আন্তর্জাতিক

উত্তাল হংকং : শপিং মলে হামলা, রাজপথে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষ

পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ চলছে হংকংয়ে। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেন থেকে চীনের কাছে হংকংয়ের ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে এতো বড় ও জোরালো প্রতিবাদ দেখা যায়নি। চীনের হুঁশিয়ারি থাকলেও হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা প্রতিবাদের রাস্তা থেকে সরছেন না।

এদিকে আজ স্থানীয় সময় রবিবারও বিক্ষোভে উত্তাল ছিল হংকং। রক্তারক্তি কাণ্ড সিটিপ্লাজায়। ছুরি নিয়ে এলোপাথাড়ি হামলা, পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ-সপ্তাহান্তের বিক্ষোভের আঁচ ছড়াল কর্মব্যস্ত দিনেও। মানববন্ধন তৈরি করে বিক্ষোভকারীরা গর্জে উঠল রাজপথে। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে হংকং-এর কোনো কোনো এলাকায় কার্ফু জারি করার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছে পুলিশ।

এর আগে গত মঙ্গলবার এক বিক্ষোভকারীকে গুলি করেছিল পুলিশ। তার আগে, গত রবিবার পুলিশের ছোড়া রবার বুলেটে একটি চোখ হারিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার এক নারী সাংবাদিক। পর পর এই দু’টি ঘটনার পর থেকেই পুলিশ-বিরোধী বিক্ষোভ আরো বেড়েছে হংকংয়ে।

পুলিশ জানিয়ছে, রবিবার একটি রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় কয়েকজন আততায়ী। প্রত্যেকের পরনে ছিল সাদা টিশার্ট। এলোপাথাড়ি ছুরি হামলায় জখম হন নারী থেকে শিশু। গুরুতর জখম হন ডেমোক্র্যাটিক ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সেলার অ্যান্ড্রু চিউ।

গতকাল থেকে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ বেঁধেছে বিক্ষোভকারীদের। শা তিন, তাই পো, তুয়েন মুনের মতো শপিং মলে, মেট্রো স্টেশনে, শহরের রাজপথে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান তুলেছিলেন গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা। তাইকু শিংয়ের সিটিপ্লাজায় বিক্ষোভকারীদের মানববন্ধন ভাঙতে গেলে উত্তেজনা চরমে ওঠে। বিক্ষোভকারীদের সরাতে কাঁদানে গ্যাস আর জল কামান ছোড়ে পুলিশ।

দেশটির পুলিশ জানায়, মুখোশ পরে আন্দোলন চালানো বেআইনি। তা সত্ত্বেও বহু মানুষ মুখোশ পরে পথে নেমেছিলেন। তাই গ্রেপ্তার করতে হয়েছে তাদের। গত তিনদিনে দু’শর বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, কার্ফু জারি না করলে হংকংকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। জায়গায় জায়গায় আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। নষ্ট হচ্ছে সরকারি সম্পত্তি।

২৪ বছর বয়সী জুলি নামের এক বিক্ষোভকারী বলেন, পুলিশ কোনো কাজেরই নয়। প্রতিবাদ প্রতিরোধ করতে গিয়ে অতিরিক্ত কঠোর ভূমিকা নিচ্ছেন তারা। নির্বিচারে মারধর করছেন। স্কুলছাত্রদেরও ছাড়ছেন না।

শান্তিপূর্ণভাবেই নিজেদের দাবি জানাচ্ছিলেন বিক্ষোভকারীরা, উল্টে পুলিশই অন্যায়ভাবে হামলা চালায়, জানিয়েছেন ২৮ বছর বয়সী ডেসমন্ড ফং। বিক্ষোভ-আন্দোলনের জেরে গতকাল থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মেট্রো পরিষেবা। বন্ধ রয়েছে বাস-ট্রেনসহ গণপরিবহন। ব্যাহত হয়েছে বিমান পরিষেবাও।

এর আগে বহু বছর ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল হংকং। ২২ বছর আগে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয় চীনের কাছে। তার পর থেকে স্বশাসিত এই অঞ্চলের মূল কর্তৃত্ব থাকে বেইজিংয়ের হাতে। মাসখানেক আগে চীনের অনুগত ক্যারি ল্যাম প্রত্যর্পণ বিল আনার প্রস্তাব দেন পার্লামেন্টে। যা আইন হলে বিচারের প্রয়োজনে কোনো অপরাধীকে হংকং থেকে চীনে প্রত্যর্পণ করতে আর বাধা থাকবে না। এর পরেই ল্যামের ইস্তফা চেয়ে রাস্তায় নামেন দেশটির সব ধরনের নাগরিকেরা। প্রবল প্রতিবাদে সেই বিল আনা স্থগিত রাখেন ল্যাম। তাতেও বিক্ষোভ থামেনি।

বলা হচ্ছে, গোটা বিক্ষোভ পর্বে ল্যামের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট বেইজিং তাকে সরাতে পারে। সরাসরি সে বার্তা এখনো না দিলেও প্রধান বাছাই প্রক্রিয়ায় রদবদলের ভাবনা সেই জল্পনাই আরো উস্কে দিয়েছে। একইভাবে হংকংয়ের সাধারণ মানুষ যাতে চীনা ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বেশি করে জানতে পারেন, তার জন্য স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়েও বদল আনার কথা ভাবা হচ্ছে। সেই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিক আইনেও পরিবর্তন আনা হতে পারে।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button