আন্তর্জাতিক

মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বনরুই!

ভোঁদর ও বাদুড়ের পর এবার করোনাভাইরাস সংক্রমণে দায়ী করা হচ্ছে বিপন্ন প্রাণী বনরুইকে। চীনের একদল বিজ্ঞানী বলেন, এই ভাইরাসের আদি পোষক বাদুর হলেও মানুষের শরীরে বিস্তারে আরেকটি প্রাণীর ভূমিকা রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে বনরুই।

গুয়াংজু প্রদেশের দক্ষিণ চায়না কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, ভাইরাসটির আরএনএ বিন্যাসের সঙ্গে বনরুইয়ের শরীরে পাওয়া করোনাভাইরাসের বিন্যাসের ৯৯ শতাংশ মিল পেয়েছেন। এ নিয়ে বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

প্রাণঘাতী করোনভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৭২৪জন মারা গেছেন। আর আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪ হাজারের বেশি।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া প্রাণীদের একটি গায়ে আঁশযুক্ত একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী বনরুই। চীন ও ভিয়েতনামে কবিরাজি চিকিৎসায় পিঁপড়েখেকো এই প্রাণীর মাংস ও আঁশ ব্যবহার করা হয়।

ভাইরোলজির ভাষায় এ ধরনের পোষক প্রাণীকে বলা হয় মধ্যবর্তী বাহক। তবে চীনা বিজ্ঞানীদের গবেষণার এই ফল কতটা বিশ্বাসযোগ্য, সেই প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, নিশ্চিত করে বলার আগে এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন।

ফ্রান্সের প্যাস্টুয়ার ইনস্টিটিউটের আরনড ফন্টেনেট বলেন, এই রোগ সরাসরি বাদুড় থেকে মানুষের শরীরে বিস্তার ঘটেনি। আমরা মনে করি, মধ্যবর্তী বাহক হিসেবে আরেকটি প্রাণীর ভূমিকা রয়েছে।

গত ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হুঁশিয়ারের পর নতুন করোনাভাইরাস শনাক্ত করে চীন। বিজ্ঞানীরা প্রথম থেকেই ধারনা করে আসছেন যে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটির হুবেই প্রদেশের উহান শহরের একটি সি ফুড মার্কেট থেকে ওই ভাইরাস ছড়িয়েছে।

সি ফুডের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীও ওই মার্কেটে বিক্রি হত, যা পরে বন্ধ করে দেয় চীনা কর্তৃপক্ষ। গোড়ার দিকে সাপ, বাদুড় ও ভোঁদড়ের দিকে ইঙ্গিত ছিল অনেকের।

আবার বিজ্ঞানীদের আরেকটি অংশের বক্তব্য, করোনাভাইরাস সাপকে পোষক হিসেবে ব্যবহার করে, এমন কোনো প্রমাণ কখনও মেলেনি।

ফোলিডোটা বর্গের প্রাণী বনরুইয়ের বিশেষত্ব হল এর গায়ে মাছের মত আঁশ। সে কারণে বাংলায় এর নাম হয়েছে বনরুই। স্তন্যপ্রায়ী এ প্রাণী পিঁপড়া খায় বলে তাদের পিপিলিকাভুকও বলা হয়।

এ প্রাণীর দাঁত নেই। ভয় পেলে বা আত্মরক্ষার তাগিদে লেজ দিয়ে নিজেকে মুড়িয়ে বলের আকার নেয়। পিঁপড়ে-উঁইপোকা খাওয়ার জন্য এরা ব্যবহার করে দীর্ঘ জিহ্বা।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়া প্রাণী বনরুই। মূলত আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলোতেই এর কেনাবেচা চলে। চীন, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সনাতন কবিরাজি চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয় এর মাংস ও আঁশ।

এদিকে উহানের একটি করোনাভাইরাস হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখা রোগীদের রাতের খাবারে কচ্ছপের মাংস দেয়া হয়েছে।

চীনা গণমাধ্যমে প্রচার হওয়া এক ভিডিওর বরাতে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইলের খবরে এমন তথ্য জানা গেছে। ভিডিওতে এক রোগীকে বলতে দেখা গেছে, আজকের খাবারে নরমখোলসের কচ্ছপের মাংস রয়েছে।

বন্য প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়েপড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৬৩৮জনের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশেষভাবে বাদুর ও সাপ থেকে এই সংক্রামকের বিস্তার ঘটেছে।

চীনা বিজ্ঞানীদের দাবি, বাদুর থেকে মানুষের শরীরে এই ভাইরাস ছড়াতে বনরুইয়ের সম্পর্ক রয়েছে।

নরমখোলসের কচ্ছপকে মান্দারিন ভাষায় ‘জিয়া ইউ’ইন’ বলা হয়। ঐতিহ্যবাহী চীনা ঔষধে এটাকে খুবই পুষ্টিকর খাবার বলে আখ্যায়িত করা হয়।

লোকজনের বিশ্বাস, প্রোটিনসমৃদ্ধ এই কচ্ছপ তাদের দ্রুত সুস্থ করে তুলবে। বন কিংবা প্রজনন খামার— যেখান থেকেই তাদের আনা হোক না কেন, গরম পানিতে সিদ্ধ করে কচ্ছপের পুষ্টিকর ঝোল বানানো হয়েছে।

চীনের স্বাধীন সংবাদমাধ্যম রেন জিয়ান জেই বেইতে করোনাভাইরাসের অস্থায়ী হাসপাতাল থেকে ধারণ করা একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে এক নারী রোগীকে বলতে শোনা গেছে, ভাই ও বোনেরা, দেখেন, আপনারা সামনে থেকে লড়াই করছেন, আমরাও আপনাদের সঙ্গে লড়ছি।

এছাড়া এক পুরুষ রোগী তাকে দেয়া বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দর্শকদের দেখাচ্ছেন। যার মধ্যে রয়েছে, তোয়ালে, টুথপেস্ট, টয়লেট পেপার ও স্যান্ডেল।

তৃতীয় এক রোগীকে বলতে দেখা গেছে, আজকের খাবারে নরমখোলসের কচ্ছপের মাংসও রয়েছে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button