অর্থনীতি

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমছে

সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে সরকারের দেওয়া কিছু বিধিনিষেধের কারণে এ খাতে বিনিয়োগ কমছে। আগের মতো বর্তমানে যে কেউ চাইলেই ঢালাওভাবে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছেন না। ফলে অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৩ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। এর আগের মাস জুলাইয়ে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। এক মাসের ব্যবধানে বিক্রি কমেছে ৬৬১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বিক্রি হয় ৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। সে হিসেবে ক্রমান্বয়ে নিম্নমুখী ধারায় হাঁটছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়াকে ব্যাংকে আমানত কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে মনে করেছিলেন অনেকে। ব্যাংক খাতের চাইতে এ খাতে সূদের অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় অনেকেই সঞ্চয়পত্রে ঝুঁকতে থাকেন। ফলে সঞ্চয়পত্রের বিক্রিতে রাশ টানতে এ সুদের হার কমিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন ব্যাংকাররা। অবশ্য সরকার সুদের হার না নামিয়ে কর বাড়ানোসহ সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে বেশকিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে। ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উেস কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক করা, সঞ্চয়পত্রের সব লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করা, একই ব্যক্তির একাধিক উত্স হতে সঞ্চয়পত্র ক্রয় ঠেকাতে কর ফাইল অনুসন্ধানসহ বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। দুর্নীতির আয় কিংবা অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ করতে ক্রেতার একটি তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষণ করা হচ্ছে। চাইলেই প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই। এছাড়া এখন প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে কর কমিশনারের প্রত্যয়নপত্র লাগে। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক ফার্মের নামে সঞ্চয়পত্র কিনতেও কর কর্মকর্তাদের প্রত্যয়নের প্রয়োজন হচ্ছে। ফলে ভুল কিংবা ভুয়া তথ্য দিয়ে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের সুযোগ কমে আসে। এর ফলে ব্যাংকের তারল্য সংকট কাটানোর পাশাপাশি শেয়ারবাজারেও অর্থপ্রবাহ বাড়বে বলে অশা করা হয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব কারণেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মাস আগস্টে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৭১৫ কোটি ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয় ২ হাজার ২০৫ কোটি ৪০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয় ১ হাজার ৪৯৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। জুলাইয়ে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে আগের মূল অর্থ ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয় ২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। নিট বিক্রি হয় ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। অর্থাত্ দুই মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১১ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা।

বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে সুদহার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ ও তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। কিন্তু ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার এই হারের চাইতে কম।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button