স্বাস্থ্য

যে খাবারগুলো চিনির মতোই ক্ষতিকারক

চিনি শরীরের জন্য। ক্ষতিকর। তবে তার মানে এই নয় যে, চিনির চাইতে ক্ষতিকর কিছু হতে পারে না। চিনি নেই এমন খাবার গ্রহণের মাধ্যমে হয়তো চিনির কোনো বিকল্প কিছুই নিজেক খাচ্ছেন বা সন্তানকে খাওয়াচ্ছেন আপনি। ‘সুগার ফ্রি’ এমন অনেক খাবারেই মিশে থাকে চিনির মতোই ক্ষতিকারক বিকল্প উপাদান। চলুন, এমন কম চিনি এবং ক্ষতিকারক বিকল্প উপাদান মিশ্রিত কিছু উপাদানের কথা জেনে নেওয়া যাক-

পুষ্টিহীন মিষ্টি উপাদান বা নননিউট্রিটিভ সুইটেনার কী?

নননিউটিটিভ সুইটেনার এমন একটি উপাদান, যেটি খাবারকে মিষ্টি করার ক্ষেত্রে চিনির কাজ করে। বর্তমানে প্রতি চারজন শিশুর মধ্যে একজন এই উপাদান গ্রহণ করছে এবং প্রতিদিন এদের মধ্যে প্রায় আশি শতাংশ এমন উপাদান খাচ্ছে। এমন কিছু নননিউট্রিটিভ সুইটেনার সম্পর্কে চলুন জেনে নেই-

১। স্যাকারিন:-

সাধারণত দই এবং চিনিহীন জেলিতে এই উপাদান ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসকদের মতে, এই উপাদানটি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে শুরু করে ক্যানসারের মতো বড় ব্যধি তৈরির ক্ষেত্রেও এই স্যাকারিন কাজ করে।

২। অ্যাস্পারটেম:-

নানারকম কোমল পানীয় ও সোডাতে এই উপাদানটি ব্যবহার করা হয়।

৩। এইসসালফেম পটাশিয়াম:-

অনেক শুকনো ফলেই আপনি এই উপাদান খুঁজে পাবেন। এছাড়া ডায়েট করার জন্য চিনিহীন যে খাবারগুলো আমরা গ্রহণ করি সেগুলোতেও এইসসালফেম পটাশিয়াম থাকে। একে অনেকে এইসসালফেম কে বলে চেনে।

৪। সুক্রালোজ:-

ডায়েট সোডা থেকে শুরু করে অধিকাংশ খাবারেই এই সুক্রালোজ খুঁজে পাওয়া যায়।

৫। নিওটেম:-

চুইংগাম ও প্রোটিন শেকসহ বেশ কিছু খাবারে এই উপাদানটি খুঁজে পাওয়া যায়।

৬। অ্যাডভান্টেম:-

কেক বা বেকারি খাবারে অ্যাডভান্টেম নামের এই উপাদানটি পাওয়া যায়।

৭। স্টেভিয়া:-

স্টেভিয়াকে স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

৮। মংক ফ্রুট বা লু হ্যান গো:-

স্টেভিয়াকে স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

সুইটেনার আমাদের শরীরকে কতটা প্রভাবিত করে?

সুইটেনার আমাদের শরীরের ওজনকে নিয়ন্ত্রণ করতে বা বাড়াতে কতটা প্রভাব রাখে সেটা সম্পর্কে এখনো চিকিৎসকেরা নিশ্চিন নন। তবে আমাদের গাট মাইক্রোবায়োম, ক্ষুধাবোধ এবং স্বাদের প্রতি আগ্রহকে অনেকটা প্রভাবিত করে সুইটেনার। আমাদের হজমক্ষমতাকেও এটি নিয়ন্ত্রণ করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাবা-মা জানতে পারেন না যে, তাদের সন্তান ক্ষতিকারক সুইটেনার খাচ্ছে।

এক গবেষণায় দেখা যায় যে, মোট ২৩ শতাংশ বাবা-মা আসলেই বুঝতে পারেন না যে এই সুইটেনার তাদের সন্তানের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। বাকি ৫৩ শতাংশ বাবা-মা চিনির ক্ষতিকর প্রভাবের কথা ভেবে সুইটেনার খাওয়ান তাদের সন্তানকে এবং সেটা এর ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে না জেনেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে বড়দের শরীরে সুইটেনার যে প্রভাব রাখে তারচাইতে আলাদা প্রভাব ছোটদের শরীরে রাখতে পারে। আর সেটা নির্ভর করে শারীরিক অবস্থার উপরে ভিত্তি করে। সেক্ষেত্রে যেটি প্রাথমিকভাবে দরকার তা হলো, কোন খাবারে কী সুইটেনার মেশানো হচ্ছে তার নাম ও পরিমাণ উল্লেখ থাকা। এতে করে সেটা কার জন্য কতটুকু পরিমাণে নিরাপদ বা আদৌ নিরাপদ কিনা সেটা বোঝা সম্ভব হবে।

শিশুর জন্য কোন খাবারটি বাছবেন?

আপনি হয়তো ভাবছেন, তাহলে কোন খাবারটি আপনার জন্য বা আপনার শিশুর জন্য বাছবেন। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন খাবারে ব্যবহৃত উপাদানের ওপরে। এছাড়া চেষ্টা করুন প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খেতে এবং বেশি বেশি প্রাকৃতিক খাবার খেতে। আপনার শিশু মিষ্টি কিছু খেতে চাইলে ফল বা ফলের রস খেতে দিন। প্রাকৃতিকভাবে যতটা মিষ্টি সেটাই যেন সে পায়। বাড়তি মিষ্টি ব্যবহার হয়েছে এমন খাবার না দেওয়ার চেষ্টা করুন।

আপনার এই ছোট্ট উদ্যোগটি হয়তো খুব বেশি পরিবর্তন আপাতদৃষ্টিতে আপনার জন্য আনবে না। তবে আপন এবং আপনার শিশুটি এতে করে অনেক বেশি সুস্থ থাকবে। সুস্থতার জন্য এটুকু তো করাই যায়, তাই না?

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button