আন্তর্জাতিক

ভিয়েতনামে করোনায় আক্রান্ত সবাই এখন সুস্থ

বিশ্বব্যাপী নতুন করোনাভাইরাস আরও বেশি বিস্তার লাভ করার মধ্যেই চীন সীমান্ত লাগোয়া দেশ ভিয়েতনাম ঘোষণা করেছে তাদের ওখানে যেসব মানুষ কোভিড-১৯ নামক করোনা সংক্রমিত রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তারা সবাই এখন সুস্থ। এসব রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ ঘোষণা করে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভিয়েতনামে মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬ জন। তাদের মধ্যে ৭৩ বছর বয়সী এক প্রবীণ ব্যক্তিও ছিলেন। গত বুধবার পর্যন্ত তাদের সবাই সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে গেছেন। এদিকে গতকাল শুক্রবার নতুন করে দেশটিতে আর কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি।

ভিয়েতনামে সর্বশেষ করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয় ১৬ দিন আগে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি। এরপর কেউই দেশটিতে করোনা পজিটিভ হননি। তবে রাজধানী হ্যানয় থেকে উত্তরের একটি গ্রাম এখনো বিশ দিনের অবরুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে আছে। করোনাভাইরাসে ইতোমধ্যে প্রায় ৩ হাজার প্রাণহানি এবং ৮৫ হাজার আক্রান্ত হয়েছেন।

ভিয়েতনামের উপ-প্রধানমন্ত্রী ভু ডুক ডাম শহর ও প্রাদেশিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেলিকনফারেন্সে বলেছন, ‘যদি কোভিড-১৯ এর সঙ্গে লড়াই যুদ্ধ হয়ে থাকে, তাহলে আমরা তার প্রথম রাউন্ডে বিজয়ী হয়েছি। কিন্তু সম্পূর্ণ যুদ্ধে আমরা এখনো জয়ী হতে পারিনি কারণ পরিস্থিতি খুবই অনাকাঙ্খিত। কখন কি হয় তা আগেই বলা যাচ্ছে না।’

বিশ্বে প্রথম ভিয়েতনাম করোনা আক্রান্ত সকল রোগীকে সুস্থ করে তুলতে পেরেছে। ভিয়েতনামের প্রশংসা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটি বিস্তারের প্রাথমিক পর্যায়েই তা মোকাবিলায় দেশটির সরকারের নেয়া নানা জরুরি পদক্ষেপ বেশ ভালোভাবে কাজ করেছে বলেই এমনটা সম্ভব হয়েছে।

গত বুধবার ভিয়েতনাম সরকার কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ১৬তম রোগীকে হাসপাতালে থেকে ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। ভিয়েতনামে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. কিদং পার্ক করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের নেয়া নানান ধারাবাহিক পদক্ষেপকে এই সাফল্যের কারণ হিসেবে অভিহিত করেন।

ভিয়েতনামে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয় গত ২৩ জানুয়ারি। চান্দ্রবর্ষের প্রথম দিনে উৎসবমুখর এক পরিবেশে হো চি মিন শহরে দুজন চীনা নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে গত ১ ফেব্রুয়ারি করোনাকে মহামারি ঘোষণা করে। ওইদিন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬ জন।

এরপর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আরও কিছু মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হ্যানয়ের অদূরের সোন লুই নাম গ্রামের ১০ হাজার ৬০০ জন্য বাসিন্দাকে ২০ দিনের জন্য অবরুদ্ধ ঘোষণা করে।

দেশটিতে হু এর প্রতিনিধি পার্ক বলছেন, ‘করোনা বিস্তারের প্রাথমিক পর্যায়ে কড়া নজরদারি, ল্যাবরেটরি টেস্ট জোরদার, স্বাস্থ্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং আক্রান্ত রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখার মতো আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কারণেই এই সাফল্য।’

গত মঙ্গলবার দেশটির শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয় উপমন্ত্রী নগুয়েন হু দো এক বৈঠকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দেয়াকেই সর্বাগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। এদিকে গত ২৮ জানুয়ারি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নগুয়েন জুয়ান ফুক ভিয়েতনামে সকল প্রকার বন্যপ্রাণী আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেন।

এদিকে, গতকাল দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক ভিসা প্রদান সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে ভিয়েতনাম। একই সঙ্গে ইরান ও ইতালির পর্যটকদের ভিয়েতনামে প্রবেশের পর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকারে। উৎপত্তিস্থল চীনের পর এই তিন দেশই করোনার মারাত্মক কবলে পড়েছে।

ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এদিকে গতকাল শুক্রবার বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে জাতিসংঘের এই অঙ্গসংগঠন। জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ডা. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস এই ঘোষণা দেন।

আরো দেখুন

সম্পর্কিত প্রবন্ধ

Back to top button