শর্করাকে অ্যালকোহলে পরিণত করে গাট ব্যাকটেরিয়া
গাট ব্যাকটেরিয়া বা অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর। তবে সেটা কিন্তু সবসময় নয়। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, গাট ব্যাকটেরিয়ার কারণে আমাদের ফুসফুস বাজেভাবে আক্রান্ত হতে পারে। এর প্রধান কারণ হলো, গাট ব্যাকটেরিয়ার শর্করাকে অ্যালকোহলে পরিণত করার ক্ষমতা।
গবেষকরা জানিয়েছেন যে, ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়া নামক গাট ব্যাকটেরিয়ার কারণে অ্যালকোহল পান না করলেও আমাদের রক্তের অ্যালকোহলের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। আর এতে করে শারীরিক নানারকম সমস্যাও তৈরি হয়। সাধারণত ননঅ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ নামক এই সমস্যায় একজন মানুষের ফুসফুসে ফ্যাট জমা হওয়া শুরু হয়।
২০১৯ সালে করা এক পরীক্ষায় জানা যায় যে, পুরো বিশ্বে বর্তমানে এই সমস্যার ভুক্তভোগী মানুষের পরিমাণ প্রায় ২৫ শতাংশ। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে সাধারণ ফুসফুসের ফ্যাট বা অ্যালকোহলহীন ফুসফুসের ফ্যাট- এই দুটোই দেখা যায়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দীর্ঘকালীন ফুসফুসের সমস্যার সাথে এই সমস্যার কোন সংযোগ থাকে না। এছাড়াও ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ডায়াবেটিস এন্ড ডাইজেস্টিভ এন্ড কিডনি ডিজিজের মতে, শতকরা ১২ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ননঅ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজের চাইতে বেশি ননঅ্যালকোহলিক স্টেথোহেপাটাইটিস দেখা যায়। যেটা কিনা মোটেও ইতিবাচক কোন ব্যাপার নয়। এটি দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুসের ক্যানসারও তৈরি করতে পারে।
যদি এখনো পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে এই দুটো ভিন্ন রোগ হওয়ার কারণ সঠিকভাবে ধরা যায়নি। তবে সম্প্রতি মাইক্রোবায়োমকে এক্ষেত্রে অনেকটা দায়ী বলে মনে করছেন গবেষকেরা। এক্ষেত্রে, ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়া আমাদের শরীরের কার্বোহাইড্রেটকে অ্যালকোহলে পরিণত করে এবং ফুসফুসের ক্ষতি সাধন করে।
অটো ব্রিউয়ারি সিনড্রোম-
চিনের বেইজিং-এ ক্যাপিটাল ইন্সটিটিউট উব পেডিয়াট্রিক্স এবং মিলিটারি মেডিকেল সায়েন্সেস, দ্য বেইজিং ইন্সটিটিউট অব মাইক্রোবায়োলজি এন্ড এপিডেমিওলজি ও চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের এক গবেষণায় ‘অটো-ব্রিউয়ারি সিনড্রোম’এর কথা বলা হয়েছে। যেটির কারণ হিসেবে প্রথমে ছত্রাককে দায়ী করলেও, পরবর্তীতে চিকিৎসায় কোন প্রভাব না পরায় অন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন গবেষকেরা।
গবেষণাগারে অ্যালকোহল উৎপাদনের পেছনে আসলেই গাট ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব দেখা যায়। যেখানে ব্যক্তির অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে নিজ থেকেই গ্রহণ করা শর্করা অ্যালকোহলে পরিণত হয় এবং ফুসফুসের জন্য চর্বি উৎপন্ন করে।
এক্ষেত্রে গবেষকরা কয়েকজন মানুষের উপরে পরীক্ষা চালান এবং কীভাবে ননঅ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজের পরিমাণ খুঁজে পাওয়া যাবে সেটা বের করার চেষ্টা চালান। এদের সবাইকে গ্লুকোজ মেশানো পানি পান করানো হয়। মানুষের শরীরের গ্লুকোজ সহ্য করার ক্ষমতাকে রক্তে অ্যালকোহল উৎপাদনকারী জীবাণু, কে নিউমোনিয়া, খুঁজে পাওয়ার ভালো উপায় বলে মনে করছেন তারা।
কী হবে যদি এমন ফ্যাটি লিভার ডিজিজ আপনার মধ্যে ধরা পড়ে? কোন সমস্যা নেই! গবেষকদের মতে, প্রথমদিকে এই সমস্যা ধরা পড়লে সেটা খুব দ্রুত ঠিক করে ফেলা সম্ভব। তবে তার জন্য এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং খুব দ্রুত সমস্যাকে চিহ্নিত করাটা প্রয়োজন।
কে নিউমোনিয়া কি ফুসফুসের ফ্যাটি লিভার ডিজিজ তৈরি করে?
খুব ভালো করে এই উত্তরটি জানার জন্য চিকিৎসকেরা গবেষণাগারে গাট ব্যাকটেরিয়া নেই এমন কিছু ইদুরের উপরে পরীক্ষা চালান। একদল ইঁদুরের শরীরে এক্ষেত্রে কে নিউমোনিয়া জীবাণু প্রবেশ করানো হয়। কয়েক সপ্তাহ পরে দেখা যায় যে, অন্য যে ইঁদুরের দলকে টাকা আট সপ্তাহ অ্যালকোহল পান করানো হয়েছে, তাদের রক্তে অ্যালকোহলের পরিমাণ এবং কে নিউমোনিয়া আছে এমন ইঁদুরের রক্তের অ্যালকোহলের পরিমাণ এবং এবং উভয় দলের ইঁদুরের ফুসফুস একইরকমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
তাই, এখন শুধু অ্যালকোহল পান করলেই যে আপনার ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা নয়। ফুসফুসকে সুস্থ রাখতে অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকার সাথে সাথে গাট ব্যাকটেরিয়ার ব্যাপারে জানুন এবং চিকিৎসকের সাথে পরামর্শের মাধ্যমে শর্করা গ্রহণকে যতটা সম্ভব কমিয়ে আনুন।