের ফলে সৃষ্ট পাথর দিয়ে গড়া। অথচ পঞ্চাশ দশক পর্যন্তও এখানকার বাসিন্দারা মনে করতেন, শহরটি কোনো মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের ওপর বানানো হয়েছে।

তবে ষাটের দশকে নর্দলিনগেনে ঢুঁ মেরে তাদের ভুল ভাঙিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই ভূতত্ত্ববিদ ইউজেনে শুমেকার এবং এডওয়ার্ড চাও। নর্দলিনগেন আসলে বসে আছে পৃথিবীতে আছড়ে পড়া একটি গ্রহাণুর ওপর বলে এ দুই ভূতত্ত্ববিদ প্রমাণ করেছিলেন।

শহরের পরতে পরতে হীরা মিশে থাকলেও স্থানীয় লোকদের তা নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। প্রায় প্রতিদিনই পর্যটক, ভূতত্ত্ববিদ কিংবা মহাকাশচারীদের আনাগোনা দেখে অধিবাসীরা আশ্চর্য হন। তাদের প্রশ্ন, এখানে এত দেখার কী আছে?

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button