নিয়মিত টমেটো খেলে যে উপকার হয়
টুকটুকে লাল পাকা টমেটো, অথবা কচকচে কাঁচা টমেটো। একই সাথে ফল এবং সবজি। আর এই টমেটোর খাবারটা পছন্দ করে না এমন মানুষ কমই খুজে পাওয়া যাবে। রান্না করে বা কাঁচা অবস্থাতেই খাওয়া যায় এই টমেটো।
নিয়মিত টমেটো খান এবং অনেক রোগ-প্রতিরোধ করুন। তবে যেকোনো খাবার নিয়মিত খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। আসুন জেনে নেই নিয়মিত টমেটো খাওয়ার ফলে আপনার কি কি উপকার হবে।
১. সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে: টাটকা টমেটো কেটে টুকরো টুকরো করার পর সেগুলো থেকে রস করে নিন। তারপর এই রসের সাথে খানিকটা চিনি মেশান। এই চিনিমিশ্রিত রস প্রতিদিন মুখে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। এতে মুখের ত্বক মসৃণ ও কোমল হবে। বয়স বাড়লে মুখে যে বয়সের ছাপ পড়ে, টমেটো মাস্ক সেই ছাপ লুকিয়ে যেতেও সাহায্য করবে।
২. ত্বকের সুরক্ষা পাবে: এর বেটা ক্যারোটিন সূর্যের ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করতেও সাহায্য করে। আর এতে থাকা লাইকোপিন অতিবেগুনী রশ্মির ক্ষতি কমাতে ভূমিকা পালন করে। ফলে ত্বকে বলিরেখা পড়ার পরিমাণ কমে যায়। টমেটায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকে। ভিটামিন সি ত্বকে কলাজেন তৈরিতে কাজ করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক রক্ষায়ও সাহায্য করে। যার ফলে ত্বকের বিভিন্ন ক্ষত দূর করতে টমেটার ভূমিকা অনেক।
৩. ডিএনএ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচবে: টমেটায় প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকে। তাই এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের যে কোন ধরনের ক্ষতিকর রোগকে নিরাময় করে। ফলে দেহের মধ্যে থাকা ডিএনএ কে রক্ষা করতে টমেটার অনেক ভূমিকা। আর ডিএনএ ভাল থাকলে দেহের কোন ক্যানসার আক্রান্ত করতে পারে না।
৪. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ হবে: টমেটো উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সাহায্য করবে। উচ্চ রক্তচাপ যে কারো জন্য অনেক কঠিন একটি সমস্যা। তাই এখন থেকে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি বা দুটি টমেটো খাওয়ার অভ্যাস করুন। সাথে কিছু চিনিও মিশিয়ে নিতে পারেন।
৫. রক্ত স্বল্পতা দূর হবে: যারা রক্ত স্বল্পতা বা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন, তাদের জন্য টমেটো বেশ উপকারী সবজি বা ফল। প্রতিদিন এক বা দুইবার একটি আপেল, একটি টমেটো এবং ১৫ গ্রাম তিল একসাথে খাবেন। এতে রক্ত স্বল্পতার সমস্যা অনেকটাই দূর হতে পারে।
৬. ক্ষত নিরাময় হবে: আমাদের অনেকের মুখের ভিতরে মাঝে মাঝে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এখন থেকে আর চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। এই সমস্যা সমাধানেও টমেটো সবার আগে এগিয়ে আসবে। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় একবার করে টমেটোর রস খান। দেখবেন, দিন কয়েকের মধ্যে ক্ষত দূর হয়ে যাবে।
৭. রক্তের দূষণ দূর হবে: টমেটোর গুণের কথা বলার মাঝে আপনাদের একটি মজাদার খাবার রান্না শিখিয়ে দিচ্ছি। এ খাবারের নাম ‘সবজি চাল স্যুপ’। এমন নাম শুনছেন, এই ডিশের প্রধান উপাদান হচ্ছে, টমেটো, সেলারি, গাজর এবং চাল। এ ছাড়া, পরিমাণমতো লবণ দিতে পারেন। এই ডিশ রক্তের দূষণ দূর করতে খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
৮. সর্দি-কাশি প্রতিরোধ করবে: টমেটো আপনাকে সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা করতে পারে। এক বা দুটি টমেটো নিয়ে স্লাইস করে অল্প চিনি বা অল্প লবণ দিয়ে পাত্রে গরম করে স্যুপ তৈরি করুন। তারপর গরম গরম খেয়ে নিন। উপকার পাবেন।
৯. জ্বর কমবে: সামান্য জ্বর হলে অনেক সময় স্রেফ টমেটো খেলেই আরাম পেতে পারেন। এক্ষেত্রে টমেটোর রসের সাথে তরমুজের রস মিশিয়ে খাবেন। ঘন্টায় ঘন্টায় একটু একটু করে খেতে থাকুন। জ্বর পালাবে।
১০. মাড়ি থেকে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ হবে: আপনার মাড়ি থেকে রক্তপাতের কারণ ভিটামিন সি-এর অভাব আছে। যাদের মাড়ি দিয়ে রক্তপাত হয়, তাদের অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে, প্রতিদিন একটি করে টমেটো খেলে দিন পনের পর দেখবেন রক্তপাত আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে গেছে।
১১. স্ট্রোক প্রতিরোধ হবে: টমেটার গুন অনেক। এই টমেটোর পুষ্টিগুণ মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ায়, যা স্ট্রোক প্রতিরোধ করে। যখন মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, তখন স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদি বংশে এই ধরনের রোগের প্রবণতা থাকে, তবে নিয়মিত টমেটো খাওয়া উচিত।
১২. হাড় শক্ত করবে: অনেকে বিশ্বাস নাও করতে পারেন, কিন্তু এটা সত্য যে টমেটোর মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের জন্য অনেক উপকার এবং অস্টিওপরোসিস রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। আপনার যদি হাড় দুর্বল থাকে, তবে অবশ্যই টমেটো খান। আর এর মধ্যে থাকা লাইকোপিন যা হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতেও সাহায্য করে।
১৩. ক্যানসার প্রতিরোধ হবে: টমেটোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যেমন- লাইকোপিন। তাই এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের ফ্রি রেডিকেলস দূর করে এবং ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। আর ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। টমেটোর কারণে ডিএনএ সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
১৪. প্রদাহ দূর হবে: প্রদাহের একটি কারণ টিএনএফ-আলফা। টমেটোর কারণে শরীরে টিএনএফ-আলফার মাত্রা কমিয়ে রাখে। এতে শরীরে প্রদাহ কমে যায়। কাজেই টমেটোর জুস পান করে শরীরের জ্বালাপোড়া দূর করতে পারেন।