আন্তর্জাতিক

অ্যামাজনে অস্তিত্ব রক্ষার পাহারা

পৃথিবীতে একাধিক গহিন অরণ্য রয়েছে। যেখানে সবার পক্ষে আজও যাওয়া সম্ভব হয়নি। যেমন কঙ্গো রেইন ফরেস্ট, বর্নিও রেইন ফরেস্ট ও অ্যামাজন রেইন ফরেস্ট। এর মধ্যে অ্যামাজন রেইন ফরেস্ট সবার জন্য অত্যন্ত কঠিন প্রবেশ করা। এটিতে এমন কিছু অঞ্চল রয়েছে যেখানে সূর্যের আলো পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। অ্যামাজন জঙ্গলে অনেক আদিবাসীরা বাস করেন। তারা চান নিজেদের অরণ্যের মধ্যে লুকিয়ে রাখতে। সেখানেই বসবাস করতে। তারা নিজেদের ভূমিকে আগলে রাখতে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধও করে যান।

বর্তমানে অ্যামাজন জঙ্গলের গহিন ভূমি নিয়ে যুদ্ধের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। জঙ্গলটি থেকে অবৈধভাবে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে কিছু ব্যবসায়ীরা। এর ফলে অনকেটাই হুমকির মধ্যে পড়েছে সেখানকার আদিবাসী ও উপজাতিদের জীবন। অ্যামাজনের গহিন অরণ্যে বসবাস করে টেম্বা নামের একটি উপজাতি। অবৈধভাবে গাছ কেটে নেওয়ায় হুমকির মধ্যে পড়েছে তাদের আবাসস্থল। তাই আবাসস্থাল রক্ষা করতে যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন তারা। নিজেদের ভূমি রক্ষা করতে পাহারা দেওয়া শুরু করেছেন। পাহারা দেওয়ার সময় ধনুক ও তীর বহন করতে দেখা যায় তাদের।

আবহাওয়া, ভৌগোলিক অবস্থান, ক্রমাগত বিরূপভাবে পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক জলবায়ু, মানুষের করাল আঘাতসহ নানা কারণে ধ্বংস হচ্ছে অ্যামাজন। গত ৪০ বছরে অ্যামাজনের শতকরা প্রায় ২০ ভাগ ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। ২০০৪ সালে আমাজনের ২৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার বন উজাড় হয়েছিল, যা একটি রেকর্ড। সয়া এবং গম চাষ অ্যামাজন রেইন ফরেস্ট উজাড়ের জন্য অনেকটা দায়ী। পারার কাছের শহর গড়ে তুলতে ৪০০ হেক্টর জমি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল অ্যামাজনের। বন উজাড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে সেখানকার কাঠ। অবৈধভাবে উজাড় হওয়া আমাজন এখন চারণ ভূমি হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এই কারণে ওই অঞ্চলটির উপজাতিদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিজেদের ভূমি রক্ষা করতে নিজেরাই হাতে তুলে নিয়েছেন তীর ও ধনুক।

সমস্যাটি আসলে অনেক পুরোনো। কিন্তু নতুন করে বাড়ছে উত্তেজনা। চলতি বছরের আগস্ট মাসে টেম্বা উপজাতি জঙ্গলে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের দূরে থাকার জন্য সতর্ক করে দেয়। কিন্তু ক্রমাগত বাড়ছে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা। সেই সঙ্গে জঙ্গল কেটে উজাড় করছে অবৈধ ব্যবসায়ীরা। একদিন উপজাতিরা দেখতে পান, ব্রাজিলের অংশে স্থানীয় টেকোহাও গ্রামের বাসিন্দারা চেইন করাত, ট্রাক ও ট্রাক্টর ব্যবহার করে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এই ঘটনার ভিডিও করে রাখে সেখানকার উপজাতিরা। একপর্যায়ে তারা ওই ব্যক্তিদের নিষেধ করেন এবং ধরে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা পালিয়ে যান। তারপর উপজাতিরা চেইন করাত, ট্রাক ও ট্রাক্টরটিকে আগুন দিয়ে ঝলসিয়ে দেয়।

সম্প্রতি জঙ্গলে পাহারা দিচ্ছিলেন রনিলসন টেম্বা নামের এক তরুণ। তাকে ছদ্মবেশ ধারণ করে তীর ও ধনু বহন করতে দেখা যায়। রনিলসন বলেন, আমরা তাদের যন্ত্রপাতি ধ্বংস করেছি কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের জীবন ধ্বংস করে চলেছে। জঙ্গলে বসবাস করা মানুষদের জীবন ধ্বংস করে চলছে তারা।

সার্জিও মুক্সি টেম্বা নামের জঙ্গলের আরেক বাসিন্দা বলেন, যতোদিন যাচ্ছে ততোই বেড়ে চলছে তাদের আক্রমণের মাত্র। দিনে দিনে গ্রাস করে নিচ্ছে আমাদের গ্রামটিও। তিনি বলেন, আমরা চাই না কারো বুলেটের আঘাতে নিজেদের জীবন হারাতে। আমরা চাই শান্তিতে বসবাস করতে। আমাদের নিজেদের ভূমি আমরা রক্ষা করতে চাই।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button