শিক্ষাঙ্গন

ইবিতে ছাত্রলীগের উত্তেজনা, গুলি-ককটেল বিস্ফোরণ

মধ্যরাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের দুগ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

এ সময় উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের হাতে দা, লোহার রড, পাইপ, লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র লক্ষ্য করা যায়। পাল্টা ধাওয়ার সময় কয়েক রাউন্ড গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় উভয় গ্রুপের কর্মীরা।

এ ঘটনায় অন্তত ১০ কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

পরে রাত আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের নেতৃত্বে প্রায় ২০-৩০ নেতাকর্মী আবাসিক সাদ্দাম হোসেন হলের ২৩৫নং কক্ষে যায়।

ওই কক্ষে অবস্থানরত বিদ্রোহী গ্রুপের ছাত্রলীগকর্মী মোশাররফ হোসেন নীল ও শিমুল জানায়, সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে তার কর্মীরা কক্ষের দরজায় লাথি মারতে থাকে। এ সময় আমরা কক্ষে খাচ্ছিলাম। কক্ষ থেকে বের হলে আমাকে হল থেকে বের হয়ে যেতে বলে।

জানা যায়, এ সময় তাদের মধ্যে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুমনসহ অন্যদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। তবে নীলের দাবি- তাকে কক্ষে ঢুকে মারধর করা হয়েছে। একপর্যায়ে নীল হল থেকে বেরিয়ে এসে জিয়া মোড়ে অবস্থান নিয়ে তার গ্রুপের নেতাকর্মীদের জানায়। পরে সাদ্দাম হল থেকে সাধারণ সম্পাদকসহ নেতাকর্মীরা জিয়া মোড়ে এলে উভয়গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

হাতাহাতির একপর্যায়ে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মী সুমনকে মারধর করতে থাকে বিদ্রোহী গ্রুপের কর্মীরা। এ সময় সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব সাদ্দাম হলের অভ্যন্তরে অবস্থান নেয়।

আবাসিক হলগুলোতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে ছাত্রলীগের বিদ্রোহীরা বঙ্গবন্ধু হলের সামনে অবস্থান নেয়।

অন্যদিকে সাদ্দাম হোসেন হল, লালন শাহ হল এবং শহীদ জিয়াউর রহমান হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতাকর্মীরা জিয়া মোড়ে অবস্থান নেয়। পরে সভাপতি-সম্পাদক গ্রুপের কর্মীরা মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু হলের দিকে এগিয়ে গেলে আগে থেকে অবস্থান নেয়া বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দিলে নেতাকর্মীরা আবাসিক হলের ভেতর অবস্থান নিয়ে কলাপসিবল গেট আটকে দেয়।

ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় উভয়পক্ষের নেতাকর্মীদের হাতে দা, লোহার রড, জিআই পাইপ, দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা লক্ষ্য করা যায়। এ ঘটনায় জিয়া মোড়, লালন শাহ হল ও জিয়া হলের সামনে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় কর্মীরা। একই সঙ্গে তিন রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা যায়।

উভয়গ্রুপের অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পরে ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ ও সহকারী প্রক্টর নাসিমুজ্জামান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয়গ্রুপের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, বিদ্রোহী গ্রুপ যে মারধরের অভিযোগ করছে, এটি ভিত্তিহীন। তাদের মারধর করা হয়নি; বরং মিছিল-মিটিংয়ে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বহিরাগতদের নিয়ে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে যারা তৎপরতা চালাচ্ছে, ছাত্রলীগ তাদের শক্ত হাতে প্রতিরোধ করবে। এর পরও যারা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অতিবিলম্বে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ছাত্রলীগের এক অংশের নেতা তন্ময় সাহা টনি বলেন, শোকের মাসে সাধারণ সম্পাদকের প্রত্যক্ষ মদদে কক্ষে গিয়ে আমাদের দুই কর্মীকে মারধর করে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনার কারণ জানতে তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে সভাপতি-সম্পাদকের কর্মীরা আমাদের ওপর চড়াও হয়। পরে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর জন্য ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দায়ী।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button