স্বাস্থ্য

নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা ও সমাধান

দেহে রক্ত কম পরিবাহিত হলে নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা হয়। একে হাইপোটেনশন বা লো ব্লাড প্রেশারও বলা হয়। নিম্ন রক্তচাপ থেকে কখনো কখনো স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক ও কিডনি ফেইলিউরের মতো ঘটনা ঘটে। তাই কেবল উচ্চ রক্তচাপ নয়, নিম্ন রক্তচাপ সম্বন্ধেও সচেতন হওয়া জরুরি।

রক্তচাপের নিচের রিডিং ৬০ বা তার কম হলে সেটাকে নিম্ন রক্তচাপ বা লো ব্লাড প্রেসার ধরা হয়। আর যদি নিচেরটি ৬০ এর উপরে থাকে, আর উপরেরটি ১০০ বা তার চেয়ে কমে যায় তাহলে সেটাকেও নিম্ন রক্তচাপ ধরা হয়। কিছু লক্ষণ রয়েছে যেগুলো দেখলে বোঝা যাবে নিম্ন রক্তচাপ হয়েছে। এগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

১. মাথা ঘোরা: নিম্ন রক্তচাপের একটি প্রচলিত লক্ষণ হচ্ছে মাথা ঘোরা। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর উঠে দাঁড়ালে বা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর বসলে এই সমস্যা হতে পারে। একটানা কয়েকদিন এমন সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

২. মূর্ছা যাওয়া: মস্তিস্কের রক্ত চলাচল কমে গেলে নিম্ন রক্তচাপ হয়। এতে রোগীরা মূর্ছা যায়। এমন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

৩. চোখে ঝাপসা দেখা: শরীরে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন অঙ্গে ভালোভাবে অক্সিজেন এবং পুষ্টি পৌঁছায় না। এটি চোখের ওপর প্রভাব ফেলে। এতে চোখে ঝাপসা দেখার সমস্যা হয়।

৪. বুক ধড়ফড় করা: রক্তচাপ কমে গেলে হৃদপিণ্ড সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। এতে অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের সমস্যা হয়, বুক ধড়ফড় করে।

৫. ম্লান ত্বক: ত্বক ম্নান হয়ে যাওয়া নিম্ন রক্তচাপের আরেকটি লক্ষণ। রক্তচাপ কমে গেলে ত্বক হলুদ অথবা ম্নান হয়ে যায়।

৬. ঘাম হয়: রক্তচাপ কমে গেলে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। শরীরের পানি ঘামের মাধ্যমে বেরিয়ে যেতে থাকে। এমন হলে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া বমি হওয়া এবং শারীরিক দুর্বলতাও রক্তচাপ কমে যাওয়ার লক্ষণ।

নিম্ন রক্তচাপের কারণগুলো সম্পর্কেও সচেতন হওয়া প্রয়োজন:

১. দেহে রক্তের পরিমাণ কমে যাওয়া বা রক্তস্বল্পতা।
২. ঠিকমতো না খাওয়া বা খুব বেশি উপোস থাকা।
৩. অপর্যাপ্ত তরল গ্রহণ, বমি, ডায়রিয়াসহ যেকোনো কারণে পানিশূন্যতা।
৪. অতিরিক্ত পরিশ্রম, দুশ্চিন্তা, ভয় বা স্নায়ুর দুর্বলতা।
৫. হরমোনের তারতম্য (এডিসন্স ডিজিস)।
৬. অ্যালার্জির কারণে রক্ত বহনকারী শিরার প্রশস্ততা বেড়ে যাওয়া (এনাফাইলেকটিক শক)।
৭. হার্ট অ্যাটাক হওয়া বা হার্ট পাম্প করতে না পারা।
৮. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। অর্থাৎ কেউ হয়তো উচ্চ রক্তচাপের বা হার্ট অ্যাটাকের রোগী। সে ওষুধ খাচ্ছে; কিন্তু সেই ওষুধ পরিমাণে হয়তো বেশি হয়ে যাচ্ছে। তখন তার এটা হতে পারে। এসব কারণে হাইপোটেনশন হলে ওষুধের পরিমাণ কমাতে হবে।
৯. হার্ট ফেইলিওর, মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, হৃপণ্ডের ভাল্ব সমস্যা কিংবা খুব কম হার্ট রেট (ব্রাডিকার্ডিয়া)।

কারো কারো ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই প্রেসার কম থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে তিনি যদি কোনো অসুবিধা অনুভব না করেন, তবে এটা তার জন্য স্বাভাবিক। নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। মনে রাখতে হবে, নিম্ন রক্তচাপ কোন রোগ নয়, তাই একে রোগ বানানো কিংবা চিকিৎসারও দরকার নেই। হাইপোটেনশন হলো অন্য রোগের প্রকাশ। সুতরাং এর মূল চিকিৎসা হলো মূল রোগটি চিহ্নিত করা এবং তার চিকিৎসা করা।

হঠাৎ নিম্ন রক্তচাপ হলে করণীয়:

কারো হয়তো হঠাৎ নিম্ন রক্তচাপ ধরা পড়লে তাত্ক্ষণিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, তাকে পানীয় জাতীয় কিছু খেতে দেওয়া। যত দ্রুত সম্ভব তার শরীরে পর্যাপ্ত ফ্লুইড বা জলীয় পদার্থ প্রবেশ করাতে হবে। এধরণের পরিস্থিতিতে তাকে ডাব, স্যালাইন, চা, পানি, দুধ বা অন্য যেকোন তরল খাবার খাওয়াতে হবে। কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে, রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে আসছে।

নিম্ন রক্তচাপ প্রতিরোধে করণীয়:

১. সারাদিনই মাঝেমধ্যে হালকা খাবার খাওয়া। বেশি সময় উপোস বা খালি পেটে না থাকা।
২. অনেকক্ষণ একই স্থানে বসা বা শুয়ে থাকার পর সাবধানে ও ধীরে ওঠা।
৩. পুষ্টিকর খাবার, বিশেষ করে খাবারে আলু, ডিম, মাছ, মাংস, ছানা, বাদাম, সবুজ শাক নিয়মিত রাখা।
৪. খাদ্যতালিকায় লবণ স্বাভাবিক রাখা।
৫. পর্যাপ্ত পানি পান, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও হালকা ব্যায়াম করা।
৬. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা।
৭. বমি বা ডায়রিয়া হলে শরীরে পানির ভারসাম্য যাতে বহাল থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button