খাবার নয়, ওজন বাড়ায় পানীয়….
ক্যালোরি কিংবা সুক্রোজ তো সব খাবারেই আছে। আমরা নানাভাবেই এই ক্যালোরি গ্রহণ করে থাকি। কিন্তু আমাদের শরীরে এদের প্রভাব কি একইরকম হয়? সম্প্রতি এ ব্যাপারে গবেষণা চালিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব আবেরডীনের স্কুল অব বায়োলজিকাল অ্যান্ড এনভারমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক জন আর স্পিকম্যান ও তার গবেষক দল। আর এই গবেষণায় উঠে এসেছে মজার কিছু তথ্য-
খাবার ও পানীয় : প্রভাবটা ভিন্ন
আপনি হয়তো ভাবতেই পারেন যে, ক্যালোরি খাবারের মাধ্যমে নিলেও যা, পানীয়ের মাধ্যমে নিলেও তা। বাস্তবে ব্যাপারটি কিন্তু একেবারেই এমন নয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, খাবারের চাইতে পানীয় এক্ষেত্রে একজন মানুষকে বেশি প্রভাবিত করে।
এ জন্য কয়েকটি ইঁদুরের ওপরে পরীক্ষা চালান গবেষকেরা। ইঁদুরদের দুইটি দলে বিভক্ত করা হয়। এদের মধ্যে প্রথম দলটিকে পানীয় দেওয়া হয়, অন্যদের খাবার। টানা আট সপ্তাহ এই পরীক্ষাটি চলে। দুই রকমের খাবারেই ৭৩ শতাংশ বাড়তি চিনি মিশ্রিত ছিল। ফলাফলটি ছিল প্রায় চমকে দেওয়ার মতো। দেখা যায় যে, পানীয় পান করছিল যে ইঁদুরেরা, তাদের স্থুলতা অন্যদের চাইতে অনেক বেশি।
গবেষণাটি করার সময় ইঁদুরদের শারীরিক উচ্চতা, ওজন এবং অন্যান্য দিক সম্পর্কে ভালোভাবে পরীক্ষা করা হয়। ইনসুলিন শরীরে প্রবেশ করলে ইঁদুরদের শারীরিক প্রতিক্রিয়া কেমন হয় সেটাও দেখেন তারা। এতে দেখা যায় যে, যেসব ইঁদুর তরল সুক্রোজ গ্রহণ করেছে, তাদের শরীরের ওজন এবং চর্বি দুটোই বেড়ে গিয়েছে।
শুধু তাই নয়, দেখা যায় যে, পানীয়ের ফলে যেসব ইঁদুরের বডি ফ্যাট এবং ওজন বেড়ে গিয়েছে, তাদের ইনসুলিন সহ্য করার ক্ষমতাও কমে গিয়েছে।
ইতোপূর্বেও এ সংক্রান্ত গবেষণা চালিয়েছেন এই গবেষক দল। ইঁদুরকে তারা ৩০ শতাংশ সুক্রোজ প্রদান করেছেন। তবে, সেক্ষেত্রে এর কোনো ফলাফল সেভাবে পাওয়া যায়নি ওজনের ক্ষেত্রে। বর্তমান গবেষণার পর নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন তারা। আর সেটা হলো, তারা সুক্রোজ ইঁদুরকে প্রদান করলেও সেটা করা হয়েছে খাবারের মাধ্যমে। পানীয়ের মাধ্যমে নয়।
মোট কথায় বলতে গেলে, ইঁদুরকে পানিয়ের মাধ্যমে সুক্রোজ প্রদান করলে সেটা তাদের শরীর খাবারের চাইতে আরও বেশি ও দ্রুত প্রভাব রাখে। একটি ইঁদুরের শরীর পানীয় থেকে ভালোভাবে সম্পূর্ণ ক্যালোরি গ্রহণ করতে সক্ষম।
এ ক্ষেত্রে একটু খেয়াল করলে মানুষের সাথে ইঁদুরের খানিকটা মিল আপনি এই জায়গায় খুঁজে পাবেন। মানুষের শরীরে এমন পরীক্ষা করেও অনেকবার পাওয়া গিয়েছে যে, মিষ্টি পানীয়ের সাথে আমাদের শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার বড় সম্পর্ক আছে। দেখা যায় যে, একজন মানুষ খাবারে শর্করা গ্রহণ করলে সেটা তার শরীরে যতটা স্থায়ী হয়, তার চাইতে অনেক বেশি প্রভাব পড়ে যদি এই শর্করা তরল আকারে নেওয়া হয়।
এই একই গবেষণা চালিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের অধ্যাপক গান্টার কাহ্নল। তিনি বলেন যে, পানীয়ের মাধ্যমে স্থুলতা তৈরি হওয়ার এই ব্যাপারটি বেশ অন্যরকম। তবে এই পরীক্ষার মোট দুইটি সীমাবদ্ধতা আছে বলে মনে করেন তিনি। সেগুলো হলো-
১। ইঁদুরের সাথে অনেকাংশে মিলে গেলেও ইঁদুরের সাথে যেমনটা হয়েছে তার সবটা একজন মানুষের সাথে মিলে যায় না।
২। বর্তমান সময়ে পানীয়তে যে পরিমাণ চিনি মিশ্রিত থাকে, তার চাইতে অনেক বেশি পরিমাণ চিনি ইঁদুরদেরকে প্রদান করা হয়েছে।
ইঁদুরদের পানীয়ে ৫০ শতাংশ চিনি মিশ্রিত ছিল। যেটা বর্তমানে পানিয়ে ব্যবহৃত চিনির চাইতে ৫ গুণ বেশি।
তবে এতোকিছুর পরেও এই তথ্যটিকে এড়ানোর কোনো উপায় নেই যে, মিষ্টি পানীয় আমাদের ওজন বাড়াতে, আমাদের স্থুল করে তুলতে সাহায্য করে। অনেক ক্ষেত্রেই কোকাকোলা বা অন্যসব পানীয়ের কারণে আমাদের শরীরে বডি ফ্যাট এবং বাড়তি ওজন তৈরি হয়।
অনেকের ক্ষেত্রে হয়তো এমনটা কাজ করে না। তবে গড়ে যে পরিসংখ্যানটি আসে, সেটাও একদম কম নয়! তাই নিয়মিত কোমল পানীয় পানের অভ্যাস থাকলে এবার সেটা কমিয়ে আনুন। এতে করে পরিমাণমতো খাবার খেলেও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন আপনি!