অর্থনীতি

করোনা পরিস্থিতিতে প্রণোদনা চান রিকশাচালকরা

করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর করোনার ভয়ে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসা থেকে বেরও হচ্ছেন না। এ অবস্থায় সড়কে মানুষের উপস্থিতি নেই বললেই চলে, কমেছে সাধারণ যাত্রীর সংখ্যা। তবে এতে বিপাকে পড়েছেন নগরীর সাধারণ রিকশাচালকরা। পেটের তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রিকশা নিয়ে বের হলেও, যাত্রী না পাওয়ায় এখন তাদের কোনও আয় নেই। এ অবস্থায় বেঁচে থাকার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপ অনুযায়ী বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় ১০ লাখের বেশি রিকশা রয়েছে। আর এসব রিকশার ওপর নির্ভরশীল ১০ লাখেরও বেশি পরিবার। তবে সিটি করপোরেশনের নিবন্ধন রয়েছে মাত্র ৭৯ হাজার ৫৪৭টি রিকশার। বাকি রিকশাগুলো অবৈধ। মূলত যানজট নিরসনে ১৯৮৬ সালের পর থেকে রাজধানীতে রিকশার লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রাখে সিটি করপোরেশন।

এ হিসেবে বর্তমানে খোদ রাজধানীর ১০ লাখ রিকশাচালক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তবে মাঝেমধ্যে কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে সড়কে বের হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নাজেহাল হন। গত কয়েকদিনে অনেকে সড়কে নেমে রিকশাও হারিয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু রিকশা আটক করা হয়। এ কারণে এখন আর কেউ রিকশা নিয়ে সড়কে বের হচ্ছেন না।

গত সোমবার সড়কে বের হওয়ায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে কয়েকশ’ রিকশা আটক করে পুলিশ। যদিও দিন শেষে সেসব রিকশা ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে সড়ক থেকে রিকশা কমানো ও মানুষের চলাচল সীমিত করতে তারা দিনভর রিকশা আটক রাখার কৌশলটি নিয়েছেন। আর রিকশাচালকরা বলছেন, ক্ষুধার তাড়নায় তারা করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যেও সড়কে বের হয়েছেন। কিন্তু পুলিশের বাধার কারণে কর্মহীন এসব রিকশাচালকের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

এদিকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে রাজধানী ঢাকা থেকে রিকশা আরও সীমিত করার কৌশল নিয়েছে পুলিশ। এরই অংশ হিসেবে প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়। সোমবার নগরীর শেরেবাংলা নগর থানার আসাদগেট সংলগ্ন এলাকায় শতাধিক রিকশা আটক করে পুলিশ।

জানতে চাইলে শেরেবাংলা নগর থানার ওসি বলেন, ‘আমরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নানা কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে সিনিয়র অফিসারদের পরামর্শে রিকশা আটক করা হচ্ছে। আমরা সব স্থানে কীভাবে রিকশা সীমিত করে দেওয়া যায়, সেজন্য নানা কৌশল অবলম্বন করছি। কখনও আটকে রেখে আবার কখনও রিকশাচালকদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। কারণ একজন লোক যখন রিকশায় ওঠে, তার আগের জন কোন অবস্থায় ছিলেন, কেমন ছিলেন, সেটা বলা যায় না। এভাবে একজন থেকে অন্যজনের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে।’

এ অবস্থায় সরকারের বিশেষ প্রণোদনা চান রিকশাচালকরা। তারা বলছেন, শুধু রাজধানী ঢাকাতেই ১০ লাখের বেশি রিকশাচালক রয়েছেন। এখান থেকে প্রতিদিন টাকা আয় করে গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের পাঠাতেন তারা। এই টাকা গ্রামের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক রাখতেও সহযোগিতা করেছে। তাই এই খাতে বিশেষ প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন তারা।

রিকশা-ভ্যান ও অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইনসুর আলী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে কোনও মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তাই প্রায় সব রিকশাচালক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সরকারের দেওয়া ত্রাণসামগ্রীও এই চালকরা পাচ্ছেন না। কারণ রিকশাচালকদের অনেকেই ভাসমান। তারা ঢাকার ভোটার না। কাউন্সিলর ত্রাণ বিতরণ করার সময় তার ওয়ার্ডের ভোটারদের প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ অবস্থায় ত্রাণ বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে রিকশাচালকদের অবদান অনেক। প্রতিদিন এই চালকরা রাজধানী ঢাকা থেকে অর্থ উপার্জন করে গ্রামে পাঠাচ্ছেন। তবে বর্তমানে সুযোগ নেই। ফলে রিকশাচালকদের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দিনমজুর চালকদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার দাবি জানান তিনি।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button