স্বাস্থ্য

ইনহেলার এবং স্পেসারের ব্যাবহার

শ্বাসকষ্টের নানা সমস্যার জন্য শিশু এবং বয়স্ক অনেকেই ইনহেলার কিংবা স্পেসার ব্যাবহার করে থাকেন। এইসব উপকরণে কিছু ওষুধ সরাসরি শ্বাসনালীর মাংসপেশির উপর কাজ করে আবার কিছু স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধও কষ্ট উপশম করে। একই ধরণের ওষুধ, ধরুন সালবিউটামল মুখে খাওয়া যায় (সিরাপ বা ট্যাবলেট), নেবুলাইজারের মাধ্যমে নেওয়া যায়, আবার ইনহেলার হিসেবেও ব্যাবহার করা যায়। কোনটি সবচেয়ে ভালো, এই প্রশ্ন সব রোগীর।

শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞগণ ইনহেলার জাতীয় ওষুধের অধিক কার্যকারিতা, তুলনামূলক কম মাত্রা, কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং সবচেয়ে ভালো ফলাফলের কথা বলে থাকেন। সারা পৃথিবীতে হাঁপানির চিকিৎসায় কিছু ধাপ অনুসরণ করা হয়। এইসব ধাপে ইনহেলার জাতীয় ওষুধ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদি দুর্ভাগ্যজনকভাবে আপনার ঘরে শ্বাসকষ্টের রোগী থাকে, আর তার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইনহেলারের কথা বলে থাকেন, তাহলে অমূলক ভয় দূর করে এর ব্যাবহার শিখে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

১। ওষুধের মেয়াদ যাচাই করে নিন। প্রথমবার (এবং অনেকদিন অব্যাবহৃত থাকলে) ব্যাবহারের ক্ষেত্রে ইনহেলারের মুখের ঢাকনাটির দুই পাশে আলতো চাপ দিয়ে খুলে, ঝাঁকিয়ে, পরপর দু’বার বাতাসে ওষুধ বের করে নিশ্চিত হোন যন্ত্রটি কাজ করছে।
২। আঙুলের সাহায্যে ইনহেলারটি সোজা করে ধরুন। বৃদ্ধাঙ্গুল মাউথ পিসের নিচে থাকবে।
৩। জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। তারপর মাউথ পিসটি মুখের ভিতরে প্রবেশ করান এবং ঠোঁট বন্ধ করুন। মাউথ পিসে যেন দাঁতের কামড় না পড়ে।
৪। এবার নিঃশ্বাস নিতে শুরু করুন, ইনহেলারের উপর তর্জনী দিয়ে চাপ দিন যাতে ওষুধ বের হয়ে আসে। নিঃশ্বাস টানতে থাকুন গভীরভাবে যেন একইসাথে ওষুধ ভিতরে প্রবেশ করে।
৫। শ্বাস ধরে রাখা অবস্থায় ইনহেলারটি মুখ থেকে বের করুন এবং কিছুক্ষণ নিঃশ্বাস ধরে রাখুন। একাধিকবার ওষুধ নিতে হলে কমপক্ষে ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করে একই নিয়ম অনুসরণ করুন।
৬। পানি দিয়ে কুলি করে ফেলুন। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যাবহারের পর কুলি না করলে ক্যান্ডিডা নামক ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। মুখে ঘা, গলার স্বর মোটা হয়ে যেতে পারে।
এখন আসি স্পেসারের কথায়। এটি প্লাস্টিকের তৈরি নল বা বোতলের মত একটি চেম্বার বা ফাঁপা জায়গা, যেটি ইনহেলার থেকে আগত ওষুধ ধরে রেখে শ্বাস গ্রহনের সময় ভিতরে টেনে নিতে সাহায্য করে। এটিতে একমুখী একটি ভাল্ব থাকে যা ওষুধ শুধুমাত্র শ্বাস নেওয়ার সময় খুলে যায়, আর শ্বাস ফেলার সময় বন্ধ হয়ে যায়।
১। ইনহেলারটি ঝাঁকিয়ে স্পেসারের ছিদ্রে লাগান। ইনহেলারে জোরে চাপ দিন। এতে ওষুধ স্পেসারে ঢুকে গেল।
২। জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ুন, স্পেসারের মাউথ পিসটি মুখের ভিতরে প্রবেশ করান এবং ধীরে ধীরে লম্বা নিঃশ্বাস নিতে শুরু করুন।
৩। স্পেসারের ভেতরে ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড ওষুধ ভাসমান অবস্থায় রক্ষিত থাকার কারণে একইসাথে শ্বাস নেওয়া ও ইনহেলারের ক্যানিস্টার চাপ দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বেশি শ্বাসকষ্টের সময় নিয়ে শ্বাস নিতে পারবেন।
৪। অন্তত ৫ বার স্পেসার থেকে শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন। প্রয়োজনে একইভাবে আবার ওষুধ নিন।
৫। পানি দিয়ে কুলি করে ফেলুন।

শিশুদের ক্ষেত্রে এবং অতিরিক্ত শ্বাসকষ্টে শুধুমাত্র ইনহেলারের চেয়ে স্পেসার ব্যাবহার করলে দ্বিগুণ ওষুধ ফুসফুসে প্রবেশ করে। ওষুধের কার্যকারিতা এবং রোগের উন্নতি বেড়ে যায়। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের জন্য মুখে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়না বললেই চলে।
সবশেষে এগুলোর পরিচ্ছন্নতা সম্বন্ধে জানা দরকার। সপ্তাহে অন্তত একবার ইনহেলার পরিস্কার করতে হবে। এজন্য প্লাস্টিকের খাপ থেকে ধাতব ক্যানিস্টার এবং মাউথ পিসের ঢাকনা খুলে ফেলুন। মৃদু গরম পানির ধারার নিচে অ্যাকচুয়েটর’টি ধরুন, ধুয়ে ফেলুন এবং শুকিয়ে ফেলুন। ধাতব ক্যানিস্টার এবং মাউথ পিসের ঢাকনা স্বস্থানে বসিয়ে দিন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button