আন্তর্জাতিক

অধরাই থাকল বিক্রম! নাসার দ্বিতীয় প্রচেষ্টাও ব্যর্থ

সম্প্রতি চাঁদে অভিযানে গিয়েছিল ভারতের চন্দ্রযান-২। কিন্তু সেই অভিযান ব্যর্থ হয়েছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সাম্প্রতিকতম ছবিতেও ধরা পড়ল না ভারতের চন্দ্রযান ২-এর অবতরণযান বা ল্যান্ডার বিক্রম। অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চাঁদের মাটিতে পা রাখার সময়, ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যায় বিক্রমের। সেই থেকে বিক্রম অধরাই।

চন্দ্রপৃষ্ঠে সফট ল্যান্ডিং করার কথা থাকলেও, শেষমুহূর্তে বিক্রমের সঙ্গে ইসরোর নিয়ন্ত্রণ ছিন্ন হওয়ায়, তা সম্ভবপর হয়নি। চাঁদের বুকে যে জায়গায় বিক্রম নেমেছিল, সেই ছবি নাসার ক্যামেরায় ইতিপূর্বেই ধরা পড়েছে। তবে, নাসার তোলা চাঁদের একদম সাম্প্রতিকতম ছবিতে বিক্রমকে দেখা যাচ্ছে না। দ্বিতীয় এই প্রচেষ্টাতেও চন্দ্রযান ২-এর অরবিটারের সন্ধান দিতে ব্যর্থ হলো নাসা।

ইসরো এখনও বিক্রম নিয়ে আশা ছাড়তে নারাজ। চন্দ্রযান-২ এর অরবিটারই এই আশা জোগাচ্ছে। ইতিমধ্যে চন্দ্রপৃষ্ঠের একগুচ্ছ ছবি পাঠিয়েছে চাঁদের কক্ষপথে ঘুরতে থাকা অরবিটার। ইসরোর মহাকাশ বিজ্ঞানীরা আশাবাদী অরবিটারের শক্তিশালী ক্যামেরাতেই ধরা পড়তে পারে বিক্রম ল্যান্ডার।

চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল গত ২২ জুলাই। এই রকেটের রয়েছে তিনটি ভাগ: একটি অরবিটার, অবতরণযান বা ল্যান্ডার বিক্রম এবং প্রজ্ঞান নামে ছয়-চাকার একটি রোবট-চালিত গাড়ি। লক্ষ্য ছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করা।

ভারতীয় সময় গত ৬ সেপ্টেম্বর (ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ৭ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে দুটা নাগাদ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা ছোঁয়াতে যাওয়ার সময় চন্দ্রযান-২-এর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ল্যান্ডার বিক্রম এখন ঠিক কোথায় রয়েছে, কী অবস্থায় রয়েছে, তা জানা গেল না।

এর আগে ভারত চন্দ্রযান-১ নামে একটি রকেট পাঠিয়েছিল, যেটি চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে জলের কণার অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিল। ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীরা আশায় ছিলেন চন্দ্রযান-২ তাঁদের সেই আবিষ্কারকে আরও একধাপ এগিয়ে নেবে। চাঁদের দক্ষিণ মেরু সূর্যের কাছ থেকে আড়াল থাকে বলে সেখানে তাপমাত্রা কম, এবং সেখানে জলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন।

এদিকে, চন্দ্রযান ২-এর অরবিটার চাঁদের বিভিন্ন গহ্বরের আরও কিছু ছবি তুলে পাঠিয়েছে।

ইসরো জানিয়েছে, চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে করতে খুব ভালো কাজ করছে চন্দ্রযান-২-এর অরবিটার। অরবিটারে থাকা সর্বাধুনিক ‘ডুয়াল-ফ্রিকোয়েন্সি সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (ডিএফ-এসএআর)’ চাঁদের পিঠে বেশ কয়েকটি অজানা, অচেনা গহ্বরের ছবি খুব কাছ থেকে তুলতে পেরেছে। যেগুলির মধ্যে যেমন রয়েছে কয়েকশ’ কোটি বছরের পুরনো গহ্বর, তেমনই রয়েছে হালে তৈরি হওয়া কয়েকটি গহ্বরও।

চাঁদে দু’ধরনের গহ্বর রয়েছে। এক ধরনের গহ্বর সৃষ্টি হয়েছে আগ্নেয়গিরি থেকে। যে আগ্নেয়গিরিগুলি এখন আর নেই। এই গহ্বরগুলিকে বলা হয় ‘ভলক্যানিক ক্রেটার’। কয়েকশ’ কোটি বছর ধরে চাঁদের পিঠে বিভিন্ন দিক থেকে আসা উল্কা, উল্কাপিণ্ড বা গ্রহাণু আছড়ে পড়ে আরও এক ধরনের গহ্বর তৈরি হয়েছে। এই গহ্বরগুলিকে বলা হয় ‘ইমপ্যাক্ট ক্রেটার’। প্রচণ্ড গতিবেগে ছুটে এসে উল্কা বা গ্রহাণু আছড়ে পড়ার ফলে চাঁদের বুকে তৈরি হওয়া এই ইমপ্যাক্ট ক্রেটারগুলির গভীরতা অনেক বেশি হয়।

ইসরোর বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, চন্দ্রযান-২-এর অরবিটার নিখুঁতভাবে ছবি তুলতে পারায়, চাঁদের বুকের অন্দরে কী কী পদার্থ রয়েছে, কতটা জল রয়েছে, সেই অনুসন্ধানের কাজটা সহজতর হতে পারে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button