স্বাস্থ্য

হাইপোকন্ড্রিয়া : অসুস্থতা যখন অসুখের কারণ

হাইপোকন্ড্রিয়া:
মানুষ অসুস্থতা নিয়ে চিন্তা করবে উদ্বিগ্ন হবে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই চিন্তার পরিমাণ যখন অস্বাভাবিকতার পর্যায়ে চলে যায় তখন সেটাকে হাইপোকন্ড্রিয়া বলা হয়। এ ক্ষেত্রে একজন মানুষ সুস্থ থাকাকালীনও অসুস্থতা নিয়ে প্রচণ্ড ভয়ে থাকেন। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না।

বারবার চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এবং কোনো অসুস্থতা খুঁজে না পেলেও বড় কোনো সমস্যা হয়েছে সেটা ভাবা, এই লক্ষণগুলো হাইপোকন্ড্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়।

হাইপোকন্ড্রিয়া কী?

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি পরীক্ষা অনুসারে, হাইপোকন্ড্রিয়া হলো একজন মানুষের মধ্যে সবসময় বড় রকম অসুখ হয়েছে এমন ভয় বিদ্যমান থাকা। এ ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি সবসময় নিজেকে অসুস্থ ভাবেন এবং সেটা নিয়ে চিন্তা করতে থাকেন। আর এই অতিরিক্ত চিন্তা আর ভয়ই একটা সময় তার অসুস্থতায় পরিণত হয়। অন্যভাবে একে সোম্যাটিক সিম্পটম ডিজঅর্ডারও বলা হয়। ব্যক্তিভেদে এর পরিমাণ ভিন্ন হয়।

লক্ষণগুলো কী?

হাইপোকন্ড্রিয়ার মূল লক্ষণগুলো হচ্ছে-

স্বাভাবিক ঘটনায় ভয় পাওয়া-

একজন সুস্থ মানুষের মধ্যে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, ঘেমে যাওয়া, পেটে সমস্যা দেখা দেওয়া ইত্যাদি হতেই পারে। এর পেছনে কোনো বড় কারণ যে থাকতে হবে তা নয়। হাইপোকন্ড্রিয়ায় আক্রান্ত একজন মানুষ এমন স্বাভাবিক ছোটখাটো সমস্যা দেখা দিলেও প্রচণ্ড ভয় পান এবং বড় কোনো অসুখ হয়েছে বলে ভাবেন।

চিকিৎসকের সাথে বারবার দেখা করা-

শরীরে ছোটোখাটো কোনো পরিবর্তন দেখা দিলেই বা কোনো কারণ ছাড়াই চিকিৎসকের সাথে বারবার দেখা করেন হাইপোকন্ড্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি।

হাইপোকন্ড্রিয়ার প্রভাব ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কেউ নিজের নির্দিষ্ট কোনো শারীরিক অঙ্গ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। কেউ আবার কোনো একটি অসুখ হয়েছে এমন সন্দেহ নিয়ে এগোতে থাকেন। অন্যরা একের পর এক অসুখের ব্যাপারে সন্দেহ করতে শুরু করেন।

নিয়মিত অসুখ নিয়ে কথা বলা-

হাইপোকন্ড্রিয়ায় আক্রান্ত একজন ব্যক্তি বারবার সচেতন বা অসচেতনভাবে অসুখের ব্যাপারে কথা বলতে থাকেন।

অসুখ নিয়ে বেশি উৎসুক হন-

এই সমস্যায় আক্রান্তরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইন্টারনেটে বা অন্য কোনো মাধ্যমে অসুখের ব্যাপারে পড়াশোনা চালিয়ে যান।

পরীক্ষার ফলাফলকে বিশ্বাস না করা-

চিকিৎসক পরীক্ষার মাধ্যমে যদি জানান যে আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক কোনো সমস্যা নেই, সেক্ষেত্রে তিনি ভয় পান যে পরীক্ষা ঠিকভাবে হয়নি। অন্যরা তাকে আর বিশ্বাস করতে চাইবে না এমন ভয় পেয়েও আরও মুষড়ে পড়েন।

চিকিৎসককে এড়িয়ে চলা-

নিজের বড় কোনো সমস্যা হয়েছে এমন চিন্তা মাথায় রেখে চিকিৎসকদের কাছে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন অনেকে। শুধু তাই নয়, মানুষের কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে চান তিনি। টানা ৬ মাসের বেশি এমন সমস্যা দেখা দিলে সেক্ষেত্রে একে সোম্যাটিক সিম্পটম ডিজঅর্ডার বলা যায়।

সম্ভাব্য কারণ কী?

প্রত্যেকটা সমস্যার পেছনেই থাকে কারণ। হাইপোকন্ড্রিয়ার পেছনে কোনো কারণ কাজ করে তা নিয়ে নির্দিষ্টভাবে জানা সম্ভব না হলেও, এক্ষেত্রে-

● নিজের শারীরিক স্বভাবিকতাকে না বোঝা বা বিশ্বাস না করা
● পরিবারে অন্য কারো হাইপোকন্ড্রিয়া থাকা
● পূর্বে বড় কোনো অসুখে পড়া
● হতাশা বা অন্য কোনো মানসিক সমস্যা থাকা ইত্যাদির কারণে এমন সমস্যা তৈরি হতে পারে।

এমনটা হলে আক্রান্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং নিজের অসুস্থতার প্রতিকার নিজে করতে গিয়ে শরীরের ওপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেন। এছাড়াও, সবসময় একরকম ভয়ে থাকার ফলাফল হিসেবে মানসিকভাবে ও সামাজিকভাবে অনেক বেশি সমস্যায় পড়েন তারা।

আপনার পাশের মানুষটির যদি হাইপোকন্ড্রিয়া থাকে তাহলে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। মানসিক সাহায্য নিলে এবং আপনার সহযোগিতা পেলে হাইপোকন্ড্রিয়ার ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে সুস্থ হওয়াটা বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই হাল না ছেড়ে দিয়ে প্রিয় মানুষটিকে বোঝান। তার পাশে থাকুন, সবসময়।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button