স্বাস্থ্য

প্যাথলজিক্যাল লায়ার : কারণ ছাড়া মিথ্যা বলার মানসিক রোগ

সমাজে চলতে গিয়ে, নিজেকে লজ্জাজনক পরিস্থিতি বা বিপদ থেকে বাঁচাতে আমরা অনেকসময় মিথ্যে বলে থাকি। সেই মিথ্যে কথা খুব তুচ্ছ আর প্রভাবহীন হতে পারে। আবার অনেক বড় ও ক্ষতিকর মিথ্যে কথাও বলে থাকে মানুষ। কিন্তু প্যাথলজিক্যাল লায়ারদের ব্যাপারটা একেবারেই অন্যরকম। তারা মিথ্যে কথা বললেও কোনো কারণ ছাড়াই সেটা বলে থাকে। এটি সহজাতভাবেই তাদের মধ্যে চলে আসে। বাজে অভ্যাস নয়, এটি একরকমের মানসিক সমস্যা। চলুন না, এ নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-

মিথ্যে কথা বলার মোট দুটো ধরন আছে। একটি হলো- প্যাথলজিক্যাল লাই এবং অন্যটি হলো ননপ্যাথলজিক্যাল লাই। ননপ্যাথলজিক্যাল লায়ার হওয়া কোনো মানসিক সমস্যার অন্তর্গত নয়। এক্ষেত্রে কোনো একটি কারণকে সামনে রেখেই একজন মানুষ মিথ্যে কথা বলে থাকে।

অন্যদিকে, প্যাথলজিক্যাল লায়ার কোনো কারণে মিথ্যে বলেন না। এমন নয় যে, তার কোনো সুবিধা হচ্ছে বা সে কোনো সমস্যা থেকে বেঁচে যাচ্ছে মিথ্যে বলার মাধ্যমে। এটি তার স্বভাবজাত। কিছু না ভেবে, কোনো পরিকল্পনা না করেই এ ক্ষেত্রে মিথ্যে বলে তারা। যেটি সামাজিক আবহ ও বন্ধুমহল থেকে তাদের ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।

এমন মিথ্যে বলার কারণ কী?

সত্যিই তো! কোনো কারণ না থাকলে একজন মানুষ কেন শুধু শুধু মিথ্যে বলবে? এতে তার লাভটা কী? এখন পর্যন্ত প্যাথলজিক্যাল লায়িংয়ের কোনো নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করা যায়নি। হতে পারে এটি কোনো সমস্যার একটি লক্ষণ। আবার হতে পারে যে এটি নিজেই মূল সমস্যা। তবে হ্যাঁ, অন্যান্য অনেক মানসিক সমস্যার সাথে এই প্যাথলজিক্যাল লায়িংকে মিলিয়ে নেওয়া যায়।

ফ্যাক্টিশাস ডিজঅর্ডার:-

অনেকসময় অসুস্থতা সংক্রান্ত ব্যাপারে একজন ব্যক্তি মিথ্যে বলে থাকেন। বিশেষ করে মায়েদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি বেশি দেখা যায়। মায়েরা তাদের সন্তানের শরীর সম্পর্কে চিন্তিত থাকেন এবং চিকিৎসকের কাছে সন্তানের অসুস্থতা আছে বলে মিথ্যে কথা জানান। এর অন্য নাম মানশসেন ডিজঅর্ডার। এই সমস্যাটির পেছনে সবচাইতে বেশি কাজ করে-

কম বয়সে হেনস্থার শিকার হওয়া
বংশগত সমস্যা
আত্মবিশ্বাসের অভাব
হতাশা
পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার ইত্যাদি।

পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার-

পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের অংশ হিসেবে প্যাথলজিক্যাল লায়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার, নার্সিস্টিক পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার এবং এন্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার- তিনটি ক্ষেত্রেই এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এই সমস্যার ক্ষেত্রে মানুষের মানসিক অবস্থা খুব দ্রুত বদলে যায়। আর এই মন বদলে যাওয়ার সময় একটু ভালো থাকার জন্য, ভালো বোধ করার জন্য মানুষ কিছু চিন্তা না করেই মিথ্যে কথা বলে ফেলে।

ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া-

স্মৃতিহীনতার একটি অবস্থার নাম হলো ফ্রন্টোটেম্পোরাল ডিমেনশিয়া। এক্ষেত্রে একজন মানুষের আচরণ বদলে যেতে পারে, তার খাবারের পছন্দ বদলে যেতে পারে। একইসাথে, মিথ্যে কথা বলার প্রবণতাও বাড়তে পারে।

লক্ষণ-

আপনি যদি ভেবে থাকেন যে প্যাথলজিক্যাল লায়িং মানেই অনেক বেশি মিথ্যে বলা, তাহলে সেটা একেবারেই ভুল। একজন প্যাথলজিক্যাল লায়ার সবসময় মিথ্যে বলেন না। বললেও তাদের মিথ্যায় প্রচুর খুঁটিনাটি থাকে। আপনি যদি চান তাহলে তার দেওয়া তথ্যগুলো ব্যবহার করে সে মিথ্যে বলছে কিনা তাও যাচাই করে নিতে পারবেন। সাধারণত, পরিবার ও চারপাশের মানুষগুলোর সাথে কথা বলে এবং কিছু ঘটনা পর্যবেক্ষণ করার পর প্যাথলজিক্যাল লায়ারকে শনাক্ত করেন চিকিৎসক।

সমাধান কী?

একজন মানুষ কেন মিথ্যে বলছেন সেই কারণ কোনোভাবে খুঁজে পাওয়া গেলে তারপরই এই মিথ্যে বলার সমস্যাটিকে দূর করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পাশাপাশি পরিবারের সাহায্যটাও খুব জরুরি।

একজন প্যাথলজিক্যাল লায়ারের সাথে কথা বলা বা মানিয়ে নেওয়া কঠিন। তবে, এটা মাথায় রাখুন যে, সে আপনার ক্ষতির জন্য মিথ্যে বলছে না। তাকে ভয় না পেয়ে, তার থেকে দূরে না সরে গিয়ে সাহায্য করুন। এতে করে একজন প্যাথলজিক্যাল লায়ারও খুব সহজেই সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button