শিক্ষাঙ্গনসারাদেশ

রংপুরে দেড় হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট: মুখ থুবরে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা

হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর  :শিক্ষক সংকটের কারণে রংপুরে প্রথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা মুখ থুবরে পড়েছে। প্রায় দেড় হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঁচশতাধিক প্রধান ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। ফলে কমলমতি শিশুদের লেখাপড়ার মান দিনদিন নিম্মমুখি হচ্ছে। এনিয়ে অভিভাবকসহ সচেতন মহলে নানা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, জেলায় ১হাজার ৪শ’ ৫২টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছ্। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদ ১শ’ ৩১টি ও ৪শ’ ১৬টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। শুধু তাই নয় প্রাক প্রাথমিকের ৫৬টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক না থাকায় ওই সব পদে শিক্ষক পদায়ন করা যাচ্ছে না। এ ছাড়াও মামলার জটিলতার কারণে বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে।
জেলা শিক্ষা অফিসের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জেলার কাউনিয়া উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ১২, সহকারী শিক্ষকের ২৩টি, গঙ্গাচড়া উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ২২টি, সহকারী শিক্ষকের ৪৫টি, তারাগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের ৭টি, সহকারী শিক্ষকের ২৫টি, পীরগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের ৩৮টি , সহকারী শিক্ষকের ১৩০টি, পীরগাছায় প্রধান শিক্ষকের ১৪টি, সহকারী শিক্ষকের ৮৫টি, বদরগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের ১৪টি সহকারী শিক্ষকের ৬৪জন, মিঠাপুকুরে প্রধান শিক্ষকের ৮টি, সহকারী শিক্ষকের ৯৭টি ও রংপর সদরে প্রধান শিক্ষক ১৬টি ও সহকারী শিক্ষকের ৩টি পদ শূন্য রয়েছে।
জেলা শিক্ষা অফিসের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের পদ প্রত্যাশী হওয়ায় তারা ওই পদে নিজের পদায়নের দাবিতে আদালতে মামলা করেছেন। এ সব মামলা দীর্ঘদিন ধরে নিস্পত্তি হচ্ছে না। ফলে এ নিয়েও এক জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকলেও সে সব পদে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বা পদায়ন করা যাচ্ছে না।
রংপুর গঙ্গাচড়ার মৌভাষা লাখেরাজটারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর অভিভাবক বিলকিস আক্তার অভিযোগ করেন, শিক্ষক সংকটের কারণে বিদ্যালয়ে লেখাপড়া ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
পীরগঞ্জের জাহাঙ্গিরাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আজিজুল ইসলাম এর বাবা আজহার আলী বলেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন সহকারী শিক্ষক ডেপুটেশনে রংপুর সদরে যাওয়ায় তার পদটি শূন্য রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
একই রকম অভিযোগ করলেন বাজেশিবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তফা মিয়া। তিনি বলেন দীর্ঘদিন ধরে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা সিনিয়র হওয়ায় তারা পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন। শিক্ষা মন্ত্রনালয় তাদের দাবি মেনে না নেয়ায় তারা বিভিন্ন আদালতে ওই দাবিতে মামলা দায়ের করেছেন। এ সব মামলা এখনো নিস্পত্তি হয়নি। তাই ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। তাই মামলার জটিলতার কারণে ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খুব  অল্প সময়ে যে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে সে সব পদে তাদের নিয়োগ দেয়া হবে। তা হলে বর্তমান সহকারী শিক্ষকের পদ নিয়ে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা দূর হবে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button